Saturday, April 19, 2025
11.7 C
London

ভারতে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হলো ৫০ বছরের পুরোনো মসজিদ

এবার ভারতের হরিয়ানা রাজ্যে ৫০ বছরের পুরোনো একটি মসজিদ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। রাজ্যটিতে উগ্র হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকার ক্ষমতায় রয়েছে এবং দিন দুয়েক আগে রাজ্যটির ফরিদাবাদ পৌরসভা কর্তৃপক্ষ মসজিদটি ভেঙে ফেলে।

অবশ্য প্রশাসনের দাবি, এটি বেআইনি স্থাপনা ছিল, তাই নিয়ম মেনেই ভাঙা হয়েছে। এদিকে অর্ধশত বছরের পুরোনো এই মসজিদ ভেঙে ফেলায় স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বুধবার (১৬ এপ্রিল) পৃথক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম মুসলিম মিরর এবং সিয়াসত ডেইলি।

মুসলিম মিরর বলছে, হরিয়ানার ফরিদাবাদে অবস্থিত বড়খাল গ্রামের আকসা মসজিদ — যার বয়স প্রায় ৫০ বছর — গত ১৫ এপ্রিল সোমবার ভেঙে দিয়েছে ফরিদাবাদ পৌর কর্পোরেশন। মসজিদ ভাঙার এই সিদ্ধান্ত ঘিরে স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।

আদালতে বিচারাধীন থাকা সত্ত্বেও এই মসজিদটি ভেঙে দেওয়া হয়। এই ঘটনার সময় ওই এলাকায় পুলিশের বিপুল সংখ্যক সদস্য মোতায়েন করা হয়েছিল এবং এমনকি তিনজন সহকারী পুলিশ কমিশনারও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। অথচ মসজিদ সংক্রান্ত মামলা এখনও ভারতের সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয় বাসিন্দা মুশতাক জানান, “এটা অত্যন্ত কষ্টদায়ক। সুপ্রিম কোর্টের কোনও চূড়ান্ত এখনও দেওয়া হয়নি। তাহলে মসজিদ ভাঙা হল কেন?” তিনি দাবি করেন, প্রশাসন প্রথমে মসজিদের পাশের দোকানগুলো সরিয়ে দেয়, তারপর মসজিদ গুঁড়িয়ে দেয়। তার ভাষায়, “সবটা পরিকল্পনা করেই করা হয়েছে। আমাদের কোনো সময় পর্যন্ত দেওয়া হয়নি।”

মুশতাক আরও বলেন, মসজিদটি প্রায় ৫০ বছর আগে গ্রামের সাবেক এক সারপঞ্চের দেওয়া জমিতে তৈরি হয়েছিল। ৬০০–৭০০ বর্গগজ জায়গা জুড়ে থাকা এই মসজিদ বহু বছর ধরে এলাকার মুসলিমদের শান্তিপূর্ণভাবে নামাজ পড়ার স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

তিনি বলেন, “এই জমি সংক্রান্ত বিরোধ বহু পুরোনো—প্রায় ২৫ বছরের। এতদিন পর হঠাৎ করে এখন এটাকে অবৈধ বলা হচ্ছে।” অবশ্য প্রশাসনের দাবি, এটি বেআইনি স্থাপনা ছিল, তাই নিয়ম মেনেই ভাঙা হয়েছে। ফরিদাবাদ পৌর কর্পোরেশন জানিয়েছে, এটি হঠাৎ নেওয়া কোনো সিদ্ধান্ত ছিল না।

একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, “এই মসজিদসহ আরও কয়েকটি অবৈধ স্থাপনা সরকারিভাবে চিহ্নিত হয়েছিল। আমরা আদালতের নির্দেশ মেনেই পদক্ষেপ নিয়েছি।” এদিকে এই ভাঙচুরের ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দারা এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা সময় ও প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন।

বিশেষত যখন বিষয়টি দেশের সর্বোচ্চ আদালতে বিচারাধীন, তখন প্রশাসনের এমন পদক্ষেপকে “উস্কানিমূলক ও অমানবিক” বলে মনে করা হচ্ছে। মসজিদ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়ার এই ঘটনাটি ইতোমধ্যেই স্থানীয় পর্যায়ে প্রতিবাদ ও ক্ষোভের সঞ্চার করেছে এবং সোশ্যাল মিডিয়াতেও এ নিয়ে ক্ষোভ দেখা যাচ্ছে।

Hot this week

আ. লীগকে অবশ্যই নিষিদ্ধ করতে হবে, তবে বিচারকে প্রধান দাবি করে তুলতে হবে: হাসনাত

এবার জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ...

ওয়ারেন্টি দিচ্ছি, দেশের মানুষ নিরাপত্তা ও সম্মান নিয়ে বাঁচবে: জামায়াতে আমির

এবার বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন,...

আগামীকাল সারা দেশে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের মহাসমাবেশ

এবার ছয় দফা দাবি আদায়ে আগামীকাল (রোববার) সারা দেশে...

জীবিত মানুষ চাপা দিয়ে মেরে ফেলার আদেশ দিয়েছিল ফ্যাসিস্ট সরকার: সারওয়ার্দী

এবার রাজনীতিতে যোগ দিয়েই এক বিস্ফোরক তথ্য দিয়েছেন সাবেক...

বাংলাদেশের ইতিহাসে সেরা নির্বাচন হবে: প্রধান উপদেষ্টা

এবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর...

Topics

আ. লীগকে অবশ্যই নিষিদ্ধ করতে হবে, তবে বিচারকে প্রধান দাবি করে তুলতে হবে: হাসনাত

এবার জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ...

ওয়ারেন্টি দিচ্ছি, দেশের মানুষ নিরাপত্তা ও সম্মান নিয়ে বাঁচবে: জামায়াতে আমির

এবার বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন,...

আগামীকাল সারা দেশে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের মহাসমাবেশ

এবার ছয় দফা দাবি আদায়ে আগামীকাল (রোববার) সারা দেশে...

জীবিত মানুষ চাপা দিয়ে মেরে ফেলার আদেশ দিয়েছিল ফ্যাসিস্ট সরকার: সারওয়ার্দী

এবার রাজনীতিতে যোগ দিয়েই এক বিস্ফোরক তথ্য দিয়েছেন সাবেক...

বাংলাদেশের ইতিহাসে সেরা নির্বাচন হবে: প্রধান উপদেষ্টা

এবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর...

নির্বাচনের দেখা নেই, জনগণ সুখে নেই: ফারুক

এবার সাবেক বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ এবং বিএনপি চেয়ারপার্সনের...

একটি দলকে সরিয়ে আরেকটি দলকে বসাতে গণ-অভ্যুত্থান হয়নি: নাহিদ ইসলাম

একটি দলকে সরিয়ে আরেকটি দলকে বসানোর জন্য চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান...
spot_img

Related Articles

Popular Categories

spot_imgspot_img