এবার ছাত্রত্ব শেষ হওয়ার মাত্র তিন দিনের মাথায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) হল ত্যাগ করে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি মহিউদ্দিন খান। যেখানে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ছাত্রত্ব শেষ হওয়ার পরও বছরের পর বছর হলে অবৈধভাবে থাকার অভিযোগ রয়েছে, সেখানে মহিউদ্দিনের এই পদক্ষেপ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে এবং ছাত্ররাজনীতিতে সুস্থ সংস্কৃতি চর্চার আশার আলো দেখা দিয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) রাতে মহিউদ্দিন খান নিজেই ফেসবুকে তার হল ত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করেন এবং হলে থাকা ব্যক্তিগত জিনিসপত্র সরিয়ে নেন।
এর আগে, মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) প্রকাশিত স্নাতকোত্তর পরীক্ষার ফলাফলে তিনি ৩.৯৭ সিজিপিএ নিয়ে প্রথম স্থান অধিকার করেন। শুধু তাই নয়, স্নাতক পর্যায়েও তিনি ৩.৯৩ সিজিপিএ পেয়ে এককভাবে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অর্জন করেছিলেন। ঢাবির লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের এই আবাসিক শিক্ষার্থী প্রথম বর্ষে হলে ওঠার অল্প দিনের মধ্যেই ছাত্রলীগের গেস্টরুমের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার শিকার হয়ে হল ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন।
পরবর্তীতে দ্বিতীয় বর্ষের শেষদিকে হলে পুনরায় থাকার সুযোগ পেলেও, ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দ্বারা সংঘটিত একটি নির্যাতনের ঘটনার জেরে তাকে আবারো হল ছাড়তে হয়। হল ত্যাগের পর ঢাবি শিবির সেক্রেটারি তার ফেসবুক পোস্টে উল্লেখ করেন, ‘ছাত্রজীবন শেষে নিয়ম মেনে হল ছেড়ে দেয়া উচিত, যাতে অপেক্ষমাণ জুনিয়র শিক্ষার্থীরা হলে থাকার সুযোগ পায়।’ তিনি আরো বলেন, ‘যারা ছাত্রলীগের অন্যায়-অত্যাচার সহ্য করেছে, তারা কখনোই নতুন কোনো অন্যায়ের জন্ম দিতে পারে না।’
বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে নিয়মতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরে এসেছে এবং কুখ্যাত গণরুম-গেস্টরুম প্রথার অবসান হয়েছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। মহিউদ্দিন খানের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে সামাজিক মাধ্যমে বহু শিক্ষার্থী ইতিবাচক মন্তব্য করেছেন।
সাইফুল ইসলাম নামের একজন লিখেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সেক্রেটারি পদে থাকা সত্ত্বেও তিনি একজন সাধারণ শিক্ষার্থীর মতো হল ছেড়ে দিচ্ছেন, যা তার উদার মানসিকতার পরিচয় বহন করে। মেহেদুল ইসলাম নামে আরেকজন আশা প্রকাশ করেন, এই পদক্ষেপের মাধ্যমে ছাত্রলীগের সেই ভীতিকর গণরুম-গেস্টরুম সংস্কৃতি চিরতরে বন্ধ হবে এবং ছাত্রত্ব শেষে হল ছেড়ে দেয়ার একটি নতুন সংস্কৃতি গড়ে উঠবে।