বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো পাইপলাইনের মাধ্যমে জ্বালানি তেল পরিবহনের যুগান্তকারী পদক্ষেপ শুরু হতে যাচ্ছে আগামী মে মাসে। চট্টগ্রাম থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত ২৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই পাইপলাইন নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করে ইতিমধ্যে সফলভাবে পরীক্ষামূলক পরিচালনা করা হয়েছে। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) তত্ত্বাবধানে এবং সেনাবাহিনীর ৩৪ কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের বাস্তবায়নে এই মেগা প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়েছে ৩,৬৫৩ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ব্যয়ে।
এই পাইপলাইন ব্যবস্থা চালু হলে দেশের জ্বালানি খাতে আমূল পরিবর্তন আসবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বর্তমানে চট্টগ্রাম থেকে নারায়ণগঞ্জ-ঢাকায় ট্যাঙ্কার ও নৌপথে জ্বালানি তেল পরিবহন করা হয় যা ব্যয়বহুল এবং অপচয়সাপেক্ষ। পাইপলাইন পদ্ধতিতে এই পরিবহন হবে অধিকতর নিরাপদ, সাশ্রয়ী এবং দক্ষ। প্রাথমিকভাবে এই পাইপলাইনে ডিজেল পরিবহন করা হবে, তবে ভবিষ্যতে অন্যান্য জ্বালানিও এই ব্যবস্থায় পাঠানোর সুযোগ রাখা হয়েছে।
এদিকে প্রকল্পটির কারিগরি দিকগুলো বেশ উন্নত। মার্কিন প্রতিষ্ঠান ফ্লুর কর্পোরেশন এর নির্মাণে কারিগরি সহায়তা প্রদান করেছে। পতেঙ্গা, কুমিল্লা, ফতুল্লা ও গোদনাইলে নির্মিত হয়েছে চারটি প্রধান টার্মিনাল। এই পাইপলাইনে বছরে ২৭ লাখ টন জ্বালানি তেল পরিবহন করা সম্ভব হবে, যা বর্তমান চাহিদার একটি বড় অংশ পূরণ করতে সক্ষম। বিপিসির হিসাব অনুযায়ী, এই ব্যবস্থা চালু হলে বছরে প্রায় ২৩৬ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে পরিবহন ব্যয় ও অপচয় কমানোর মাধ্যমে।
বিপিসির চেয়ারম্যান আমিন উল আহসান জানান, পাইপলাইন ব্যবস্থায় তেলের অপচয় প্রায় শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা সম্ভব হবে। এই ব্যবস্থায় ২৪,৫০০ টন তেল উত্তোলনযোগ্য থাকবে, যা জ্বালানি সরবরাহে নিশ্চয়তা দেবে। আগামী মে মাসে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর এই প্রকল্প দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে এই পাইপলাইন নেটওয়ার্ক দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও সম্প্রসারিত করার পরিকল্পনা রয়েছে কর্তৃপক্ষের।