ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায় আজ শুক্রবার জুমার নামাজ চলাকালে একটি মসজিদে পরপর দুটি বিস্ফোরণে অন্তত ৫৫ জন আহত হয়েছেন। পুলিশ জানিয়েছে, আহত ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকে দগ্ধ হয়েছেন এবং শরীরে গুরুতর আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা আনতারা জানিয়েছে, ঘটনাস্থলে পরপর দুটি বিস্ফোরণ ঘটে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ঘটনাটি সম্ভাব্য হামলা হিসেবে তদন্ত করছে। এর মধ্যে ১৭ বছর বয়সী এক ছাত্রকে সন্দেহভাজন হামলাকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, ঘটনাস্থলটি ছিল রাজধানীর কেলাপা গ্যাডিং এলাকার একটি স্কুল কমপ্লেক্সের ভেতরের মসজিদ। বিস্ফোরণের সময় মসজিদের ভেতরে শতাধিক মানুষ ছিলেন।
স্কুলের ক্যানটিনে কাজ করছিলেন লুসিয়ানা (৪৩)। তিনি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘হঠাৎ প্রচণ্ড শব্দ হলো। আমাদের হৃদ্স্পন্দন বেড়ে গেল, কেউ ঠিকমতো শ্বাস নিতে পারছিল না। সবাই দৌড়ে বাইরে বেরিয়ে গেল। একাধিক বিস্ফোরণ হয়েছিল, জানালার কাচ ভেঙে যায়, সবাই আতঙ্কে পালাতে শুরু করে।’
লুসিয়ানা আরও বলেন, ‘প্রথমে ভেবেছিলাম হয়তো বিদ্যুতের তারে শর্টসার্কিট হয়েছে বা সাউন্ড সিস্টেম বিস্ফোরিত হয়েছে। কিন্তু ঠিক কী ঘটেছে—বুঝে ওঠার আগেই মসজিদ থেকে সাদা ধোঁয়া উঠতে শুরু করে।’
ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার সুফমি দাসকো আহমাদ হাসপাতাল পরিদর্শনের পর সাংবাদিকদের জানান, আহত ব্যক্তিদের মধ্যে সন্দেহভাজন ওই ছাত্রও রয়েছে। তাকে বর্তমানে অস্ত্রোপচারের জন্য হাসপাতালে রাখা হয়েছে। তবে তিনি হামলার উদ্দেশ্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানাননি।
ইন্দোনেশিয়ার পুলিশপ্রধান লিস্টিও সিগিট প্রাবোও জানান, সন্দেহভাজন কিশোরটি ওই স্কুলেরই ছাত্র। তার পরিচয়, আগে এ ধরনের কোনো কর্মকাণ্ডে সে সম্পৃক্ত কি না ও হামলার সম্ভাব্য উদ্দেশ্য অনুসন্ধানে তদন্ত চলছে। তিনি বলেন, ‘আমরা সন্দেহভাজনকে চিহ্নিত করেছি এবং তার পরিচয়, পারিপার্শ্বিক অবস্থা, বাড়িঘরসহ সবকিছু খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
বিস্ফোরণের পর পুলিশ মসজিদ ও স্কুল কমপ্লেক্সটি ঘিরে ফেলে এবং এলাকাটি অপরাধস্থল (ক্রাইম সিন) হিসেবে ঘোষণা করে। কালো পোশাক পরা পুলিশ সদস্যরা স্বয়ংক্রিয় রাইফেল হাতে পাহারায় ছিলেন। রাস্তাজুড়ে ছিল অ্যাম্বুলেন্স ও সাঁজোয়া যানবাহন।
জানা গেছে, মসজিদটি নৌবাহিনীর মালিকানাধীন এলাকায় অবস্থিত এবং সেখানে বহু সামরিক কর্মকর্তা ও অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য বাস করেন। স্থানীয় বাসিন্দা ইমানুয়েল তারিগান বলেন, ‘আমার বাচ্চারা ওই স্কুলেই পড়ে। বিস্ফোরণের পর আমি তাদের খুঁজতে গিয়েছিলাম। প্রচণ্ড ভিড় ছিল, অনেক আহত মানুষকে মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখেছি। কারও কারও মুখ পুরোপুরি বিকৃত হয়ে গিয়েছিল।’
ইন্দোনেশিয়ায় চার্চ ও কিছু পশ্চিমা স্থাপনায় হামলার ইতিহাস থাকলেও মসজিদে হামলার ঘটনা অত্যন্ত বিরল। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশটিতে জঙ্গি তৎপরতা বেড়েছে।




















