এবার বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, আজ প্রত্যন্ত অঞ্চলে এসে মুক্ত কণ্ঠে কথা বলার সাহস পাচ্ছি। এই সাহসটুকু যুগিয়েছেন লামিয়ার বাবা শহীদ জসিম হাওলাদার। তাই আজকে এ পরিবারকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা ও উপযুক্ত শব্দাবলী আমার কাছে নেই। শুধু এতটুকুই বলব, এই পরিবারের প্রধান উপার্জনাক্তম ব্যক্তি তিনি মানুষের জন্য, দেশের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য জীবন দিয়েছেন।
রোববার (২৭ এপ্রিল) সন্ধ্যায় পটুয়াখালীর দুমকিতে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে নিহত শহীদ জসিম হাওলাদারের সদ্য প্রয়াত মেয়ে লামিয়া আক্তারের জানাজায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। রুহুল কবির রিজভী বলেন, এদেশে আয়নাঘর থেকে নানাবিধ বিচারবহির্ভূত হত্যার যে ভয়াবহ পরিস্থিতিগুলো দেখেছি, তা থেকে মুক্তির জন্য সর্বশেষ পৃথিবী কাঁপানো এক গণঅভ্যুত্থান হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এটি গ্রামের একজন ব্যক্তির ছোট্ট অবদান নয়, তাদের অবদানের মধ্য দিয়ে গোটা জাতি মুক্তি পেয়েছে এক ভয়ঙ্কর শাসন থেকে। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, লামিয়া-আছিয়ার মতো আমরা আর কোনো বোনকে হারাতে চাই না। আমরা ৯০ দিনের যে সময়, তার মধ্যে খুনি ধর্ষকদের মৃত্যুদণ্ড দেখতে চাই।
তিনি আরও বলেন, একইসঙ্গে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার চিত্র বা ভিডিও পুরো পৃথিবীর সামনে আসা দরকার। তাহলে আগামীতে আর কোনো নরপিশাচ, যাদের কারণে আমরা আমাদের বোন লামিয়া-আছিয়াদের হারিয়েছি, তারা আর এই বাংলাদেশে জন্ম নেবে না।
এ সময় ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমন, সদস্য সচিব কৃষিবিদ মোকলেদুল মোমিন মিথুন, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আমান উল্লাহ আমান, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আলহাজ্ব আব্দুর রশীদ চুন্নু মিয়া, সদস্য সচিব স্নেহাশুর সরকার কুট্টি, প্রশাসনের পক্ষে জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোহাম্মদ সাজেদুল ইসলাম সজল, দুমকী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুজর মো. ইজাজুল হক, দুমকি থানার ওসি মো. জাকির হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, গত ১৮ মার্চ সন্ধ্যার দিকে নিজ বাড়িতে বাবার কবর জিয়ারত শেষে নানা বাড়ি যাওয়ার পথে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন শহীদ কন্যা লামিয়া। পরে লামিয়া নিজে বাদী হয়ে দুইজনকে আসামি করে দুমকি থানায় মামলাও দায়ের করেন। দুই আসামির মধ্যে রয়েছে মরহুম মামুন মুন্সির ছেলে শাকিব মুন্সি ও সোহাগ মুন্সির ছেলে সিফাত মুন্সি। এর মধ্যে শাকিব পাঙ্গাশিয়া এবিএম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী এবং সিফাত দুমকি সরকারি জনতা কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। লামিয়া আক্তারও সিফাতের সহপাঠী ছিলেন। উক্ত মামলায় এজাহারভুক্ত দুই আসামি শাকিব ও সিফাতকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে এবং বর্তমানে তারা জেলহাজতে রয়েছে।
লামিয়ার বাবা জসিম হাওলাদার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে ১৯ জুলাই রাজধানীর মোহাম্মদপুরে গুলিবিদ্ধ হন। পরে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৯ জুলাই তিনি মারা যান। জসিম হাওলাদার ঢাকাতে একটি এনজিওর গাড়িচালক ছিলেন এবং তিনি ঢাকাতেই স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে বসবাস করতেন।