ঢাকা ০৮:১৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ৮ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশে নির্বাচন ঘিরে অনিশ্চয়তা ও সহিংসতা পরিস্থিতি বিপজ্জনক করে তুলেছে: অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্টে মোশন

  • ডেস্ক রিপোর্টঃ
  • আপডেট সময় ১০:৩৩:৪২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫
  • ৫৫৬ বার পড়া হয়েছে

 

 

২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঘোষিত নির্বাচন ঘিরে বাংলাদেশে অনিশ্চয়তা, সহিংসতা ও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যর্থতা পরিস্থিতিকে বিপজ্জনক করে তুলেছে বলে জানিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস (এনএসডব্লিউ) পার্লামেন্টের সদস্য অ্যাবিগেল বয়েড। পাশাপাশি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ সব প্রার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন তিনি।

 

দুইদিন আগে দেশটির আইনসভায় তিনি এ-সংক্রান্ত একটি নোটিশ অব মোশন জমা দেন। মোশন জমা দেওয়ার বিষয়টি আজ শনিবার নিশ্চিত করেছেন বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক মো. রাশেদুল হক।

 

 

রাশেদুল হক বলেন, অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্ট সদস্য বাংলাদেশের আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে তার গভীর উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়া সরকারকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে চিঠি দিয়ে অবাধ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন নিশ্চিত করার কথা বলেন তিনি।

 

তার অন্যান্য দাবিগুলো হলো- বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ সকল প্রার্থীর পূর্ণ নিরাপত্তা, চলাফেরা ও রাজনৈতিক অংশগ্রহণের স্বাধীনতা নিশ্চিতে চাপ দিতে হবে। দুর্নীতি, অর্থ পাচার ও জালিয়াতির অভিযোগ তদন্তে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদার করতে হবে। মানবাধিকার লঙ্ঘন, গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার দায়ীদের বিচারের আওতায় আনতে বৈশ্বিক প্রচেষ্টায় ভূমিকা রাখতে হবে। প্রবাসীদের জন্য ডাকভোট ব্যবস্থাকে নিরাপদ ও কারচুপিমুক্ত করতে সহযোগিতা করতে হবে।

 

জমা দেওয়া মোশনে অ্যাবিগেল বয়েড উল্লেখ করেন, পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক কাঠামো পরিকল্পিতভাবে দুর্বল করা হয়েছে। যেখানে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহৃত হয়েছে এবং প্রবলভাবে ভিন্নমত দমন করা হয়েছে। বিগত আমলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিচারব্যবস্থা ও নির্বাচন প্রক্রিয়ার ওপর প্রভাব বিস্তার জনমানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারকে কার্যত অস্বীকার করেছে।

 

 

তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে অনুষ্ঠিত ১২টি নির্বাচনের মধ্যে মাত্র ৪টি নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের মতে গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত। সেই নির্বাচনগুলো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হয়। ছাত্র-জনতার রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানে পতন হওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একনায়কতান্ত্রিক প্রভাব ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচারের অভাব ত্রয়োদশ নির্বাচনকে নিরপেক্ষভাবে আয়োজনের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

মোশনে সাম্প্রতিক সহিংসতার কথাও উল্লেখ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রাম-৮ আসনের মনোনীত প্রার্থী এরশাদ উল্লাহর ওপর গুলির ঘটনা। এই ঘটনাকে বয়েড উদ্বেগজনক রাজনৈতিক টার্গেটিংয়ের উদাহরণ হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, ‘মানবাধিকার সংস্থাগুলোর অভিযোগ অনুযায়ী অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে গণহারে আটক ও বিরোধীদের ওপর দমনমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।’

 

২০২৪ সালের মনসুন রেভ্যুলুশন তথা ‘বর্ষা বিপ্লবে’ শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর দুর্নীতির মাধ্যমে বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারের সরকারি প্রচেষ্টার কথাও মোশনে উঠে আসে। তদন্তে দেখা যাচ্ছে, হাসিনার ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা শত শত কোটি টাকার সম্পদ বিদেশে পাচার করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। অ্যাবিগেল বয়েড আরও বলেন, ‘প্রায় ১ কোটি ৫০ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশি ভোটাধিকার পেলেও জটিল প্রক্রিয়া তাদের ভোট প্রয়োগে বড় বাধা হতে পারে।’

 

 

নতুন অ্যাপভিত্তিক (পোস্টাল ভোট বিডি) ব্যবস্থার ওপর পর্যবেক্ষকরা সম্ভাব্য কারচুপির আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। মোশনে উল্লেখ করা হয়, ২০২৫ সালের ১৮ জুন অস্ট্রেলিয়া প্রথম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ডেমোক্রেটিক জেনারেল ইলেকশন সাপোর্ট (ব্যালট) প্রকল্পে অংশ নেয়। যা জাতিসংঘের ইউএনডিপি, ইউএন উইম্যান ও ইউনেস্কোর মতো ৩টি সংস্থার মিলিত প্রচেষ্টার অংশ। অস্ট্রেলিয়া সরকারকে বাংলাদেশ ইস্যুতে সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানান অ্যাবিগেল বয়েড।

জনপ্রিয় সংবাদ

চলতি অর্থবছরের রাজস্ব ঘাটতি ২৪ হাজার কোটি টাকা

বাংলাদেশে নির্বাচন ঘিরে অনিশ্চয়তা ও সহিংসতা পরিস্থিতি বিপজ্জনক করে তুলেছে: অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্টে মোশন

আপডেট সময় ১০:৩৩:৪২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫

 

 

২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঘোষিত নির্বাচন ঘিরে বাংলাদেশে অনিশ্চয়তা, সহিংসতা ও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যর্থতা পরিস্থিতিকে বিপজ্জনক করে তুলেছে বলে জানিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস (এনএসডব্লিউ) পার্লামেন্টের সদস্য অ্যাবিগেল বয়েড। পাশাপাশি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ সব প্রার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন তিনি।

 

দুইদিন আগে দেশটির আইনসভায় তিনি এ-সংক্রান্ত একটি নোটিশ অব মোশন জমা দেন। মোশন জমা দেওয়ার বিষয়টি আজ শনিবার নিশ্চিত করেছেন বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক মো. রাশেদুল হক।

 

 

রাশেদুল হক বলেন, অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্ট সদস্য বাংলাদেশের আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে তার গভীর উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়া সরকারকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে চিঠি দিয়ে অবাধ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন নিশ্চিত করার কথা বলেন তিনি।

 

তার অন্যান্য দাবিগুলো হলো- বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ সকল প্রার্থীর পূর্ণ নিরাপত্তা, চলাফেরা ও রাজনৈতিক অংশগ্রহণের স্বাধীনতা নিশ্চিতে চাপ দিতে হবে। দুর্নীতি, অর্থ পাচার ও জালিয়াতির অভিযোগ তদন্তে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদার করতে হবে। মানবাধিকার লঙ্ঘন, গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার দায়ীদের বিচারের আওতায় আনতে বৈশ্বিক প্রচেষ্টায় ভূমিকা রাখতে হবে। প্রবাসীদের জন্য ডাকভোট ব্যবস্থাকে নিরাপদ ও কারচুপিমুক্ত করতে সহযোগিতা করতে হবে।

 

জমা দেওয়া মোশনে অ্যাবিগেল বয়েড উল্লেখ করেন, পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক কাঠামো পরিকল্পিতভাবে দুর্বল করা হয়েছে। যেখানে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহৃত হয়েছে এবং প্রবলভাবে ভিন্নমত দমন করা হয়েছে। বিগত আমলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিচারব্যবস্থা ও নির্বাচন প্রক্রিয়ার ওপর প্রভাব বিস্তার জনমানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারকে কার্যত অস্বীকার করেছে।

 

 

তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে অনুষ্ঠিত ১২টি নির্বাচনের মধ্যে মাত্র ৪টি নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের মতে গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত। সেই নির্বাচনগুলো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হয়। ছাত্র-জনতার রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানে পতন হওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একনায়কতান্ত্রিক প্রভাব ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচারের অভাব ত্রয়োদশ নির্বাচনকে নিরপেক্ষভাবে আয়োজনের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

মোশনে সাম্প্রতিক সহিংসতার কথাও উল্লেখ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রাম-৮ আসনের মনোনীত প্রার্থী এরশাদ উল্লাহর ওপর গুলির ঘটনা। এই ঘটনাকে বয়েড উদ্বেগজনক রাজনৈতিক টার্গেটিংয়ের উদাহরণ হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, ‘মানবাধিকার সংস্থাগুলোর অভিযোগ অনুযায়ী অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে গণহারে আটক ও বিরোধীদের ওপর দমনমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।’

 

২০২৪ সালের মনসুন রেভ্যুলুশন তথা ‘বর্ষা বিপ্লবে’ শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর দুর্নীতির মাধ্যমে বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারের সরকারি প্রচেষ্টার কথাও মোশনে উঠে আসে। তদন্তে দেখা যাচ্ছে, হাসিনার ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা শত শত কোটি টাকার সম্পদ বিদেশে পাচার করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। অ্যাবিগেল বয়েড আরও বলেন, ‘প্রায় ১ কোটি ৫০ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশি ভোটাধিকার পেলেও জটিল প্রক্রিয়া তাদের ভোট প্রয়োগে বড় বাধা হতে পারে।’

 

 

নতুন অ্যাপভিত্তিক (পোস্টাল ভোট বিডি) ব্যবস্থার ওপর পর্যবেক্ষকরা সম্ভাব্য কারচুপির আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। মোশনে উল্লেখ করা হয়, ২০২৫ সালের ১৮ জুন অস্ট্রেলিয়া প্রথম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ডেমোক্রেটিক জেনারেল ইলেকশন সাপোর্ট (ব্যালট) প্রকল্পে অংশ নেয়। যা জাতিসংঘের ইউএনডিপি, ইউএন উইম্যান ও ইউনেস্কোর মতো ৩টি সংস্থার মিলিত প্রচেষ্টার অংশ। অস্ট্রেলিয়া সরকারকে বাংলাদেশ ইস্যুতে সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানান অ্যাবিগেল বয়েড।