ঢাকা ০২:০৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ৬ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গণভোটের চার প্রশ্নে দ্বিধায় বিএনপি, জুলাই সনদকেই ভিত্তি মানতে চায় দল

  • ডেস্ক রিপোর্টঃ
  • আপডেট সময় ১১:১৭:৪৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৫
  • ৫৬২ বার পড়া হয়েছে

 

গণভোটের প্রশ্নবস্তু নিয়ে গভীর দ্বিধা ও কৌশলী অবস্থানে রয়েছে বিএনপি। প্রধান উপদেষ্টা ঘোষিত গণভোটের চারটি প্রশ্নের মধ্যে কোনো একটি কিংবা একাধিক বিষয়ে ভিন্নমত থাকলে ভোটার কীভাবে মতামত জানাতে পারবেন—এই স্পষ্ট ব্যাখ্যা না থাকায় উদ্বিগ্ন দলটি। ফলে গণভোটের প্রশ্নে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ প্রচার—কোন পথে এগোবে বিএনপি—সেটাও এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

জানা গেছে, জুলাই সনদে যে জাতীয় ঐকমত্য তৈরি হয়েছে, বিএনপি সেই সনদকেই একমাত্র মানদণ্ড হিসেবে ধরে এগোতে চায়। দলের একাধিক জ্যেষ্ঠ নেতা জানিয়েছেন, গণভোটের প্রশ্নে অস্পষ্টতা থাকায় শিগগিরই অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দাবি জানানো হবে—সংসদ নির্বাচনের দিন যেই গণভোট হবে, তা অবশ্যই জুলাই সনদের ভিত্তিতে হতে হবে।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভাষণের পরদিন রাতে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় ব্যাপক আলোচনার পর গণভোট বিষয়ে সতর্ক ও কৌশলী অবস্থান নেওয়া হয়। সভা শেষে দলটি প্রধান উপদেষ্টাকে শুভেচ্ছা জানালেও গণভোটের প্রশ্নবস্তু নিয়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে।

অন্তর্বর্তী সরকারের আদেশে জুলাই সনদের ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাবের মধ্য থেকে সংবিধান-সম্পর্কিত ৪৮টি প্রস্তাবকে চারটি বিষয়ে ভাগ করে একটি মাত্র প্রশ্নে গণভোটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ‘হ্যাঁ’ জয়ী হলে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠন হবে। তবে এই প্রশ্নের কাঠামোতেই বিএনপির মূল আপত্তি।

দলের দাবি—জুলাই সনদে যেসব স্থানে তারা ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছে, গণভোটের প্রশ্নে সেসব আপত্তিকে বাধ্যতামূলক করে দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে সরকারি কর্ম কমিশন, ন্যায়পাল, সিএজি, দুদক এবং দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠনের প্রস্তাব—এসব বিষয়ে দলের আপত্তি ছিল। আলাদা করে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ বলার সুযোগ না থাকায় এতে ভোটারদের মতামত দেওয়ার পথ রুদ্ধ হচ্ছে বলে মনে করছে বিএনপি।

তবে তৃতীয় ও চতুর্থ প্রশ্নের বিষয়বস্তু—নারীর প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধি, বিরোধী দল থেকে ডেপুটি স্পিকার নির্বাচন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদসীমা নির্ধারণসহ সমঝোতাপূর্ণ অন্যান্য সংস্কারে দলটির দ্বিমত নেই।

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, “জুলাই সনদই রাষ্ট্র সংস্কারের ভিত্তি। সেখানে সাংঘর্ষিক কিছু থাকলে তা পুনর্বিবেচনার দাবি জানানো হবে।”

স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “জাতীয় সংসদের সার্বভৌমত্বে কোনো হস্তক্ষেপ আমরা মেনে নেব না। গণভোট দিয়ে আইন বা সংবিধান সংশোধন হয়ে যাবে না—সেজন্য নির্বাচিত সংসদ অবশ্যই প্রয়োজন।”

রুহুল কবির রিজভী গণভোটের প্রশ্নবস্তুকে ‘জটিল’ ও ‘গোঁজামিলপূর্ণ’ বলে মন্তব্য করে বলেন, “চার প্রশ্নে অসম্মতির সুযোগ নেই। সাধারণ মানুষ কীভাবে মত দেবে, সেটি স্পষ্ট নয়। বোঝা না গেলে গণভোটের উদ্দেশ্যই ব্যাহত হবে।”

সব মিলিয়ে, গণভোটের সময়সূচি নিয়ে সুবিধাজনক অবস্থায় থাকলেও প্রশ্নের বিষয়বস্তু নিয়ে বিএনপি এখন কঠিন রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশে ব্যস্ত। দলটির অবস্থান—জুলাই সনদের বাইরে কোনো প্রস্তাব মানার বাধ্যবাধকতা নেই।

জনপ্রিয় সংবাদ

বিজয়ী হলে জাতীয় সরকার করবে জামায়াত: ডা. শফিকুর রহমান

গণভোটের চার প্রশ্নে দ্বিধায় বিএনপি, জুলাই সনদকেই ভিত্তি মানতে চায় দল

আপডেট সময় ১১:১৭:৪৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৫

 

গণভোটের প্রশ্নবস্তু নিয়ে গভীর দ্বিধা ও কৌশলী অবস্থানে রয়েছে বিএনপি। প্রধান উপদেষ্টা ঘোষিত গণভোটের চারটি প্রশ্নের মধ্যে কোনো একটি কিংবা একাধিক বিষয়ে ভিন্নমত থাকলে ভোটার কীভাবে মতামত জানাতে পারবেন—এই স্পষ্ট ব্যাখ্যা না থাকায় উদ্বিগ্ন দলটি। ফলে গণভোটের প্রশ্নে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ প্রচার—কোন পথে এগোবে বিএনপি—সেটাও এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

জানা গেছে, জুলাই সনদে যে জাতীয় ঐকমত্য তৈরি হয়েছে, বিএনপি সেই সনদকেই একমাত্র মানদণ্ড হিসেবে ধরে এগোতে চায়। দলের একাধিক জ্যেষ্ঠ নেতা জানিয়েছেন, গণভোটের প্রশ্নে অস্পষ্টতা থাকায় শিগগিরই অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দাবি জানানো হবে—সংসদ নির্বাচনের দিন যেই গণভোট হবে, তা অবশ্যই জুলাই সনদের ভিত্তিতে হতে হবে।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভাষণের পরদিন রাতে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় ব্যাপক আলোচনার পর গণভোট বিষয়ে সতর্ক ও কৌশলী অবস্থান নেওয়া হয়। সভা শেষে দলটি প্রধান উপদেষ্টাকে শুভেচ্ছা জানালেও গণভোটের প্রশ্নবস্তু নিয়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে।

অন্তর্বর্তী সরকারের আদেশে জুলাই সনদের ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাবের মধ্য থেকে সংবিধান-সম্পর্কিত ৪৮টি প্রস্তাবকে চারটি বিষয়ে ভাগ করে একটি মাত্র প্রশ্নে গণভোটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ‘হ্যাঁ’ জয়ী হলে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠন হবে। তবে এই প্রশ্নের কাঠামোতেই বিএনপির মূল আপত্তি।

দলের দাবি—জুলাই সনদে যেসব স্থানে তারা ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছে, গণভোটের প্রশ্নে সেসব আপত্তিকে বাধ্যতামূলক করে দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে সরকারি কর্ম কমিশন, ন্যায়পাল, সিএজি, দুদক এবং দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠনের প্রস্তাব—এসব বিষয়ে দলের আপত্তি ছিল। আলাদা করে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ বলার সুযোগ না থাকায় এতে ভোটারদের মতামত দেওয়ার পথ রুদ্ধ হচ্ছে বলে মনে করছে বিএনপি।

তবে তৃতীয় ও চতুর্থ প্রশ্নের বিষয়বস্তু—নারীর প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধি, বিরোধী দল থেকে ডেপুটি স্পিকার নির্বাচন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদসীমা নির্ধারণসহ সমঝোতাপূর্ণ অন্যান্য সংস্কারে দলটির দ্বিমত নেই।

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, “জুলাই সনদই রাষ্ট্র সংস্কারের ভিত্তি। সেখানে সাংঘর্ষিক কিছু থাকলে তা পুনর্বিবেচনার দাবি জানানো হবে।”

স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “জাতীয় সংসদের সার্বভৌমত্বে কোনো হস্তক্ষেপ আমরা মেনে নেব না। গণভোট দিয়ে আইন বা সংবিধান সংশোধন হয়ে যাবে না—সেজন্য নির্বাচিত সংসদ অবশ্যই প্রয়োজন।”

রুহুল কবির রিজভী গণভোটের প্রশ্নবস্তুকে ‘জটিল’ ও ‘গোঁজামিলপূর্ণ’ বলে মন্তব্য করে বলেন, “চার প্রশ্নে অসম্মতির সুযোগ নেই। সাধারণ মানুষ কীভাবে মত দেবে, সেটি স্পষ্ট নয়। বোঝা না গেলে গণভোটের উদ্দেশ্যই ব্যাহত হবে।”

সব মিলিয়ে, গণভোটের সময়সূচি নিয়ে সুবিধাজনক অবস্থায় থাকলেও প্রশ্নের বিষয়বস্তু নিয়ে বিএনপি এখন কঠিন রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশে ব্যস্ত। দলটির অবস্থান—জুলাই সনদের বাইরে কোনো প্রস্তাব মানার বাধ্যবাধকতা নেই।