ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়নবঞ্চিতদের দাবিতে বিভিন্ন আসনে বিক্ষোভ, মানববন্ধন ও সমাবেশ অব্যাহত রয়েছে। নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এলেও মনোনয়নপ্রত্যাশীরা তাঁদের অবস্থান ছাড়ছেন না। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানসহ শীর্ষ নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণে অনেকে কর্মসূচিতে এনেছেন নতুনত্ব।
বরিশাল-১ আসনে বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবহানের সমর্থনে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতাকর্মীরা। শুক্রবার সকালে থানাগেটের সামনে মানববন্ধন শেষে উপজেলা পরিষদের সামনে সমাবেশ করেন তারা। বক্তারা বলেন, বরিশাল-১ আসনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক সাংসদ জহিরউদ্দিন স্বপনের পরিবর্তে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার সোবহানকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দিতে হবে। সমাবেশে নবীন সরকার, রবীন্দ্র নাথ গাইন, অমল বাড়ৈ, অর্পণ ভাবুকসহ স্থানীয় নেতারা বক্তব্য দেন। উপস্থিত ছিলেন ফিরোজুর রহমান লালু, রাশেদুল ইসলাম টিটন, মাহাবুবুর রহমান প্রমুখ।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ (শিবগঞ্জ) আসনে মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবিতে মানববন্ধন হয়েছে সোনা মসজিদ মধ্যবাজার এলাকায়। বক্তারা অধ্যাপক মো. শাহজাহান মিয়ার মনোনয়ন বাতিল করে সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাহিন শওকতকে প্রার্থী করার দাবি জানান। এক পর্যায়ে শাহজাহান ও শাহিন শওকতের অনুসারীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
ঢাকা-২০ (ধামরাই) আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী যুবদল নেতা ইয়াছিন ফেরদৌস মুরাদের সমর্থনে জাতীয়তাবাদী মহিলা দল নারী সমাবেশ করেছে। কালামপুর আমাতন নেসা বালিকা বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত সমাবেশে ১০ হাজারেরও বেশি নারী অংশ নেন। বক্তারা বলেন, গত ১৭ বছরে অর্ধশতাধিক মামলার মুখোমুখি হয়েও মুরাদ রাজপথ ছাড়েননি; তাঁর ত্যাগের মূল্যায়ন করে তাঁকেই প্রার্থী করা উচিত। সমাবেশে সাবিনা ইয়াসমিন, অধ্যক্ষ এম এ জলিল, খন্দকার আইয়ুব, রমিজুর রহমান চৌধুরী রোমাসহ স্থানীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন।
চাঁদপুর-১ (কচুয়া) আসনে বিএনপির প্রার্থী ড. এহসানুল হক মিলনের বিরুদ্ধে ‘অপপ্রচার’ ও ‘কুরুচিপূর্ণ’ বক্তব্যের প্রতিবাদে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন হয়েছে। কচুয়া ডাকবাংলো মিলনায়তনে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে আব্দুস সালাম শান্ত, হাবিবুন নবী, কাজী ফরহাদসহ স্থানীয় যুবদল ও বিএনপি নেতারা বলেন, মিলনের বিরুদ্ধে প্রচারণা ভিত্তিহীন ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে করা হয়েছে। তারা কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের প্রতি আনুগত্য রেখে ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে থাকার ঘোষণা দেন।
টাঙ্গাইল-৭ (মির্জাপুর) আসনে প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে গোড়াই শিল্পাঞ্চলে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। সাইদুর রহমান সাইদ সোহরাবের অনুসারী নেতাকর্মীরা আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকীর পরিবর্তে সাইদুর রহমানকে প্রার্থী করার দাবি জানান। এর আগে একই স্থানে মনোনীত প্রার্থী সিদ্দিকীর পক্ষেও বিক্ষোভ হয়। দুই পক্ষের উত্তেজনার কারণে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ (নবীনগর) আসনে মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবিতে মনোনয়নবঞ্চিত ৭ নেতার অনুসারীরা মশাল মিছিল করেছেন। জেলা বিএনপির সদস্য হযরত আলীর নেতৃত্বে হাজারো নেতাকর্মী এ মিছিলে অংশ নেন। তারা অ্যাডভোকেট এম এ মান্নানের পরিবর্তে তকদির হোসেন, সাইদুল হক সাইদ, সালাহ উদ্দিন শিশির, নাজমুল হোসেন তাপস, নাজমুল করিম, কে এম মামুন অর রশিদ অথবা রাজিব আহসান চৌধুরী পাপ্পুর মধ্যে কাউকে প্রার্থী করার দাবি জানান।
সিরাজগঞ্জ-৩ (রায়গঞ্জ-তাড়াশ) আসনে মনোনয়নবঞ্চিত রাহিদ মান্নান তালুকদার লেলিনের অনুসারীরা ধুবিল বিদ্যালয় মাঠে ‘ধানের শীষের জনমত জরিপ’ সভার আয়োজন করেন। বক্তারা অভিযোগ করেন, সাময়িক বহিষ্কৃত আইনুল হককে পুনর্বহাল করে তাঁকে প্রার্থী করা হয়েছে, যা তৃণমূলের প্রত্যাশার প্রতিফলন নয়। প্রয়াত নেতা আব্দুল মান্নান তালুকদারের ছেলে লেলিনকেই এ আসনে প্রার্থী করার দাবি জানান তাঁরা।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন বণ্টনকে কেন্দ্র করে সারাদেশে নেতাকর্মীদের এমন কর্মসূচি আরও জোরদার হচ্ছে বলে জানা গেছে।


























