ঢাকা ১২:৪৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ৫ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আওয়ামী লীগ অনিশ্চিত—নৌকা ভোটব্যাংককে ঘিরে গোপালগঞ্জসহ সারাদেশে তৎপর বিএনপি–জামায়াত–এনসিপি

  • ডেস্ক রিপোর্টঃ
  • আপডেট সময় ০৪:৫৫:১৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৫
  • ৫৬১ বার পড়া হয়েছে

বাংলাদেশের ২০২৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মাঠপর্যায়ে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হয়ে উঠেছে আওয়ামী লীগের ঐতিহ্যবাহী ‘ভোটব্যাংক’। রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকায় আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নেবে কি না—এ নিয়ে যখন অনিশ্চয়তা বাড়ছে, তখন নৌকা সমর্থক ভোটারদের নিজেদের পক্ষে টানতে তৎপরতা বাড়িয়েছে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি।

দেশজুড়ে নৌকা ভোটারদের নিরাপত্তা, মামলা–হয়রানি থেকে রক্ষা এবং সামাজিক–পারিবারিক সম্পর্ক কাজে লাগিয়ে সমর্থন আদায়ে নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন বিভিন্ন দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। বিশেষ করে জামায়াত ও বিএনপি নেতাদের বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

গোপালগঞ্জ—যা আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত—সেখানে চিত্র আরও স্পষ্ট। তিনটি আসনেই এবার প্রার্থী ঠিক করেছে জামায়াতে ইসলামী। গোপালগঞ্জ–২ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী আইনজীবী আজমল হোসেন সরদার স্থানীয় আওয়ামী লীগ সমর্থকদের পারিবারিক সম্পর্ককে রাজনৈতিক সমর্থনে রূপ দিতে মাঠে নেমেছেন। তিনি নৌকা ভোটারদের উদ্দেশে বলছেন—“আওয়ামী লীগ এলে আবার নৌকাতেই ভোট দেবেন, কিন্তু তারা না থাকলে আমাদের বিবেচনায় নিন।”

জামায়াত নেতাদের দাবি, ৫ আগস্টের পর সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে গোপালগঞ্জে প্রায় ২০–২৫টি মামলায় ৩০ হাজারের বেশি লোক নামে–বেনামে আসামি হয়েছেন। এসব মামলায় ‘সহায়তা’ করে নৌকা ভোটারদের আস্থা অর্জনের চেষ্টা চলছে বলেও জানান তারা।

বিএনপিও পিছিয়ে নেই। গোপালগঞ্জ–২ আসনে প্রাথমিক মনোনয়ন পাওয়া কে এম বাবর বলেন, আওয়ামী লীগ নির্বাচন না করলে “একাত্তরের পক্ষের শক্তি এবার ধানের শীষে যাবে।” তবে প্রতিশোধের রাজনীতি না করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটারদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করছেন তিনি। জামায়াতের অভিযোগের জবাবে তার মন্তব্য—“জামায়াত সব সময় দায় অন্যের ওপর চাপায়। মিথ্যা মামলায় বিএনপির সম্পৃক্ততা নেই।”

এদিকে এনসিপি বলছে, নৌকা ভোটব্যাংক এখন দশ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদিবের দাবি—গণঅভ্যুত্থানের সময় তরুণদের মধ্যে বড় পরিবর্তন এসেছে এবং অনেকে নৌকার জায়গায় বিএনপি, জামায়াত বা এনসিপিকে বিবেচনা করতে পারেন।

জামায়াতে ইসলামী মুখপাত্র মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, সাধারণ নৌকা ভোটারই তাদের লক্ষ্য। “আওয়ামী লীগের অপরাধের দায় ভোটারদের নয়”—এ কথা জানিয়ে তিনি হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যেও প্রচারণা চালাচ্ছেন।

বিএনপি কেন্দ্রীয় নেতারা জোর দিচ্ছেন সর্বস্তরের মানুষের ভোটে। স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “ভোটব্যাংক কোনো দিকের নয়। আমরা সমগ্র বাংলাদেশের জন্য রাজনীতি করি।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আওয়ামী লীগ নির্বাচন না করলে নৌকা ভোটারদের সিদ্ধান্তই সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টর হবে। মাঠে যেভাবে বিভিন্ন দল তাদের দিকে হাত বাড়িয়েছে, তা আসন্ন নির্বাচনের গতিপথ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

জনপ্রিয় সংবাদ

হাদিকে গুলি করে হত্যা: ৫ দফা দাবিতে এনসিপির মশাল মিছিল শনিবার

আওয়ামী লীগ অনিশ্চিত—নৌকা ভোটব্যাংককে ঘিরে গোপালগঞ্জসহ সারাদেশে তৎপর বিএনপি–জামায়াত–এনসিপি

আপডেট সময় ০৪:৫৫:১৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৫

বাংলাদেশের ২০২৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মাঠপর্যায়ে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হয়ে উঠেছে আওয়ামী লীগের ঐতিহ্যবাহী ‘ভোটব্যাংক’। রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকায় আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নেবে কি না—এ নিয়ে যখন অনিশ্চয়তা বাড়ছে, তখন নৌকা সমর্থক ভোটারদের নিজেদের পক্ষে টানতে তৎপরতা বাড়িয়েছে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি।

দেশজুড়ে নৌকা ভোটারদের নিরাপত্তা, মামলা–হয়রানি থেকে রক্ষা এবং সামাজিক–পারিবারিক সম্পর্ক কাজে লাগিয়ে সমর্থন আদায়ে নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন বিভিন্ন দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। বিশেষ করে জামায়াত ও বিএনপি নেতাদের বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

গোপালগঞ্জ—যা আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত—সেখানে চিত্র আরও স্পষ্ট। তিনটি আসনেই এবার প্রার্থী ঠিক করেছে জামায়াতে ইসলামী। গোপালগঞ্জ–২ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী আইনজীবী আজমল হোসেন সরদার স্থানীয় আওয়ামী লীগ সমর্থকদের পারিবারিক সম্পর্ককে রাজনৈতিক সমর্থনে রূপ দিতে মাঠে নেমেছেন। তিনি নৌকা ভোটারদের উদ্দেশে বলছেন—“আওয়ামী লীগ এলে আবার নৌকাতেই ভোট দেবেন, কিন্তু তারা না থাকলে আমাদের বিবেচনায় নিন।”

জামায়াত নেতাদের দাবি, ৫ আগস্টের পর সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে গোপালগঞ্জে প্রায় ২০–২৫টি মামলায় ৩০ হাজারের বেশি লোক নামে–বেনামে আসামি হয়েছেন। এসব মামলায় ‘সহায়তা’ করে নৌকা ভোটারদের আস্থা অর্জনের চেষ্টা চলছে বলেও জানান তারা।

বিএনপিও পিছিয়ে নেই। গোপালগঞ্জ–২ আসনে প্রাথমিক মনোনয়ন পাওয়া কে এম বাবর বলেন, আওয়ামী লীগ নির্বাচন না করলে “একাত্তরের পক্ষের শক্তি এবার ধানের শীষে যাবে।” তবে প্রতিশোধের রাজনীতি না করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটারদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করছেন তিনি। জামায়াতের অভিযোগের জবাবে তার মন্তব্য—“জামায়াত সব সময় দায় অন্যের ওপর চাপায়। মিথ্যা মামলায় বিএনপির সম্পৃক্ততা নেই।”

এদিকে এনসিপি বলছে, নৌকা ভোটব্যাংক এখন দশ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদিবের দাবি—গণঅভ্যুত্থানের সময় তরুণদের মধ্যে বড় পরিবর্তন এসেছে এবং অনেকে নৌকার জায়গায় বিএনপি, জামায়াত বা এনসিপিকে বিবেচনা করতে পারেন।

জামায়াতে ইসলামী মুখপাত্র মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, সাধারণ নৌকা ভোটারই তাদের লক্ষ্য। “আওয়ামী লীগের অপরাধের দায় ভোটারদের নয়”—এ কথা জানিয়ে তিনি হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যেও প্রচারণা চালাচ্ছেন।

বিএনপি কেন্দ্রীয় নেতারা জোর দিচ্ছেন সর্বস্তরের মানুষের ভোটে। স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “ভোটব্যাংক কোনো দিকের নয়। আমরা সমগ্র বাংলাদেশের জন্য রাজনীতি করি।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আওয়ামী লীগ নির্বাচন না করলে নৌকা ভোটারদের সিদ্ধান্তই সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টর হবে। মাঠে যেভাবে বিভিন্ন দল তাদের দিকে হাত বাড়িয়েছে, তা আসন্ন নির্বাচনের গতিপথ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।