শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার কাচিকাটা ইউনিয়নের দুলারচর এলাকায় জুয়ার বোর্ডে অভিযান চালিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির চার নেতাকে আটক করেছে পুলিশ। শুক্রবার (১ আগস্ট) সকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এই অভিযান চালানো হয়।
আটককৃতরা হলেন—ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা শফি দেওয়ান ও দাদন দেওয়ান এবং বিএনপির ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা জিতু মল্লিক ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আল আমিন সরকার। পুলিশ জানিয়েছে, এরা দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতির পাশাপাশি গোপনে জুয়ার বোর্ড পরিচালনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সখিপুর থানার কাচিকাটা ইউনিয়নের দুলারচর এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে একটি চক্র রাতের আঁধারে জুয়া খেলে আসছিল। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ভোরে অভিযান চালিয়ে পুলিশ চারজনকে জুয়া খেলার সরঞ্জাম ও নগদ অর্থসহ আটক করে। পরে প্রকাশ্যে জুয়া খেলার অভিযোগে সখিপুর থানায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। শুক্রবার বিকেলে আটককৃতদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়।
এই ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। অনেকে বলেন, অভিযুক্তরা দিনের বেলায় রাজনীতি আর রাতের বেলায় সমাজবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত ছিলেন। দুলারচরের বাসিন্দা লিয়াকত আলী বলেন, “প্রতিদিন বাজার এলাকায় জুয়ার আসর বসত, আমরা বহুবার বলেছি কিন্তু কেউ কথা শোনেনি। ওরা রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ছিল বলে কেউ প্রতিবাদ করত না। এখন অন্তত প্রশাসন ব্যবস্থা নিয়েছে, আমরা চাই এদের শাস্তি হোক।”
একই ধরনের মন্তব্য করেন স্থানীয় বাসিন্দা রহিম দেওয়ান। তিনি বলেন, “দিনে এলাকায় প্রভাব খাটায়, রাতে সমাজ নষ্ট করে। এই ধরনের কার্যকলাপ আর যেন না হয়, প্রশাসনের কাছে আমাদের সেই দাবি।”
এ ঘটনায় স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারাও মুখ খুলেছেন। কাচিকাটা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মোয়াল্লেম বেপারি বলেন, “জিতু মল্লিক ও আল আমিন বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আমরা বিষয়টি জেনেছি এবং সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জুয়া একটি সামাজিক ব্যাধি, এ থেকে কেউ রেহাই পাবে না।”
সখিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. ওবায়দুল হক জানান, আটককৃতদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে এবং আদালতের মাধ্যমে তাদের জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, জুয়ার বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চলবে।
স্থানীয়দের মতে, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় বছরের পর বছর দুলারচরে যে জুয়ার আসর চলছিল, এবার তার বিরুদ্ধেই প্রশাসনের প্রথম কার্যকর পদক্ষেপ দেখা গেল। এলাকাবাসী চায়, এই অভিযান যেন এখানেই থেমে না যায়।