ঢাকা ০৩:০১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ অগাস্ট ২০২৫, ৬ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সাটুরিয়ায় সরকারি সহায়তা না পেয়ে নিজেরাই বানাচ্ছেন ব্রিজ

দীর্ঘদিনের দুর্ভোগের অবসান ঘটাতে এক অনন্য উদ্যোগ নিয়েছেন মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ার কান্দাপাড়া গ্রামের মানুষ।সরকারি দপ্তরে বার বার ধরনা দিয়েও মেলেনি সমাধান। সরকারি সহায়তা না পেয়ে হতাশ না হয়ে, তারা নিজেরাই হাতে তুলে নিয়েছেন ব্রিজ নির্মাণের কাজ। এতে নদীর এই অংশে মানিকগঞ্জ ও ঢাকা জেলার মধ্যে যোগাযোগ সহজ হবে।

গ্রামের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া গাজিখালী নদী বহুদিন ধরেই যোগাযোগের ক্ষেত্রে প্রধান প্রতিবন্ধকতা ছিল। বর্ষাকালে নৌকা ছাড়া চলাচল প্রায় অসম্ভব হয়ে যেত। স্কুল, কলেজ, বাজার কিংবা হাসপাতাল—সব জায়গায় পৌঁছানো ছিল সময়সাপেক্ষ ও কষ্টসাধ্য। কান্দাপাড়াবাসী আর অপেক্ষা করেননি। নিজেরা অর্থ সংগ্রহ করে, শ্রম দিয়ে শুরু করেছেন সেতু নির্মাণের কাজ। বর্তমানে নদীর দুই পাশে সেতুর পিলার দাঁড়িয়ে গেছে—যা দৃঢ় সংকল্পের পরিচায়ক।

এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন: “সরকারি সাহায্য না পেয়ে আমরা হতাশ হলেও বসে থাকিনি। সবাই মিলে চাঁদা তুলে এই ব্রিজের কাজ শুরু করেছি। আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম যাতে কষ্ট না পায়, সেই চিন্তা থেকেই এই উদ্যোগ।” গ্রামের তরুণদের পাশাপাশি বৃদ্ধরাও শ্রম দিয়েছেন নির্মাণকাজে। স্থানীয় রাজমিস্ত্রী, ইঞ্জিনিয়ার ও সাধারণ মানুষ এক হয়ে এগিয়ে নিচ্ছেন কাজটি।

এলাকাবাসীর মতে, এই ব্রিজ কেবল যোগাযোগের মাধ্যমই নয়, এটি এই এলাকার অর্থ-সামাজিক উন্নয়ন তথা শিক্ষা প্রসার ও দুই পাড়ের মানুষের মাঝে আত্মিক সেতুবন্ধন সৃষ্টি করেছে।

মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া উপজেলার ধানকোড়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ‘কান্দাপাড়া ’ নামক স্থানে গাজিখালি নদী ওপর এই সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে।সেতুটির ৮০ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ৮ ফুট প্রস্থ বিশিষ্ট। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে বলে জানান এলাকাবাসী।

বুধবার (১৩ আগস্ট ) সরেজমিনে দেখা যায়, এই সেতু নির্মাণ করা হলে গাঙ্গুটিয়া, ধানকোড়া,কৃষ্ণপুর ও আটিগ্রাম ইউনিয়নের প্রায় সাত গ্রামের মানুষের যাতায়াত সহজ হবে। এই রাস্তা দিয়ে ওই এলাকার বাসিন্দারা বারোবাড়িয়া বাজারসহ কয়েকটি হাট-বাজারে যাতায়াত করেন। সেতু না থাকায় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও গ্রামের বাসিন্দাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। কমপক্ষে এক থেকে দেড় কিলোমিটার ঘুরে অন্য রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে হয়।

সাবেক মন্টু মেম্বারের ছেলে নাহিদ বলেন, কৃষ্ণপুর-কান্দাপাড়ার গাজীখালি নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণের দাবি ছিল প্রায় চারটি ইউনিয়নের বাসিন্দাদের। কিন্তু তাদের দীর্ঘদিনের এ দাবির প্রতি নজর দেননি কোনো জনপ্রতিনিধি। এ অবস্থায় সম্মিলিতভাবে নিজ উদ্যোগে সেতু নির্মাণে কাজ শুরু করেছে গ্রামবাসী।

স্থানীয় বাসিন্দা সুমন বলেন, গাজীখালী নদীতে একটি সেতুর অভাবে নদীর দুই পাড়ের গ্রামগুলোর লক্ষাধিক মানুষ দুর্ভোগে ছিলেন। তাদের চলাচলে কষ্টের শেষ ছিলো না। বিশেষ করে বর্ষাকালে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের চলাচলে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হতো। তাদের একমাত্র ভরসা ছিলো সাকো ও খেয়া নৌকা। একটি সেতুর জন্য এলাকাবাসী সব সময়ই আকুতি জানিয়ে এসেছেন। স্বাধীনতার পর থেকেই তারা জনপ্রতিনিধিদের কাছে সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। বিভিন্ন সময় জনপ্রতিনিধিরা সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিলেও তা দীর্ঘ সময়েও বাস্তবায়ন হয়নি। এলাকাবাসী অভিযোগ করেন, তারা দীর্ঘদিন ধরে সংসদ সদস্য, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারমানের কাছে ধর্ণা দিয়েছেন একটি সেতু নির্মাণের জন্য। তারাও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু এলাকাবাসীর স্বপ্ন অধরাই রয়ে গেছে।

গ্রামবাসী কেন নিজের কাঁধে তুলে নিলো, এই সেতু নির্মাণ কাজ ? এমন প্রশ্নের জবাবে স্থানীয় বাসিন্দা মকসেদ বলেন, ‘এখানে নদী পারাপারের কোন সেতু নেই। শুকনো মৌসুমে পায়ে হেঁটে নদী পার হওয়া গেলেও বর্ষাকালে পানিতে ছোট ছোট নৌকাই ভরসা। যার ফলে চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হয় নারী-শিশু ও শিক্ষার্থীসহ হাজারো মানুষকে। দিনের পর দিন শুধু আশ্বাসই পেয়েছি আমরা। আশ্বাসে আর বিশ্বাস নেই। তাই নিজেদের চলার পথটি সহজ করতে, কারো আশায় বসে না থেকে নিজেরাই সেতু নির্মাণে অংশ নিয়েছে গ্রামবাসী’।

 

কেন গ্রামবাসী এই কঠিন দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নিল? এই প্রশ্নের উত্তরে মিশে ছিল দীর্ঘদিনের বঞ্চনা আর ক্ষোভ। স্থানীয় বাসিন্দা মকসেদ বলেন, “স্বাধীনতার পর থেকে কত জনপ্রতিনিধি এলেন-গেলেন, সবাই শুধু প্রতিশ্রুতিই দিয়েছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। আশ্বাসের ওপর আর বিশ্বাস নেই। তাই কারও ওপর ভরসা না করে নিজেরাই নিজেদের পথ তৈরি করছি।”

মানিকগঞ্জ সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের শিক্ষার্থী রাসেল জানায়, “ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকো পার হয়ে কলেজে যেতে হতো। কেউ অসুস্থ হলে তাকে হাসপাতালে নিতে প্রায় দুই কিলোমিটার ঘুরপথ পাড়ি দিতে হতো। এই সেতু আমাদের মুক্তি দেবে।”

সেতু নির্মাণ তহবিলের ক্যাশিয়ার শরিফুল ইসলাম জানালেন, “রোজার ঈদের পর আমরা গ্রামবাসীরা মিলে এই সিদ্ধান্ত নিই। গ্রামের বিত্তশালী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ—সবাই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। ইতিমধ্যে প্রায় ২০ লাখ টাকা সংগ্রহ হয়েছে, যা দিয়ে পিলারের কাজ শেষ হয়েছে। এখন পাটাতন ঢালাইয়ের জন্য আরও অর্থের প্রয়োজন।”

তিনি আরও বলেন, “এটি এখন শুধু একটি সেতু নয়, এটি একটি গণ-আন্দোলন। এই মহৎ উদ্যোগে সামিল হওয়ার দরজা সবার জন্য খোলা আছে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা দ্রুত কাজটি শেষ করতে পারব।”

এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন বিভিন্ন মহল। সাটুরিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস খান মজলিস বলেন, “কান্দাপাড়ার মানুষ সাহস এবং স্বনির্ভরতার এক অনন্য প্রতীক স্থাপন করেছে।”

তবে মানিকগঞ্জ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা আশরাফুল ইসলাম রাজু একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলে ধরে বলেন, “যেখানে সাধারণ মানুষকে নিজেদের টাকায় সেতু বানাতে হয়, সেখানে রাষ্ট্র এবং জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা কী? এলাকার মানুষের উচিত নির্বাচনের সময় এই বিষয়গুলো মাথায় রাখা।”

দীর্ঘ ৪০-৫০ বছরের বাঁশের সাঁকোর জোড়াতালি দেওয়া জীবনের এবার অবসান ঘটছে। ১৭ বছরের নিরবচ্ছিন্ন আবেদন-নিবেদনেও যা হয়নি, তা আজ গ্রামবাসীর সম্মিলিত শক্তিতে বাস্তবায়িত হচ্ছে।

তবে এলাকাবাসীর একটি দাবি বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। তাঁদের সাফ কথা—এই সেতুর ফিতা কাটবেন কোনো নেতা-মন্ত্রী নন, কাটবেন এই গ্রামেরই কোনো সাধারণ শ্রমজীবী মানুষ। কারণ, এটি কোনো রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি নয়, বরং সাধারণ মানুষের ঘামে-শ্রমে গড়া এক বিজয়ের স্মারক।

জনপ্রিয় সংবাদ

বিমানে ত্রাণ পৌঁছল গাজায়, মানবিক সংকট এখনও কমেনি

সাটুরিয়ায় সরকারি সহায়তা না পেয়ে নিজেরাই বানাচ্ছেন ব্রিজ

আপডেট সময় ০৮:১০:৩৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ অগাস্ট ২০২৫

দীর্ঘদিনের দুর্ভোগের অবসান ঘটাতে এক অনন্য উদ্যোগ নিয়েছেন মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ার কান্দাপাড়া গ্রামের মানুষ।সরকারি দপ্তরে বার বার ধরনা দিয়েও মেলেনি সমাধান। সরকারি সহায়তা না পেয়ে হতাশ না হয়ে, তারা নিজেরাই হাতে তুলে নিয়েছেন ব্রিজ নির্মাণের কাজ। এতে নদীর এই অংশে মানিকগঞ্জ ও ঢাকা জেলার মধ্যে যোগাযোগ সহজ হবে।

গ্রামের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া গাজিখালী নদী বহুদিন ধরেই যোগাযোগের ক্ষেত্রে প্রধান প্রতিবন্ধকতা ছিল। বর্ষাকালে নৌকা ছাড়া চলাচল প্রায় অসম্ভব হয়ে যেত। স্কুল, কলেজ, বাজার কিংবা হাসপাতাল—সব জায়গায় পৌঁছানো ছিল সময়সাপেক্ষ ও কষ্টসাধ্য। কান্দাপাড়াবাসী আর অপেক্ষা করেননি। নিজেরা অর্থ সংগ্রহ করে, শ্রম দিয়ে শুরু করেছেন সেতু নির্মাণের কাজ। বর্তমানে নদীর দুই পাশে সেতুর পিলার দাঁড়িয়ে গেছে—যা দৃঢ় সংকল্পের পরিচায়ক।

এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন: “সরকারি সাহায্য না পেয়ে আমরা হতাশ হলেও বসে থাকিনি। সবাই মিলে চাঁদা তুলে এই ব্রিজের কাজ শুরু করেছি। আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম যাতে কষ্ট না পায়, সেই চিন্তা থেকেই এই উদ্যোগ।” গ্রামের তরুণদের পাশাপাশি বৃদ্ধরাও শ্রম দিয়েছেন নির্মাণকাজে। স্থানীয় রাজমিস্ত্রী, ইঞ্জিনিয়ার ও সাধারণ মানুষ এক হয়ে এগিয়ে নিচ্ছেন কাজটি।

এলাকাবাসীর মতে, এই ব্রিজ কেবল যোগাযোগের মাধ্যমই নয়, এটি এই এলাকার অর্থ-সামাজিক উন্নয়ন তথা শিক্ষা প্রসার ও দুই পাড়ের মানুষের মাঝে আত্মিক সেতুবন্ধন সৃষ্টি করেছে।

মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া উপজেলার ধানকোড়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ‘কান্দাপাড়া ’ নামক স্থানে গাজিখালি নদী ওপর এই সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে।সেতুটির ৮০ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ৮ ফুট প্রস্থ বিশিষ্ট। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে বলে জানান এলাকাবাসী।

বুধবার (১৩ আগস্ট ) সরেজমিনে দেখা যায়, এই সেতু নির্মাণ করা হলে গাঙ্গুটিয়া, ধানকোড়া,কৃষ্ণপুর ও আটিগ্রাম ইউনিয়নের প্রায় সাত গ্রামের মানুষের যাতায়াত সহজ হবে। এই রাস্তা দিয়ে ওই এলাকার বাসিন্দারা বারোবাড়িয়া বাজারসহ কয়েকটি হাট-বাজারে যাতায়াত করেন। সেতু না থাকায় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও গ্রামের বাসিন্দাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। কমপক্ষে এক থেকে দেড় কিলোমিটার ঘুরে অন্য রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে হয়।

সাবেক মন্টু মেম্বারের ছেলে নাহিদ বলেন, কৃষ্ণপুর-কান্দাপাড়ার গাজীখালি নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণের দাবি ছিল প্রায় চারটি ইউনিয়নের বাসিন্দাদের। কিন্তু তাদের দীর্ঘদিনের এ দাবির প্রতি নজর দেননি কোনো জনপ্রতিনিধি। এ অবস্থায় সম্মিলিতভাবে নিজ উদ্যোগে সেতু নির্মাণে কাজ শুরু করেছে গ্রামবাসী।

স্থানীয় বাসিন্দা সুমন বলেন, গাজীখালী নদীতে একটি সেতুর অভাবে নদীর দুই পাড়ের গ্রামগুলোর লক্ষাধিক মানুষ দুর্ভোগে ছিলেন। তাদের চলাচলে কষ্টের শেষ ছিলো না। বিশেষ করে বর্ষাকালে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের চলাচলে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হতো। তাদের একমাত্র ভরসা ছিলো সাকো ও খেয়া নৌকা। একটি সেতুর জন্য এলাকাবাসী সব সময়ই আকুতি জানিয়ে এসেছেন। স্বাধীনতার পর থেকেই তারা জনপ্রতিনিধিদের কাছে সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। বিভিন্ন সময় জনপ্রতিনিধিরা সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিলেও তা দীর্ঘ সময়েও বাস্তবায়ন হয়নি। এলাকাবাসী অভিযোগ করেন, তারা দীর্ঘদিন ধরে সংসদ সদস্য, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারমানের কাছে ধর্ণা দিয়েছেন একটি সেতু নির্মাণের জন্য। তারাও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু এলাকাবাসীর স্বপ্ন অধরাই রয়ে গেছে।

গ্রামবাসী কেন নিজের কাঁধে তুলে নিলো, এই সেতু নির্মাণ কাজ ? এমন প্রশ্নের জবাবে স্থানীয় বাসিন্দা মকসেদ বলেন, ‘এখানে নদী পারাপারের কোন সেতু নেই। শুকনো মৌসুমে পায়ে হেঁটে নদী পার হওয়া গেলেও বর্ষাকালে পানিতে ছোট ছোট নৌকাই ভরসা। যার ফলে চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হয় নারী-শিশু ও শিক্ষার্থীসহ হাজারো মানুষকে। দিনের পর দিন শুধু আশ্বাসই পেয়েছি আমরা। আশ্বাসে আর বিশ্বাস নেই। তাই নিজেদের চলার পথটি সহজ করতে, কারো আশায় বসে না থেকে নিজেরাই সেতু নির্মাণে অংশ নিয়েছে গ্রামবাসী’।

 

কেন গ্রামবাসী এই কঠিন দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নিল? এই প্রশ্নের উত্তরে মিশে ছিল দীর্ঘদিনের বঞ্চনা আর ক্ষোভ। স্থানীয় বাসিন্দা মকসেদ বলেন, “স্বাধীনতার পর থেকে কত জনপ্রতিনিধি এলেন-গেলেন, সবাই শুধু প্রতিশ্রুতিই দিয়েছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। আশ্বাসের ওপর আর বিশ্বাস নেই। তাই কারও ওপর ভরসা না করে নিজেরাই নিজেদের পথ তৈরি করছি।”

মানিকগঞ্জ সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের শিক্ষার্থী রাসেল জানায়, “ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকো পার হয়ে কলেজে যেতে হতো। কেউ অসুস্থ হলে তাকে হাসপাতালে নিতে প্রায় দুই কিলোমিটার ঘুরপথ পাড়ি দিতে হতো। এই সেতু আমাদের মুক্তি দেবে।”

সেতু নির্মাণ তহবিলের ক্যাশিয়ার শরিফুল ইসলাম জানালেন, “রোজার ঈদের পর আমরা গ্রামবাসীরা মিলে এই সিদ্ধান্ত নিই। গ্রামের বিত্তশালী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ—সবাই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। ইতিমধ্যে প্রায় ২০ লাখ টাকা সংগ্রহ হয়েছে, যা দিয়ে পিলারের কাজ শেষ হয়েছে। এখন পাটাতন ঢালাইয়ের জন্য আরও অর্থের প্রয়োজন।”

তিনি আরও বলেন, “এটি এখন শুধু একটি সেতু নয়, এটি একটি গণ-আন্দোলন। এই মহৎ উদ্যোগে সামিল হওয়ার দরজা সবার জন্য খোলা আছে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা দ্রুত কাজটি শেষ করতে পারব।”

এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন বিভিন্ন মহল। সাটুরিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস খান মজলিস বলেন, “কান্দাপাড়ার মানুষ সাহস এবং স্বনির্ভরতার এক অনন্য প্রতীক স্থাপন করেছে।”

তবে মানিকগঞ্জ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা আশরাফুল ইসলাম রাজু একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলে ধরে বলেন, “যেখানে সাধারণ মানুষকে নিজেদের টাকায় সেতু বানাতে হয়, সেখানে রাষ্ট্র এবং জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা কী? এলাকার মানুষের উচিত নির্বাচনের সময় এই বিষয়গুলো মাথায় রাখা।”

দীর্ঘ ৪০-৫০ বছরের বাঁশের সাঁকোর জোড়াতালি দেওয়া জীবনের এবার অবসান ঘটছে। ১৭ বছরের নিরবচ্ছিন্ন আবেদন-নিবেদনেও যা হয়নি, তা আজ গ্রামবাসীর সম্মিলিত শক্তিতে বাস্তবায়িত হচ্ছে।

তবে এলাকাবাসীর একটি দাবি বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। তাঁদের সাফ কথা—এই সেতুর ফিতা কাটবেন কোনো নেতা-মন্ত্রী নন, কাটবেন এই গ্রামেরই কোনো সাধারণ শ্রমজীবী মানুষ। কারণ, এটি কোনো রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি নয়, বরং সাধারণ মানুষের ঘামে-শ্রমে গড়া এক বিজয়ের স্মারক।