ঢাকা ০২:২০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫, ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পল্লবীতে যুবদল নেতা গোলাম কিবরিয়া হত্যায় মামলা; মাদকচক্র–সন্ত্রাসীদের দ্বন্দ্বে রক্তাক্ত শুটার মিশন

  • ডেস্ক রিপোর্টঃ
  • আপডেট সময় ১০:৩৫:১৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫
  • ৫৬০ বার পড়া হয়েছে

 

রাজধানীর পল্লবী থানা যুবদলের সদস্য সচিব গোলাম কিবরিয়া হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেছে তার পরিবার। নিহত কিবরিয়ার স্ত্রী সাবিহা আক্তার দিনা মঙ্গলবার পল্লবী থানায় মামলাটি দায়ের করেন। এদের সবাই বিদেশে পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

সূত্র জানায়, গার্মেন্ট ব্যবসা ও যুবদলের কমিটি নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে কিবরিয়া ও সন্ত্রাসী মামুনের মধ্যে তীব্র বিরোধ তৈরি হয়েছিল। প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে মামুন কিবরিয়াকে পল্লবী থানা যুবদল কমিটিতে তার লোকজনকে অন্তর্ভুক্ত করা এবং মিরপুর ৭ নম্বরের ডেকো গার্মেন্টের নিয়ন্ত্রণ ছাড়ার জন্য চাপ দিয়ে আসছিলেন। কিন্তু কিবরিয়া এতে রাজি না হওয়ায় তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। এছাড়া তিনি কিছুদিন ধরে এলাকায় মাদকবিরোধী কার্যক্রম চালিয়ে আসছিলেন, যার কারণে স্থানীয় মাদকচক্রও ক্ষুব্ধ ছিল।

মামলায় আসামি করা হয়েছে—মো. জনি ভূইয়া, সোহেল ওরফে পাতা সোহেল ওরফে মনির সোহেল, সোহাগ ওরফে কাল্লু, মাসুম ওরফে ভাগিনা মাসুম, রোকন এবং অজ্ঞাত আরও ৭–৮ জনকে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডিএমপির মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান। তিনি বলেন, “ঘটনাটি গুরুত্বসহকারে তদন্ত করা হচ্ছে, এখনই নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না।”

তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সোমবার সন্ধ্যায় পল্লবীতে কিলিং মিশনে ছয়জন অংশ নেয়। তাদের হাতে ছিল নাইন-এমএম স্বয়ংক্রিয় পিস্তল, যার মাধ্যমে অন্তত ১৮ রাউন্ড গুলি ছোড়া হয়। গুলি চালায় চারজন। পরে মোটরবাইকে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায় তারা। স্থানীয়রা একজনকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দেয়; তার তথ্যের ভিত্তিতেই বাকি পাঁচজনের পরিচয় পাওয়া গেছে।

সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটে পল্লবী ১২ নম্বর সেকশনের বিক্রমপুর হার্ডওয়্যার অ্যান্ড স্যানিটারি দোকানে বসে থাকা অবস্থায় তিনজন মুখোশধারী খুব কাছ থেকে কিবরিয়ার বুকে, মুখে, ঘাড়ে ও শরীরের বিভিন্ন অংশে গুলি করে হত্যা করে। পরে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা যায়, ঘটনার দোকানটি বন্ধ এবং পুরো এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান—জনি ভূইয়া, সোহাগ ওরফে কাল্লু ও রোকন দোকানে ঢুকে গুলি চালায়, আর বাইরে পাহারায় ছিল পাতা সোহেল, ভাগিনা মাসুমসহ আরও একজন।

নিহতের রাজনৈতিক সহচর আমান বলেন, “হত্যাকারীরা সবাই চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। কিবরিয়া ভাই মাদকমুক্ত করতে কাজ করছিলেন—এটাই তার কাল হলো।” তার ছোট ভাই গোলাম কবির জানান, “ভাই সবার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতেন। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ঈর্ষাও হত্যার কারণ হতে পারে।”

মঙ্গলবার বাদ আসর পল্লবীর ঈদগাহ মাঠে তার জানাজায় হাজারো মানুষ অংশ নেন। শোকাবহ পরিবেশে বিএনপি ও যুবদলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানান।

ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক বলেন, “২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বাকি হত্যাকারীদের গ্রেফতার করা হবে বলে আমরা আশা করি।”

চাঁদপুরের মতলব উত্তরের অলিপুর তালুকদারবাড়িতে কিবরিয়ার গ্রামের বাড়িতেও নেমেছে শোকের ছায়া। ছোটবেলা থেকেই পরিবার ঢাকায় থাকলেও গ্রামের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল নিয়মিত। দুই কন্যার জনক কিবরিয়া চার ভাই–বোনের মধ্যে তৃতীয় ছিলেন। আজ মিরপুরে জানাজা শেষে সেখানে দাফন সম্পন্ন হবে বলে পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

তফসিলের পর একদিনে সব ডিসি–এসপি বদলির দাবি জামায়াতের; নিরপেক্ষতার জন্য লটারির প্রস্তাব

পল্লবীতে যুবদল নেতা গোলাম কিবরিয়া হত্যায় মামলা; মাদকচক্র–সন্ত্রাসীদের দ্বন্দ্বে রক্তাক্ত শুটার মিশন

আপডেট সময় ১০:৩৫:১৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫

 

রাজধানীর পল্লবী থানা যুবদলের সদস্য সচিব গোলাম কিবরিয়া হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেছে তার পরিবার। নিহত কিবরিয়ার স্ত্রী সাবিহা আক্তার দিনা মঙ্গলবার পল্লবী থানায় মামলাটি দায়ের করেন। এদের সবাই বিদেশে পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

সূত্র জানায়, গার্মেন্ট ব্যবসা ও যুবদলের কমিটি নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে কিবরিয়া ও সন্ত্রাসী মামুনের মধ্যে তীব্র বিরোধ তৈরি হয়েছিল। প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে মামুন কিবরিয়াকে পল্লবী থানা যুবদল কমিটিতে তার লোকজনকে অন্তর্ভুক্ত করা এবং মিরপুর ৭ নম্বরের ডেকো গার্মেন্টের নিয়ন্ত্রণ ছাড়ার জন্য চাপ দিয়ে আসছিলেন। কিন্তু কিবরিয়া এতে রাজি না হওয়ায় তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। এছাড়া তিনি কিছুদিন ধরে এলাকায় মাদকবিরোধী কার্যক্রম চালিয়ে আসছিলেন, যার কারণে স্থানীয় মাদকচক্রও ক্ষুব্ধ ছিল।

মামলায় আসামি করা হয়েছে—মো. জনি ভূইয়া, সোহেল ওরফে পাতা সোহেল ওরফে মনির সোহেল, সোহাগ ওরফে কাল্লু, মাসুম ওরফে ভাগিনা মাসুম, রোকন এবং অজ্ঞাত আরও ৭–৮ জনকে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডিএমপির মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান। তিনি বলেন, “ঘটনাটি গুরুত্বসহকারে তদন্ত করা হচ্ছে, এখনই নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না।”

তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সোমবার সন্ধ্যায় পল্লবীতে কিলিং মিশনে ছয়জন অংশ নেয়। তাদের হাতে ছিল নাইন-এমএম স্বয়ংক্রিয় পিস্তল, যার মাধ্যমে অন্তত ১৮ রাউন্ড গুলি ছোড়া হয়। গুলি চালায় চারজন। পরে মোটরবাইকে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায় তারা। স্থানীয়রা একজনকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দেয়; তার তথ্যের ভিত্তিতেই বাকি পাঁচজনের পরিচয় পাওয়া গেছে।

সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটে পল্লবী ১২ নম্বর সেকশনের বিক্রমপুর হার্ডওয়্যার অ্যান্ড স্যানিটারি দোকানে বসে থাকা অবস্থায় তিনজন মুখোশধারী খুব কাছ থেকে কিবরিয়ার বুকে, মুখে, ঘাড়ে ও শরীরের বিভিন্ন অংশে গুলি করে হত্যা করে। পরে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা যায়, ঘটনার দোকানটি বন্ধ এবং পুরো এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান—জনি ভূইয়া, সোহাগ ওরফে কাল্লু ও রোকন দোকানে ঢুকে গুলি চালায়, আর বাইরে পাহারায় ছিল পাতা সোহেল, ভাগিনা মাসুমসহ আরও একজন।

নিহতের রাজনৈতিক সহচর আমান বলেন, “হত্যাকারীরা সবাই চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। কিবরিয়া ভাই মাদকমুক্ত করতে কাজ করছিলেন—এটাই তার কাল হলো।” তার ছোট ভাই গোলাম কবির জানান, “ভাই সবার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতেন। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ঈর্ষাও হত্যার কারণ হতে পারে।”

মঙ্গলবার বাদ আসর পল্লবীর ঈদগাহ মাঠে তার জানাজায় হাজারো মানুষ অংশ নেন। শোকাবহ পরিবেশে বিএনপি ও যুবদলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানান।

ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক বলেন, “২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বাকি হত্যাকারীদের গ্রেফতার করা হবে বলে আমরা আশা করি।”

চাঁদপুরের মতলব উত্তরের অলিপুর তালুকদারবাড়িতে কিবরিয়ার গ্রামের বাড়িতেও নেমেছে শোকের ছায়া। ছোটবেলা থেকেই পরিবার ঢাকায় থাকলেও গ্রামের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল নিয়মিত। দুই কন্যার জনক কিবরিয়া চার ভাই–বোনের মধ্যে তৃতীয় ছিলেন। আজ মিরপুরে জানাজা শেষে সেখানে দাফন সম্পন্ন হবে বলে পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে।