বাংলাদেশ ষড় ঋতুর দেশ। প্রতি দু’মাস পরপর ঋতুর পরিবর্তনের মাঝে শীতকাল আসে ফল–ফুল, শস্য এবং সবজির প্রাচুর্য নিয়ে। খেত–খামার ও বাজারঘাটে তৈরি হয় শীতের সমৃদ্ধ পরিবেশ। প্রকৃতির এই বৈচিত্র্যের পাশাপাশি শীতকাল মুমিনদের জীবনে নিয়ে আসে বিশেষ ইবাদতের মৌসুম—ইবাদতের বসন্ত।
শীতের দীর্ঘ রাত তাহাজ্জুদের জন্য বড় সুযোগ তৈরি করে। নবী মুহাম্মদ (সা.) প্রতিদিন তাহাজ্জুদ আদায় করতেন এবং সাহাবায়ে কেরামকে (রা.) তাতে উৎসাহিত করতেন। হাদিসে এসেছে, রাতের দুই-তৃতীয়াংশ অতিবাহিত হওয়ার পর আল্লাহ তাআলা বান্দাদের উদ্দেশে আহ্বান করেন—‘আছে কি কেউ যে আমাকে ডাকবে, আমি তার ডাকে সাড়া দেব? আছে কি কেউ কিছু চাইবে, আমি তাকে তা দেব? আছে কি কেউ ক্ষমা চাইবে, আমি তাকে ক্ষমা করব?’ (বুখারি ৬৩২১)। ফলে শীতের দীর্ঘ রাতে তাহাজ্জুদ মুমিনের আত্মশুদ্ধি ও চাওয়া–পাওয়ার বিশেষ সময় হয়ে দাঁড়ায়।
শীতকালের আরেকটি উল্লেখযোগ্য ইবাদত হলো রোজা। দিন ছোট হওয়ায় দুর্বল ও সবল সবাই রোজা রাখতে সুবিধা পান। আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, নবী (সা.) বলেছেন, সোমবার ও বৃহস্পতিবার আমলসমূহ আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয়, আর তিনি চান তার আমল যেন পেশ হয়, তিনি রোজাদার অবস্থায়। (তিরমিজি, হাদিস ৭৪৭)। আরেক হাদিসে আবু হুরায়রা (রা.) তার শিষ্যদের শীতের রোজাকে ‘সহজ গনীমত’ বলে উল্লেখ করেন (বায়হাকি)।
শীতে দান–সদকার গুরুত্বও বেড়ে যায়। শীতের তীব্রতা সমাজের নিম্নশ্রেণীর মানুষকে বেশি কষ্টে ফেলে—বয়োবৃদ্ধরা অসুস্থতায় ভোগেন, অসহায়দের কষ্ট বাড়ে। এ সময় তাদের পাশে দাঁড়ানো মানবিক দায়িত্ব ও বড় নেকি। নবী (সা.) বলেছেন—‘দান–সদকা মানুষকে ভয়ংকর মৃত্যু থেকে রক্ষা করে এবং রোগ–ব্যাধি ভালো হয়।’ (তিরমিজি ৬৬৪)।
ইবাদতের গুণে শীতকালকে সাহাবায়ে কেরাম বিশেষ মর্যাদা দিতেন। হজরত উমর (রা.) বলেছেন, ‘শীতকাল ইবাদতগুজারের জন্য গনীমত।’ একইভাবে সহীহ মুসলিমের হাদিসে এসেছে—কষ্ট সত্ত্বেও পূর্ণ ওযু করা, মসজিদের দিকে বারবার হাঁটা এবং এক নামাজের পর অন্য নামাজের অপেক্ষায় থাকা—এগুলো পাপ মোচন ও মর্যাদা বৃদ্ধির মাধ্যম।
ইবাদতের এই বিশেষ সুযোগগুলো শীতকালকে শুধু প্রকৃতির ঋতু নয়, বরং মুমিনের জীবনে নেকি অর্জনের এক মহাসুযোগে পরিণত করে।


























