ঢাকা ০১:৩৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ৩ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

র‌্যাব যথাযথ ব্যবস্থা নিলে বদলে যেতে পারত চিত্র

  • ডেস্ক রিপোর্টঃ
  • আপডেট সময় ১০:০৫:১৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫
  • ৫২৫ বার পড়া হয়েছে

২০০৯ সালের ২৫–২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় সংঘটিত নৃশংস হত্যাকাণ্ড কি এড়ানো যেত? জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশনের সদ্য প্রকাশিত প্রতিবেদনে সেই প্রশ্নের জোরালো উত্তর মিলেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, র‌্যাবের অগ্রবর্তী ইউনিটগুলো প্রস্তুত ও অবস্থানে থাকলেও সময়মতো অভিযান চালানোর অনুমতি না দেওয়ায় হত্যাযজ্ঞ প্রতিহত করা সম্ভব হয়নি।

কমিশনের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, ঘটনার শুরুতেই র‌্যাব ২ ও র‌্যাব ৩-এর একাধিক দল পিলখানার বিভিন্ন গেটে অবস্থান নেয়। সকাল সোয়া ১০টার দিকে লে. কর্নেল শামসুজ্জামানের নেতৃত্বে র‌্যাব ২-এর একটি দল চার নম্বর গেটে পৌঁছায়—তখনো মূল হত্যাকাণ্ড শুরু হয়নি এবং সেখানে মাত্র দু–তিনজন বিডিআর সদস্য ছিল। একই সময়ে পাঁচ নম্বর গেটে মেজর আমিনের নেতৃত্বে র‌্যাব ২-এর দুটি প্লাটুন অবস্থান নেয়, যেখান থেকে দরবার হলের দূরত্ব ছিল আনুমানিক ৫০ গজ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, তৎকালীন র‌্যাবের ডিজি হাসান মাহমুদ খন্দকার এবং এডিজি মেজর জেনারেল রেজানুর খান পিলখানায় প্রবেশ কিংবা গুলি চালানোর অনুমতি দেননি। অনুমতি পেলে বা আইন অনুযায়ী অনুমতির অপেক্ষা না করে অভিযান চালালে সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে শুরু হওয়া নৃশংস হত্যাকাণ্ড এবং পরবর্তী হত্যাগুলো ঠেকানো যেত।

র‌্যাব ৩-এর ক্ষেত্রেও একই চিত্র উঠে এসেছে। লে. কর্নেল জাকিরের নেতৃত্বে একটি দল তিন নম্বর গেটে পৌঁছালেও আক্রমণ চালাতে নিষেধ করা হয়। এমনকি বিদ্রোহীদের হামলার মুখেও তারা পাল্টা গুলি চালায়নি। কমিশনের মতে, এই নিষ্ক্রিয়তা ঘটনাপ্রবাহকে আরও ভয়াবহ করে তোলে।

প্রতিবেদন আরও অভিযোগ করেছে, ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় দায়িত্বরত পুলিশ ও র‌্যাব কর্মকর্তারা সেনা কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের জীবন, সম্মান ও সম্পদ রক্ষায় ব্যর্থ হন। হত্যাকাণ্ডের স্থান যথাযথভাবে ঘিরে না রেখে বিদ্রোহীদের গাড়িতে করে পালাতে দেওয়া হয়। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত ‘সাধারণ ক্ষমা’র অজুহাতে অনেক পলাতক অপরাধীকেও গ্রেপ্তার করা হয়নি।

এই গুরুতর অভিযোগের আওতায় রমনা, লালবাগসহ একাধিক বিভাগের ডিসি-এডিসি, বিভিন্ন থানার ওসি-পিআই এবং র‌্যাব ২-এর অধিনায়কসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দায়িত্বহীনতার বিষয়টি তদন্তের সুপারিশ করা হয়েছে।

জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশনের এই প্রতিবেদন নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে—সময়মতো সাহসী সিদ্ধান্ত নিলে কি ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ এই হত্যাকাণ্ড ঠেকানো যেত না?

জনপ্রিয় সংবাদ

জনশক্তি রপ্তানিতে বড় বাধা দালালরা: ড. ইউনূস

র‌্যাব যথাযথ ব্যবস্থা নিলে বদলে যেতে পারত চিত্র

আপডেট সময় ১০:০৫:১৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫

২০০৯ সালের ২৫–২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় সংঘটিত নৃশংস হত্যাকাণ্ড কি এড়ানো যেত? জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশনের সদ্য প্রকাশিত প্রতিবেদনে সেই প্রশ্নের জোরালো উত্তর মিলেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, র‌্যাবের অগ্রবর্তী ইউনিটগুলো প্রস্তুত ও অবস্থানে থাকলেও সময়মতো অভিযান চালানোর অনুমতি না দেওয়ায় হত্যাযজ্ঞ প্রতিহত করা সম্ভব হয়নি।

কমিশনের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, ঘটনার শুরুতেই র‌্যাব ২ ও র‌্যাব ৩-এর একাধিক দল পিলখানার বিভিন্ন গেটে অবস্থান নেয়। সকাল সোয়া ১০টার দিকে লে. কর্নেল শামসুজ্জামানের নেতৃত্বে র‌্যাব ২-এর একটি দল চার নম্বর গেটে পৌঁছায়—তখনো মূল হত্যাকাণ্ড শুরু হয়নি এবং সেখানে মাত্র দু–তিনজন বিডিআর সদস্য ছিল। একই সময়ে পাঁচ নম্বর গেটে মেজর আমিনের নেতৃত্বে র‌্যাব ২-এর দুটি প্লাটুন অবস্থান নেয়, যেখান থেকে দরবার হলের দূরত্ব ছিল আনুমানিক ৫০ গজ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, তৎকালীন র‌্যাবের ডিজি হাসান মাহমুদ খন্দকার এবং এডিজি মেজর জেনারেল রেজানুর খান পিলখানায় প্রবেশ কিংবা গুলি চালানোর অনুমতি দেননি। অনুমতি পেলে বা আইন অনুযায়ী অনুমতির অপেক্ষা না করে অভিযান চালালে সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে শুরু হওয়া নৃশংস হত্যাকাণ্ড এবং পরবর্তী হত্যাগুলো ঠেকানো যেত।

র‌্যাব ৩-এর ক্ষেত্রেও একই চিত্র উঠে এসেছে। লে. কর্নেল জাকিরের নেতৃত্বে একটি দল তিন নম্বর গেটে পৌঁছালেও আক্রমণ চালাতে নিষেধ করা হয়। এমনকি বিদ্রোহীদের হামলার মুখেও তারা পাল্টা গুলি চালায়নি। কমিশনের মতে, এই নিষ্ক্রিয়তা ঘটনাপ্রবাহকে আরও ভয়াবহ করে তোলে।

প্রতিবেদন আরও অভিযোগ করেছে, ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় দায়িত্বরত পুলিশ ও র‌্যাব কর্মকর্তারা সেনা কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের জীবন, সম্মান ও সম্পদ রক্ষায় ব্যর্থ হন। হত্যাকাণ্ডের স্থান যথাযথভাবে ঘিরে না রেখে বিদ্রোহীদের গাড়িতে করে পালাতে দেওয়া হয়। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত ‘সাধারণ ক্ষমা’র অজুহাতে অনেক পলাতক অপরাধীকেও গ্রেপ্তার করা হয়নি।

এই গুরুতর অভিযোগের আওতায় রমনা, লালবাগসহ একাধিক বিভাগের ডিসি-এডিসি, বিভিন্ন থানার ওসি-পিআই এবং র‌্যাব ২-এর অধিনায়কসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দায়িত্বহীনতার বিষয়টি তদন্তের সুপারিশ করা হয়েছে।

জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশনের এই প্রতিবেদন নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে—সময়মতো সাহসী সিদ্ধান্ত নিলে কি ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ এই হত্যাকাণ্ড ঠেকানো যেত না?