অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ থেকে পদত্যাগের এক সপ্তাহ পার হলেও এখনো সরকারি বাসভবন ছাড়েননি ছাত্র প্রতিনিধি আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও মাহফুজ আলম। কবে নাগাদ তাঁরা বাসভবন ছাড়বেন—এ বিষয়ে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কাছেও কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বুধবার পর্যন্ত পদত্যাগী এই দুই উপদেষ্টার কেউই সরকারি বাসভবন ত্যাগ করেননি। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তাঁদের কোনো যোগাযোগ হয়নি। এমনকি মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁদের সাড়া পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তা নাম প্রকাশ করে কথা বলতে রাজি হননি। কালের কণ্ঠের পক্ষ থেকে দুই উপদেষ্টার মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁরা ফোন ধরেননি। প্রতিবেদকের পরিচয় উল্লেখ করে পাঠানো এসএমএসেরও কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।
সরকারি আবাসন পরিদপ্তরের বিদ্যমান নীতিমালায় মন্ত্রিসভার সদস্য বা জনপ্রতিনিধিরা পদত্যাগের পর কতদিন সরকারি বাসভবনে থাকতে পারবেন—সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো নির্দেশনা নেই। তবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আচরণ বিধিমালা অনুযায়ী, সরকারি বাসভবন, গাড়ি বা অন্য কোনো সরকারি সুযোগ-সুবিধা ব্যবহার করে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া নিষিদ্ধ।
অন্যদিকে, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ক্ষেত্রে চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার পর সর্বোচ্চ দুই মাস সরকারি বাসভবনে থাকার সুযোগ রয়েছে। সন্তানরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত থাকলে বিশেষ ক্ষেত্রে আরও চার মাস সময় বাড়ানো যায়।
উল্লেখ্য, গত ১০ ডিসেম্বর বিকেল ৫টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় গিয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও মাহফুজ আলম। প্রধান উপদেষ্টা তাঁদের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেন। তখন প্রেস উইং থেকে জানানো হয়, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই পদত্যাগ কার্যকর হবে।
পরদিন উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে তাঁরা আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় নেন। ওইদিন সন্ধ্যায় ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলে তাঁদের পদত্যাগ কার্যকর হয়।
আসিফ মাহমুদ ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের দিন থেকেই উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনি স্থানীয় সরকার এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। অন্যদিকে, মাহফুজ আলম গত বছরের ২৮ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হিসেবে নিয়োগ পান এবং ১০ নভেম্বর উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন। শুরুতে কোনো মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব না পেলেও চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে তথ্য উপদেষ্টার দায়িত্ব দেওয়া হয় তাঁকে।
সব মিলিয়ে আসিফ মাহমুদ ১৫ মাস এবং মাহফুজ আলম ১৩ মাস উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচির ঘোষণা আসে আসিফ মাহমুদের মাধ্যমে, যা শেখ হাসিনার সরকারের পতন ত্বরান্বিত করে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে তাঁর ভূমিকা ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়।
অন্যদিকে, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ‘মাস্টারমাইন্ড’ হিসেবে মাহফুজ আলমকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচয় করিয়ে দেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। জাতিসংঘের অধিবেশনে প্রথমবার অংশ নিতে গিয়ে সফরসঙ্গী হিসেবে তাঁকে নেওয়ার ঘটনাও দেশ-বিদেশে আলোচনার জন্ম দেয়।


























