ঢাকা ০২:৪৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

তরুণ ও নারী ভোটারদের আকর্ষণ বাড়াতে বিশেষ কনটেন্ট তৈরির সিদ্ধান্ত নিল বিএনপি

  • ডেস্ক রিপোর্টঃ
  • আপডেট সময় ০৯:৩২:২১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৫
  • ৫৪৯ বার পড়া হয়েছে

 

তরুণ ও নারী ভোটারদের আকর্ষণ বাড়াতে বিশেষ কনটেন্ট তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি।দলটির স্থায়ী কমিটির সর্বশেষ এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এছাড়াও বৈঠকে আসনভিত্তিক বিশেষ টিম গঠন, সেক্টরভিত্তিক অঙ্গীকার তৈরি এবং পৃথক লিফলেটের মাধ্যমে এসব পরিকল্পনা জনগণের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার ব্যাপারে সর্বসম্মত মত হয়। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলে কোন সেক্টরে কী ধরনের পরিবর্তন আনবে—সে বিষয়ে দলটি একটি সমন্বিত প্রচারনীতি গ্রহণ করছে।

সম্প্রতি গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, কেন্দ্রীয় ও অঙ্গ–সহযোগী সংগঠনের নেতাদের নিয়ে প্রতিটি আসনে আলাদা টিম গঠন করা হবে। দলটি রাষ্ট্র মেরামতে তাদের ৩১ দফা, শিক্ষা–কর্মসংস্থান–স্বাস্থ্য–কৃষি–শিল্প–ব্যবসা-বাণিজ্যসহ প্রতিটি খাতে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা আলাদা লিফলেট আকারে প্রচার করবে। তরুণ ও নারী ভোটারদের আকর্ষণ বাড়াতে বিশেষ কনটেন্ট তৈরি করা হবে। এসব লিফলেট দেশব্যাপী প্রতিটি ঘরে পৌঁছে দেওয়ার জন্য নেতাকর্মীদের বিশেষ নির্দেশনা থাকবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিএনপির মূল লক্ষ্য একটি স্থিতিশীল, সমৃদ্ধ ও সুখী বাংলাদেশ গড়ে তোলা, যেখানে নাগরিকরা ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে না। নিরাপদ জীবনযাপন করতে পারবে, ব্যক্তিগত মর্যাদা ও সম্মান বজায় থাকবে এবং প্রত্যেকে তার ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান স্বাধীনভাবে পালন করতে পারবেন। বিএনপি ইতোমধ্যে ভঙ্গুর অর্থনীতি পুনর্গঠন, জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা, নাজুক সামাজিক শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার, বিপুলসংখ্যক বেকার যুবকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং বিজ্ঞান-প্রযুক্তিনির্ভর কর্মমুখী শিক্ষা চালুর জন্য ব্যাপক কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে।

আমির খসরু বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে সারা দেশের মানুষের জন্য বিনামূল্যে প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা চালু করবে। এ লক্ষ্যে বিএনপি এখন থেকেই পরিকল্পনামাফিক কাজ শুরু করেছে। বিএনপি প্রস্তুতি নিচ্ছে। ডে ওয়ান থেকে আমাদের পারফর্ম করতে হবে। এক কোটি মানুষকে চাকরি দেব, এটা আমরা হোমওয়ার্ক করেই বলেছি। দেশকে নিয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা মানুষের কাছে পৌঁছাতে হবে এবং তা বাস্তবায়ন করতে হবে।

বৈঠকে শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের রূপরেখা নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়। এক নেতা জানান, বিএনপি শিক্ষা বাজেট বাড়ানো, স্কুলেই কারিগরি ও ব্যবহারিক শিক্ষা চালু, আইটি ও আর্ট–কালচারসহ নানা বিষয়ে স্কিল ডেভেলপমেন্ট অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা করেছে। প্রাথমিক থেকে তৃতীয় ভাষা এবং হাইস্কুল থেকে চতুর্থ ভাষা শেখার সুযোগ তৈরি করা হবে, যার মধ্যে রয়েছে আরবি, জার্মান, ফরাসি, জাপানি ও চীনা ভাষা। ক্যাম্পাসে নিরাপদ পরিবেশ ও মেধাভিত্তিক ছাত্ররাজনীতি চালু, আবাসন সঙ্কট নিরসন এবং লাইব্রেরি আধুনিকায়নের প্রতিশ্রুতিও লিফলেটে থাকবে।

সূত্র জানায়, তরুণদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে প্রতিটি জেলায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প স্থাপনে অর্থায়নের পরিকল্পনা রয়েছে। এক লাখের বেশি ফ্রিল্যান্সারের নিরাপদ লেনদেন নিশ্চিত করতে পেপাল ও ওয়াইজ চালুর প্রতিশ্রুতি, ১৮ মাসে এক কোটি কর্মসংস্থান, পাঁচ বছরে পাঁচ কোটি গাছ রোপণ, নদী–খাল খননের উদ্যোগ, ৫০ লাখ ফ্যামিলি কার্ড এবং দুর্নীতি–চাঁদাবাজি দমনে বিশেষ পরিকল্পনা তুলে ধরা হবে লিফলেটে। পাশাপাশি স্বাস্থ্য, খাদ্য নিরাপত্তা, কৃষি, মানব উন্নয়ন, পরিবেশ ও টেকসই উন্নয়নসহ প্রতিটি সেক্টরের আলাদা রোডম্যাপও দেওয়া হবে।

সূত্র আরও জানায়, প্রতিহিংসার রাজনীতি পরিহার করে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্র গঠন, গত ১৫ বছরের অর্থপাচার–দুর্নীতির অনুসন্ধান, শ্বেতপত্র প্রকাশ এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার অঙ্গীকারও প্রচারে যুক্ত হবে। গুম–খুন–নির্যাতন বন্ধ করা এবং ‘ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার’ নীতির ভিত্তিতে সব ধর্মাবলম্বীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে বিএনপি। পাশাপাশি কূটনৈতিক সম্পর্কের প্রতিটি ক্ষেত্রে জাতীয় স্বার্থকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেওয়ার ঘোষণাও থাকবে লিফলেটে।

বৈঠকে অন্তত ৪০টি আসনে মনোনয়নবঞ্চিতদের বিক্ষোভ ও অসন্তোষ নিয়েও আলোচনা হয়। কিছু নেতা বলেন, বড় দল হিসেবে কিছু আসনে অসন্তোষ স্বাভাবিক হলেও কয়েকটি আসনে পুনর্বিবেচনা করা যেতে পারে। প্রয়োজন হলে চূড়ান্ত প্রতীক বণ্টনের সময় প্রার্থী পরিবর্তনের সম্ভাবনাও খোলা রাখা হয়েছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ইতোমধ্যে জানিয়েছেন, ঘোষিত তালিকা প্রাথমিক; প্রয়োজনে পরিবর্তন আসতে পারে।

দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী—বিএনপি এবার নির্বাচনকে সামনে রেখে আরও সংগঠিত, পরিকল্পিত ও লক্ষ্যনির্ভর প্রচারে নামছে।

 

জনপ্রিয় সংবাদ

প্রস্তুত তারেক রহমানের বাসভবন ও অফিস

তরুণ ও নারী ভোটারদের আকর্ষণ বাড়াতে বিশেষ কনটেন্ট তৈরির সিদ্ধান্ত নিল বিএনপি

আপডেট সময় ০৯:৩২:২১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৫

 

তরুণ ও নারী ভোটারদের আকর্ষণ বাড়াতে বিশেষ কনটেন্ট তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি।দলটির স্থায়ী কমিটির সর্বশেষ এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এছাড়াও বৈঠকে আসনভিত্তিক বিশেষ টিম গঠন, সেক্টরভিত্তিক অঙ্গীকার তৈরি এবং পৃথক লিফলেটের মাধ্যমে এসব পরিকল্পনা জনগণের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার ব্যাপারে সর্বসম্মত মত হয়। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলে কোন সেক্টরে কী ধরনের পরিবর্তন আনবে—সে বিষয়ে দলটি একটি সমন্বিত প্রচারনীতি গ্রহণ করছে।

সম্প্রতি গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, কেন্দ্রীয় ও অঙ্গ–সহযোগী সংগঠনের নেতাদের নিয়ে প্রতিটি আসনে আলাদা টিম গঠন করা হবে। দলটি রাষ্ট্র মেরামতে তাদের ৩১ দফা, শিক্ষা–কর্মসংস্থান–স্বাস্থ্য–কৃষি–শিল্প–ব্যবসা-বাণিজ্যসহ প্রতিটি খাতে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা আলাদা লিফলেট আকারে প্রচার করবে। তরুণ ও নারী ভোটারদের আকর্ষণ বাড়াতে বিশেষ কনটেন্ট তৈরি করা হবে। এসব লিফলেট দেশব্যাপী প্রতিটি ঘরে পৌঁছে দেওয়ার জন্য নেতাকর্মীদের বিশেষ নির্দেশনা থাকবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিএনপির মূল লক্ষ্য একটি স্থিতিশীল, সমৃদ্ধ ও সুখী বাংলাদেশ গড়ে তোলা, যেখানে নাগরিকরা ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে না। নিরাপদ জীবনযাপন করতে পারবে, ব্যক্তিগত মর্যাদা ও সম্মান বজায় থাকবে এবং প্রত্যেকে তার ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান স্বাধীনভাবে পালন করতে পারবেন। বিএনপি ইতোমধ্যে ভঙ্গুর অর্থনীতি পুনর্গঠন, জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা, নাজুক সামাজিক শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার, বিপুলসংখ্যক বেকার যুবকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং বিজ্ঞান-প্রযুক্তিনির্ভর কর্মমুখী শিক্ষা চালুর জন্য ব্যাপক কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে।

আমির খসরু বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে সারা দেশের মানুষের জন্য বিনামূল্যে প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা চালু করবে। এ লক্ষ্যে বিএনপি এখন থেকেই পরিকল্পনামাফিক কাজ শুরু করেছে। বিএনপি প্রস্তুতি নিচ্ছে। ডে ওয়ান থেকে আমাদের পারফর্ম করতে হবে। এক কোটি মানুষকে চাকরি দেব, এটা আমরা হোমওয়ার্ক করেই বলেছি। দেশকে নিয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা মানুষের কাছে পৌঁছাতে হবে এবং তা বাস্তবায়ন করতে হবে।

বৈঠকে শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের রূপরেখা নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়। এক নেতা জানান, বিএনপি শিক্ষা বাজেট বাড়ানো, স্কুলেই কারিগরি ও ব্যবহারিক শিক্ষা চালু, আইটি ও আর্ট–কালচারসহ নানা বিষয়ে স্কিল ডেভেলপমেন্ট অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা করেছে। প্রাথমিক থেকে তৃতীয় ভাষা এবং হাইস্কুল থেকে চতুর্থ ভাষা শেখার সুযোগ তৈরি করা হবে, যার মধ্যে রয়েছে আরবি, জার্মান, ফরাসি, জাপানি ও চীনা ভাষা। ক্যাম্পাসে নিরাপদ পরিবেশ ও মেধাভিত্তিক ছাত্ররাজনীতি চালু, আবাসন সঙ্কট নিরসন এবং লাইব্রেরি আধুনিকায়নের প্রতিশ্রুতিও লিফলেটে থাকবে।

সূত্র জানায়, তরুণদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে প্রতিটি জেলায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প স্থাপনে অর্থায়নের পরিকল্পনা রয়েছে। এক লাখের বেশি ফ্রিল্যান্সারের নিরাপদ লেনদেন নিশ্চিত করতে পেপাল ও ওয়াইজ চালুর প্রতিশ্রুতি, ১৮ মাসে এক কোটি কর্মসংস্থান, পাঁচ বছরে পাঁচ কোটি গাছ রোপণ, নদী–খাল খননের উদ্যোগ, ৫০ লাখ ফ্যামিলি কার্ড এবং দুর্নীতি–চাঁদাবাজি দমনে বিশেষ পরিকল্পনা তুলে ধরা হবে লিফলেটে। পাশাপাশি স্বাস্থ্য, খাদ্য নিরাপত্তা, কৃষি, মানব উন্নয়ন, পরিবেশ ও টেকসই উন্নয়নসহ প্রতিটি সেক্টরের আলাদা রোডম্যাপও দেওয়া হবে।

সূত্র আরও জানায়, প্রতিহিংসার রাজনীতি পরিহার করে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্র গঠন, গত ১৫ বছরের অর্থপাচার–দুর্নীতির অনুসন্ধান, শ্বেতপত্র প্রকাশ এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার অঙ্গীকারও প্রচারে যুক্ত হবে। গুম–খুন–নির্যাতন বন্ধ করা এবং ‘ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার’ নীতির ভিত্তিতে সব ধর্মাবলম্বীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে বিএনপি। পাশাপাশি কূটনৈতিক সম্পর্কের প্রতিটি ক্ষেত্রে জাতীয় স্বার্থকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেওয়ার ঘোষণাও থাকবে লিফলেটে।

বৈঠকে অন্তত ৪০টি আসনে মনোনয়নবঞ্চিতদের বিক্ষোভ ও অসন্তোষ নিয়েও আলোচনা হয়। কিছু নেতা বলেন, বড় দল হিসেবে কিছু আসনে অসন্তোষ স্বাভাবিক হলেও কয়েকটি আসনে পুনর্বিবেচনা করা যেতে পারে। প্রয়োজন হলে চূড়ান্ত প্রতীক বণ্টনের সময় প্রার্থী পরিবর্তনের সম্ভাবনাও খোলা রাখা হয়েছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ইতোমধ্যে জানিয়েছেন, ঘোষিত তালিকা প্রাথমিক; প্রয়োজনে পরিবর্তন আসতে পারে।

দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী—বিএনপি এবার নির্বাচনকে সামনে রেখে আরও সংগঠিত, পরিকল্পিত ও লক্ষ্যনির্ভর প্রচারে নামছে।