আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো হিন্দু ধর্মাবলম্বী একজনকে প্রার্থী করেছে জামায়াতে ইসলামী। খুলনার দাকোপ ও বটিয়াঘাটা নিয়ে গঠিত খুলনা–১ আসনে দলটি মনোনয়ন দিয়েছে কৃষ্ণ নন্দীকে, যিনি ডুমুরিয়া উপজেলা জামায়াতের হিন্দু কমিটির সভাপতি।
মনোনয়ন পাওয়ার পর কৃষ্ণ নন্দী বলেন, নির্বাচিত হলে শুধু খুলনা–১ নয়, সারা দেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব করতে চান তিনি। তার ভাষায়, ‘আমার মূল লক্ষ্য সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়া। আমি একজন হিন্দু হয়েও জামায়াত আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে—এটা আমার জন্য অত্যন্ত আনন্দের। দলের নিয়ম–কানুনের মধ্যেই আমি নির্বাচনী কার্যক্রম চালাব।’
এলাকা হিন্দু অধ্যুষিত হওয়ায় তিনি বিপুল ভোট পাওয়ার আশা প্রকাশ করেন। একইসঙ্গে জামায়াতের প্রার্থী হওয়ায় মুসলিম ভোটও সমানভাবে পাবেন বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।
হিন্দু প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়ে খুলনা জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মুন্সী মিজানুর রহমান জানান, দলটির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সব ধর্মের মানুষ সদস্য হতে এবং প্রার্থী হতে পারেন। এ ধারাবাহিকতায় হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও চাকমা সম্প্রদায়ের ব্যক্তিদের মনোনয়ন দেওয়ার চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি।
জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান এহসানুল মাহবুব জুবায়ের জানান, আরও কয়েকটি আসনে ভিন্ন ধর্মাবলম্বী প্রার্থী দেওয়ার সম্ভাবনা আছে। কিশোরগঞ্জসহ আরও কয়েকটি আসনে আলোচনা চলছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এই উদ্যোগকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন। তাদের মতে, জামায়াতে ইসলামী রাজনীতিতে একটি উদারনৈতিক ভাবমূর্তি গড়ার চেষ্টা করছে। বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘সংখ্যালঘু ভোটব্যাংক ব্যবহারের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ ও জামায়াতের রাজনীতিতে তেমন পার্থক্য নেই।’
গত ১ ডিসেম্বর খুলনার আট দলীয় সমাবেশে কৃষ্ণ নন্দীর প্রার্থিতা ঘোষণা করেন জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান। পরবর্তীতে স্থানীয় নেতাদের সভায় সর্বসম্মতিক্রমে তা অনুমোদন দেওয়া হয়।
২০০৩ সালে মাত্র এক হাজার টাকা দিয়ে জামায়াতে যোগ দেন কৃষ্ণ নন্দী। পেশায় ব্যবসায়ী নন্দী জানান, তিনি দীর্ঘদিন ধরে দলটির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত; তবে সরকারের নির্যাতন–নিপীড়নের কারণে হিন্দু সদস্যদের উপস্থিতি এতদিন প্রকাশ্যে আসেনি। তার দাবি, ‘জামায়াত চায় হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সবাই মিলেমিশে রাজনীতি করুক। সেই দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই তারা আমাকে প্রার্থী করেছে।’


























