ঢাকা-৭ আসনে বিএনপির মনোনয়ন ঘোষণাকে ঘিরে পুরান ঢাকার রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। সাবেক কেন্দ্রীয় যুবদল নেতা ইসহাক সরকার মনোনয়ন না পাওয়ায় ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন তাঁর কর্মী-সমর্থকরা। তাদের অভিযোগ—পুরান ঢাকার ত্যাগী, নির্যাতিত এবং বহু মামলার বোঝা বয়ে চলা নেতাদের সম্পূর্ণভাবে অবমূল্যায়ন করা হয়েছে।
দ্বিতীয় ধাপে ঘোষিত ৩৬টি আসনের তালিকায় ঢাকা-৭ এ ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক ছাত্রনেতা ও দক্ষিণ যুবদলের সাবেক সভাপতি, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হামিদুর রহমান। বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) বিকালে গুলশান কার্যালয়ে তালিকাটি ঘোষণা করেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মনোনয়ন ঘোষণার পর থেকেই পুরান ঢাকায় একের পর এক বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়, যেখানে ইসহাক সরকার নিজেও অংশ নেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বিএনপির একটি অংশ প্রতিবাদে সরব হয়ে ওঠে।
এ নিয়ে আবেগঘন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন ইসহাক সরকারের ছেলে ইশফাক সরকার। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে বাবার হ্যান্ডকাপ পরা ছবি পোস্ট করে তিনি লেখেন— “দল আমার বাবাকে ৩৬৫ মামলায় ২২ বছরের সাজার মূল্য দিলেন না… ১৮ বছরে একটা মামলাও খায়নি, একদিন জেলেও যায়নি। এমন লোককে নমিনেশন দিয়েছেন।” স্ট্যাটাসটি মুহূর্তেই ভাইরাল হয়, এবং বহু নেতা-কর্মী ইসহাকের প্রতি সমর্থন জানান। ইসহাক সরকারও সকালে নিজ আইডিতে পোস্টটি শেয়ার করে লেখেন— “আল্লাহ ভরসা।”
দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে ইসহাক সরকার বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার সংকটাপন্ন অবস্থায় বিএনপি যখন সব রাজনৈতিক কর্মসূচি স্থগিত রেখেছিল, ঠিক তখনই হঠাৎ করে মনোনয়ন ঘোষণা করা হলো। তাঁর প্রশ্ন—“দুই দিন পরে দিলেও হতো, তাহলে এই সংকটের মুহূর্তটিই কেন বেছে নেওয়া হলো?”
তিনি অভিযোগ করেন, পুরান ঢাকা আন্দোলন-সংগ্রামের ঘাঁটি; এখানে যারা বছরের পর বছর মামলা-মোকদ্দমা, জেল-জুলুম সহ্য করেছেন, তাদের বদলে এমন একজনকে প্রার্থী করা হয়েছে, যিনি ভোটারও নন কিংবা পরে হয়েছেন। গত ১৮ বছরে আন্দোলনের মাঠে তার উপস্থিতি দেখা যায়নি, কোনো মামলাও নেই।
ইসহাকের অভিযোগ—“এতে কি আবারও মাইনাস ফর্মুলার ছায়া দেখছি না? নির্যাতিতদের বাদ দিয়ে যারা ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে আঁতাত করে ব্যবসা করেছেন, তারাই নমিনেশন পাচ্ছেন। এতে নেতাকর্মীদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে।”
তিনি মনোনয়ন প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে বলেন, “হাইকমান্ড অবিলম্বে এই সিদ্ধান্ত বাতিল করে পুরান ঢাকার নির্যাতিত পরিবারগুলোর মধ্য থেকে কাউকে প্রার্থী করুক।”
তারেক রহমানের প্রতিও সরাসরি আবেদন জানিয়ে ইসহাক বলেন, “আপনি তিনটি মানদণ্ড দিয়েছিলেন—নির্যাতিত, মাঠে থাকা ও এলাকায় জনপ্রিয়—এই তিনটির কোনোটিই মানা হয়নি। তাই জনগণের চাপেই আমাদের কথা বলতে হচ্ছে।”




















