বিএনপির সঙ্গে দুই দশকের রাজনৈতিক সম্পর্কের অবসান ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ লেবার পার্টি। শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভা শেষে এই সিদ্ধান্ত জানানো হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন দলের চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান।
সভা শেষে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ২০০৬ সাল থেকে বিএনপির সমমনা জোট, ১৮ দল, ২০ দলীয় জোট এবং যুগপৎ আন্দোলনে নিবেদিত সহযোগী হিসেবে লেবার পার্টি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ডা. ইরানের গ্রেফতার, হামলা, মামলা, কারাজীবন এবং জুলাই আন্দোলনে দুই কর্মীর মৃত্যু উল্লেখ করে দলটি দাবি করে—তারা ছিল বিএনপির সবচেয়ে ‘বিশ্বস্ত ও ত্যাগী’ শরিক।
কিন্তু দীর্ঘ সম্পর্ক ভাঙার কারণ হিসেবে লেবার পার্টির নেতারা অভিযোগ করেন, বিএনপি জোটশরিকদের প্রতি অবজ্ঞা, অসম্মান ও ‘বেইমানিপূর্ণ আচরণ’ করে এসেছে। আন্দোলন, নির্বাচন ও সরকারগঠনে দেওয়া প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ এবং শরিকদের বাদ দিয়ে এককভাবে নির্বাচনে যাওয়ার প্রচেষ্টাকে তারা মূল কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন।
সভায় নেতারা আরও অভিযোগ করেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ‘চাঁদাবাজি, হত্যা মামলা ও দুর্নীতিতে জড়িত ব্যক্তিদের’ মনোনয়ন দিয়ে দলকে নৈতিকভাবে দুর্বল করেছেন। তাদের ভাষায়, মনোনয়ন প্রক্রিয়া পরিণত হয়েছে ‘টাকার বিনিময়ের বাণিজ্যে’। এতে বিএনপির রাজনৈতিক চরিত্র প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তারা।
লেবার পার্টির দাবি, বেগম খালেদা জিয়ার কঠিন সময়ে মিত্রদের পাশে রাখা তো দূরের কথা, বরং বিএনপি তাদের ধারাবাহিকভাবে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। জোটশরিক জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদের পর এখন ২০ দলীয় জোটকেও কার্যত ভেঙে ফেলা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তারা। ফলে বিএনপি নিজেকে ‘বন্ধুহীন ও নেতৃত্বহীন দলে পরিণত করেছে’ বলেও তারা অভিযোগ তোলেন।
সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হিসেবে নির্বাহী কমিটি জানায়—আজ থেকে লেবার পার্টি বিএনপির সঙ্গে সব ধরনের রাজনৈতিক সম্পর্ক, জোটগত সহযোগিতা ও ভবিষ্যৎ কর্মসূচি থেকে সরে দাঁড়াচ্ছে। দলটি এখন নিজস্ব আদর্শ, সাংগঠনিক শক্তি ও জনগণের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে রাষ্ট্র সংস্কার, বৈষম্যহীন সমাজ ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের লড়াই চালিয়ে যাবে।
সভায় ভাইস চেয়ারম্যান এস এম ইউসুফ আলী, অ্যাডভোকেট জোহরা খাতুন জুঁই, হিন্দুরত্ম রামকৃষ্ণ সাহা, মোসলেম উদ্দিন, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব খন্দকার মিরাজুল ইসলামসহ অন্যান্য নেতারা বক্তব্য রাখেন।


























