জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণাকে ইতিবাচক উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামের সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক সংসদ সদস্য মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেন, “সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথে আমরা প্রথম ধাপ অতিক্রম করেছি। তবে সামনে আরও বহু চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যা সাহসিকতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে।”
খুলনা-৫ আসনের জিরোপয়েন্ট এলাকায় বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) গণসংযোগ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মিয়া গোলাম পরওয়ার আরও বলেন, “নির্বাচনকে সুষ্ঠু করতে হলে সমান সুযোগ বা ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত করা জরুরি। প্রশাসনের সকল বিভাগে নিরপেক্ষতা বজায় রাখা এখনো চ্যালেঞ্জ। তফসিল ঘোষণা হলেই নির্বাচন নিরপেক্ষ হয়ে যাবে—এমনটা নয়। ডিসি, এসপি, ইউএনও, পোলিং ও প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা কাকে সহযোগিতা করবেন বা কোথাও পক্ষপাত করবেন কি না—এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।”
তিনি বলেন, আরপিও অনুযায়ী তফসিল ঘোষণার পর প্রশাসনের বদলি, পদায়নসহ সকল ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের অধীনে আসে। তাই নির্বাচনকে নিরপেক্ষ করার দায়িত্বও কমিশনের। ভোটারদের নিরাপদে কেন্দ্রে প্রবেশ, ভোট প্রদান ও নির্বিঘ্নে ফিরে যাওয়ার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। জাতীয় নির্বাচনে একজন ভোটারকে দুটি ভোট দিতে হয়, তাই প্রতিটি ভোট কাস্ট নিশ্চিত করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
“১৮ কোটি মানুষের গণআকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত করতে হলে সরকার, নির্বাচন কমিশন, রাজনৈতিক দল ও জনগণকে দৃঢ়ভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। তফসিল ঘোষণা নিয়ে উচ্ছ্বাস তখনই অর্থবহ হবে, যখন প্রশাসন মাঠপর্যায়ে নিরপেক্ষ থাকবে, চাঁদাবাজ-সন্ত্রাসীরা ভোটকেন্দ্রে হুমকি দিতে পারবে না এবং উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট প্রদান নিশ্চিত হবে,” যোগ করেন তিনি।
মিয়া গোলাম পরওয়ার নির্বাচন কমিশন ও দুর্নীতি দমন কমিশনের ভূমিকাকেও গুরুত্ব দেন। তিনি বলেন, “দুদক চেয়ারম্যান দুর্নীতিবাজদের ভোট না দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। দুর্নীতিকে লাল কার্ড দেখাতে হবে। তফসিল ঘোষণার পরবর্তী প্রতিটি ধাপে ইসি যেন সাহসিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে—এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করছি। কোনো দলের দিকে নয়, গণতন্ত্র ও ভোটারদের আকাঙ্ক্ষার দিকে তাকিয়ে কমিশনকে কাজ করতে হবে।”
দিনব্যাপী গণসংযোগ কর্মসূচির অংশ হিসেবে সকাল ১১টায় তিনি কাঁঠালতলা বাজারে জনসংযোগ করেন এবং মঠবাড়ীয়া কওমি মাদরাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও স্থানীয় জনসাধারণের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এ ছাড়াও দুপুরে ডুমুরিয়া উপজেলার কুলবাড়িয়া এলাকায় আজিজুর ইসলামের ইটভাটায় মালিক–শ্রমিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইটভাটা মালিক সমিতির প্রধান উপদেষ্টা আবদুল লতিফ জমাদ্দার।
সভায় উপস্থিত ছিলেন খুলনা জেলা জামায়াতে ইসলামের সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস, কর্মপরিষদ সদস্য এডভোকেট আবু ইউসুফ মোল্লা, ডুমুরিয়া উপজেলার আমীর মাওলানা মোক্তার হোসেন, নায়েবে আমীর মাওলানা হাবিবুর রহমান, গাজী সাইফুল্লাহ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সভাপতি মাওলানা ওমর আলী, খেলাফত মজলিসের সভাপতি মাওলানা আবু সাঈদ আহমদ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সাধারণ সম্পাদক মুফতি আবদুল কাইয়ুম জমাদ্দার, বিভিন্ন রাজনীতিক, ধর্মীয় নেতা, ইটভাটা মালিক ও স্থানীয় গণ্যমান্যরা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, “সংবিধান অনুযায়ী প্রতি পাঁচ বছর পর ৩০০ আসনে ভোটের মাধ্যমে জাতীয় সংসদ গঠিত হয়। বর্তমান অন্যায় আইন-শাসনের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, দরিদ্র মানুষের জীবন-জীবিকা কঠিন হয়ে পড়ছে। কুরআন ও সুন্নাহভিত্তিক সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হলে দেশ উপকৃত হবে। তাই ইসলামী দলের প্রতিনিধিরা সংসদে গেলে কল্যাণ রাষ্ট্র গড়া সম্ভব।”
তিনি জানান, নতুন বাংলাদেশের আটটি ইসলামী দল আগামী নির্বাচনে সমঝোতার ভিত্তিতে প্রতিটি আসনে একজন প্রার্থী দেবেন। ২০০১ সালের নির্বাচনে দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে জয়ী হওয়ায় আবারও একই প্রতীকে সমর্থন চান। তিনি বলেন, “আমরা কাউকে জান্নাতের টিকিট বিক্রি করি না। আল্লাহ ও তাঁর প্রেরিত নবীর বাণীর ভিত্তিতে ন্যায়-অন্যায়ের পথ মানুষকে জানাই—এটাই আমাদের দায়িত্ব।”




















