ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা-৮ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আগামীকাল সোমবার থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে নেওয়ার প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এ জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তার ভাই ওমর বিন হাদি।

রোববার বিকেলে তিনি গণমাধ্যমকে জানান, হাদিকে সোমবার সকালেই ব্যাংককে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং এতে প্রায় ৫২ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, সরকার এ বিষয়ে তাদের পরিবারকে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করছে।

পরিবারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, যদিও এর আগে হাদিকে সিঙ্গাপুরে নেওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছিল এবং সরকারও সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেছিল, তবে পরবর্তীতে পরিবারের ইচ্ছায় চিকিৎসার গন্তব্য পরিবর্তন করে থাইল্যান্ডের ব্যাংকক নির্ধারণ করা হয়।

এর আগে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, হাদিকে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করানোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল এবং একটি বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাকে সেখানে পাঠানোর পরিকল্পনা ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত ব্যাংককে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

হাদির গুরুতর শারীরিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আশ্বাস দেন, প্রয়োজন হলে তাকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হবে এবং চিকিৎসা সংক্রান্ত সব খরচ সরকার বহন করবে। তবে সব সিদ্ধান্তই চিকিৎসকদের অনুমোদনের ভিত্তিতে নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।

এদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের চিকিৎসক ও অস্ত্রোপচার দলের অন্যতম সদস্য ডা. আব্দুল আহাদ রোববার দুপুরে জানান, শরিফ ওসমান হাদি এখনও আশঙ্কামুক্ত নন। তাকে বিদেশে নেওয়ার বিষয়টি চিকিৎসকদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।

উল্লেখ্য, শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হাদির প্রয়োজনীয় সার্জিক্যাল অপারেশন সফলভাবে সম্পন্ন হয়। অপারেশনের পর উন্নত চিকিৎসা ও নিবিড় পর্যবেক্ষণের জন্য তাকে এভারকেয়ার হাসপাতাল ঢাকার ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে স্থানান্তর করা হয়।

রোববার সকালে পুনরায় করা সিটি স্ক্যানে দেখা যায়, হাদির মস্তিষ্কের ফোলা (সেরিব্রাল ইডিমা) আগের তুলনায় আরও বেড়েছে, যা চিকিৎসকদের মতে একটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক পরিস্থিতি। মেডিকেল বোর্ড জানিয়েছে, তার ব্রেন স্টেমে আঘাত ও অতিরিক্ত চাপের কারণে রক্তচাপে ওঠানামা হচ্ছে এবং হৃদস্পন্দন স্বাভাবিকের তুলনায় কিছুটা বেশি।

চিকিৎসকরা জানান, রোগীর ফুসফুসের কার্যকারিতা ও মেকানিক্যাল ভেন্টিলেটরের অবস্থা বর্তমানে স্থিতিশীল রয়েছে এবং চেস্ট ড্রেইন টিউব সচল আছে। কিডনির কার্যক্ষমতাও আপাতত বজায় থাকলেও ব্রেন ইনজুরির কারণে হরমোনজনিত ভারসাম্যহীনতা দেখা দিয়েছে, যা প্রস্রাবের পরিমাণে প্রভাব ফেলছে। এ কারণে এসিড-বেস ব্যালেন্স, ফ্লুইড ও ইলেক্ট্রোলাইট নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

মেডিকেল বোর্ডের ভাষ্য অনুযায়ী, রক্ত জমাট বাঁধা ও রক্তক্ষরণের ভারসাম্যহীনতা অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। পাশাপাশি ব্লাড সুগারও নিবিড়ভাবে মনিটর করা হচ্ছে।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, হাদির সার্বিক অবস্থা এখনও সংকটাপন্ন এবং অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। তবে সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব ও সতর্কতার সঙ্গে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।