ঢাকা ১০:৪৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫, ৫ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামূলক প্রস্তুতি: বিমান ও জাহাজ সরানো হচ্ছে

  • ডেস্ক রিপোর্টঃ
  • আপডেট সময় ০৪:৩৪:৫৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫
  • ৫৬৮ বার পড়া হয়েছে

ইরান-ইসরায়েল পাল্টাপাল্টি হামলার মধ্যেই ইরানকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের তৎপরতা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। দুই মার্কিন কর্মকর্তা বুধবার নিশ্চিত করেছেন, সম্ভাব্য ইরানি হামলার আশঙ্কায় যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যের কিছু ঘাঁটি থেকে যুদ্ধবিমান ও নৌযান প্রত্যাহার করেছে।

এই পদক্ষেপ এমন সময় এলো, যখন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এখনো স্পষ্টভাবে জানাননি—যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের সঙ্গে যৌথভাবে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় সরাসরি হামলায় অংশ নেবে কি না।

সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউস এখনো ইরান হামলার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি, তবে সপ্তাহান্তেই হামলার সম্ভাবনা রয়েছে। হোয়াইট হাউসের সিনিয়র কর্মকর্তারা এরই মধ্যে জরুরি প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানিয়েছে ব্লুমবার্গ।

সাংবাদিকদের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত আলাপের সময় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, ‘আমি এটা করতে পারি, আবার না-ও করতে পারি। কেউই জানে না আমি কী করব।’

এদিকে, বৃহস্পতিবার কাতারের মার্কিন দূতাবাস কর্মীদের জন্য সতর্কবার্তা জারি করেছে। আল-উদেইদ বিমানঘাঁটিতে প্রবেশ সীমিত করা হয়েছে। একইসঙ্গে, বাহরাইনের মার্কিন নৌঘাঁটি থেকেও যুদ্ধজাহাজ প্রত্যাহার করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্মকর্তা জানান, যেসব যুদ্ধবিমান শেল্টারবিহীন অবস্থায় ছিল, সেগুলো সরানো হয়েছে। তবে সুনির্দিষ্টভাবে কতগুলো সরানো হয়েছে, সে তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।

রয়টার্সের তথ্যমতে, ইউরোপে মোতায়েন করা হয়েছে বিপুলসংখ্যক ট্যাংকার বিমান, এবং মধ্যপ্রাচ্যে অতিরিক্ত সামরিক সরঞ্জাম পাঠানো হচ্ছে। এদিকে, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল থেকে একটি মার্কিন এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারও রওনা দিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দিকে।

ইসরায়েল শুক্রবার থেকে ইরানে ধারাবাহিক বিমান হামলা শুরু করেছে। বুধবার জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানি রাষ্ট্রদূত হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি জড়িত হলে, ইরান কঠোর জবাব দেবে।’

ইসরায়েল আরাক শহরে অবস্থিত ইরানের খন্দাব ভারী পানির চুল্লিতে হামলা চালিয়েছে। এই স্থাপনা প্লুটোনিয়াম উৎপাদনের সক্ষমতা রাখে—যা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে ব্যবহৃত হতে পারে। হামলার আগে কেন্দ্রটি খালি করা হয়েছিল বলে জানিয়েছে তেহরান, ফলে বিকিরণ ঝুঁকি নেই।

এপি জানায়, এই চুল্লি আনুষ্ঠানিকভাবে ‘ডিউটেরিয়াম অক্সাইড’ দ্বারা শীতল হয় এবং আগামী বছর চালু করার পরিকল্পনা ছিল তেহরানের।

ইরান পাল্টা হামলায় দক্ষিণ ইসরায়েলের বির শেবা ও তেল আবিব লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে। বির শেবায় ক্ষেপণাস্ত্র আঘাতে অন্তত ৩০ জন আহত হন, দুইজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। সরোকা হাসপাতাল আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিস্ফোরণের তরঙ্গে।

তেল আবিবে হামলার লক্ষ্য ছিল ইসরায়েলি স্টক এক্সচেঞ্জ ভবন। বিস্ফোরণে ভবনের একাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইরানি মিডিয়া দাবি করেছে, লক্ষ্যবস্তু ছিল একটি ‘সংবেদনশীল’ সামরিক স্থাপনা—যা হাসপাতালের পাশে অবস্থিত।

মধ্যপ্রাচ্যে দ্রুত পরিবর্তনশীল পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র একদিকে সামরিক রক্ষণশীলতা বজায় রাখছে, অন্যদিকে আক্রমণাত্মক কৌশলের পথও খোলা রেখেছে। ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ বাস্তবায়িত হলে, সরাসরি জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা ক্রমেই বাড়ছে যুক্তরাষ্ট্রের।

পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রয়েছে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক পারমাণবিক সংস্থা (IAEA)। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি এখন হোয়াইট হাউসের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ও ইরানের পরবর্তী জবাবের দিকে।

তথ্যসূত্র: ব্লুমবার্গ, রয়টার্স, এপি, আইএসএনএ, আলজাজিরা

জনপ্রিয় সংবাদ

ইরানের হামলায় কাঁপছে নেতানিয়াহুর দেশ, ‘হৃদপিণ্ডে’ আঘাত বলছেন ইসরায়েলি বিশ্লেষক

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামূলক প্রস্তুতি: বিমান ও জাহাজ সরানো হচ্ছে

আপডেট সময় ০৪:৩৪:৫৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫

ইরান-ইসরায়েল পাল্টাপাল্টি হামলার মধ্যেই ইরানকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের তৎপরতা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। দুই মার্কিন কর্মকর্তা বুধবার নিশ্চিত করেছেন, সম্ভাব্য ইরানি হামলার আশঙ্কায় যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যের কিছু ঘাঁটি থেকে যুদ্ধবিমান ও নৌযান প্রত্যাহার করেছে।

এই পদক্ষেপ এমন সময় এলো, যখন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এখনো স্পষ্টভাবে জানাননি—যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের সঙ্গে যৌথভাবে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় সরাসরি হামলায় অংশ নেবে কি না।

সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউস এখনো ইরান হামলার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি, তবে সপ্তাহান্তেই হামলার সম্ভাবনা রয়েছে। হোয়াইট হাউসের সিনিয়র কর্মকর্তারা এরই মধ্যে জরুরি প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানিয়েছে ব্লুমবার্গ।

সাংবাদিকদের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত আলাপের সময় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, ‘আমি এটা করতে পারি, আবার না-ও করতে পারি। কেউই জানে না আমি কী করব।’

এদিকে, বৃহস্পতিবার কাতারের মার্কিন দূতাবাস কর্মীদের জন্য সতর্কবার্তা জারি করেছে। আল-উদেইদ বিমানঘাঁটিতে প্রবেশ সীমিত করা হয়েছে। একইসঙ্গে, বাহরাইনের মার্কিন নৌঘাঁটি থেকেও যুদ্ধজাহাজ প্রত্যাহার করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্মকর্তা জানান, যেসব যুদ্ধবিমান শেল্টারবিহীন অবস্থায় ছিল, সেগুলো সরানো হয়েছে। তবে সুনির্দিষ্টভাবে কতগুলো সরানো হয়েছে, সে তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।

রয়টার্সের তথ্যমতে, ইউরোপে মোতায়েন করা হয়েছে বিপুলসংখ্যক ট্যাংকার বিমান, এবং মধ্যপ্রাচ্যে অতিরিক্ত সামরিক সরঞ্জাম পাঠানো হচ্ছে। এদিকে, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল থেকে একটি মার্কিন এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারও রওনা দিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দিকে।

ইসরায়েল শুক্রবার থেকে ইরানে ধারাবাহিক বিমান হামলা শুরু করেছে। বুধবার জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানি রাষ্ট্রদূত হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি জড়িত হলে, ইরান কঠোর জবাব দেবে।’

ইসরায়েল আরাক শহরে অবস্থিত ইরানের খন্দাব ভারী পানির চুল্লিতে হামলা চালিয়েছে। এই স্থাপনা প্লুটোনিয়াম উৎপাদনের সক্ষমতা রাখে—যা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে ব্যবহৃত হতে পারে। হামলার আগে কেন্দ্রটি খালি করা হয়েছিল বলে জানিয়েছে তেহরান, ফলে বিকিরণ ঝুঁকি নেই।

এপি জানায়, এই চুল্লি আনুষ্ঠানিকভাবে ‘ডিউটেরিয়াম অক্সাইড’ দ্বারা শীতল হয় এবং আগামী বছর চালু করার পরিকল্পনা ছিল তেহরানের।

ইরান পাল্টা হামলায় দক্ষিণ ইসরায়েলের বির শেবা ও তেল আবিব লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে। বির শেবায় ক্ষেপণাস্ত্র আঘাতে অন্তত ৩০ জন আহত হন, দুইজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। সরোকা হাসপাতাল আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিস্ফোরণের তরঙ্গে।

তেল আবিবে হামলার লক্ষ্য ছিল ইসরায়েলি স্টক এক্সচেঞ্জ ভবন। বিস্ফোরণে ভবনের একাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইরানি মিডিয়া দাবি করেছে, লক্ষ্যবস্তু ছিল একটি ‘সংবেদনশীল’ সামরিক স্থাপনা—যা হাসপাতালের পাশে অবস্থিত।

মধ্যপ্রাচ্যে দ্রুত পরিবর্তনশীল পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র একদিকে সামরিক রক্ষণশীলতা বজায় রাখছে, অন্যদিকে আক্রমণাত্মক কৌশলের পথও খোলা রেখেছে। ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ বাস্তবায়িত হলে, সরাসরি জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা ক্রমেই বাড়ছে যুক্তরাষ্ট্রের।

পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রয়েছে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক পারমাণবিক সংস্থা (IAEA)। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি এখন হোয়াইট হাউসের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ও ইরানের পরবর্তী জবাবের দিকে।

তথ্যসূত্র: ব্লুমবার্গ, রয়টার্স, এপি, আইএসএনএ, আলজাজিরা