ঢাকা ০৩:৫১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২১ জুন ২০২৫, ৬ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ইসরায়েলের সমালোচনায় মুখর ইউরোপের ৯ দেশ, ক্ষোভ জানালেন রাষ্ট্রপ্রধানরা

  • ডেস্ক রিপোর্টঃ
  • আপডেট সময় ১১:০৫:৩৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫
  • ৫২৮ বার পড়া হয়েছে

গাজায় চলমান রক্তাক্ত আগ্রাসন এবং পশ্চিম তীরে অবৈধ বসতি স্থাপনের ঘটনায় এবার সরাসরি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিল ইউরোপের নয়টি দেশ। যুদ্ধের অষ্টম মাসে গড়িয়ে যাওয়া এই সংঘাতে প্রায় ৫১ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠই নারী ও শিশু। এই প্রেক্ষাপটে, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও আইনের লঙ্ঘনের অভিযোগে এবার কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক চাপের মুখে পড়তে চলেছে তেলআবিব।

বৃহস্পতিবার (২০ জুন) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এবং বার্তাসংস্থা রয়টার্সের বরাতে জানা গেছে, বেলজিয়াম, ফিনল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, লুক্সেমবার্গ, পোল্যান্ড, পর্তুগাল, স্লোভেনিয়া, স্পেন ও সুইডেন—এই ৯টি ইউরোপীয় দেশ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কঠোর বাণিজ্য পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে

এক গোপন কূটনৈতিক চিঠিতে এসব দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা ইউরোপীয় কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, যেন তারা অধিকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চলে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনের সঙ্গে যুক্ত পণ্য ও পরিষেবার বাণিজ্য বন্ধে প্রস্তাব তৈরি করে।

চিঠিতে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (ICJ) একটি মতামতে বলা হতে পারে—ফিলিস্তিনের ভূমিতে বসতি স্থাপন অবৈধ এবং তা বন্ধে বাণিজ্যিক সম্পর্ক পর্যালোচনার প্রয়োজন রয়েছে। এ ছাড়া, ইসরায়েলের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ৪২.৬ বিলিয়ন ইউরোর পণ্য বাণিজ্যের মধ্যে কতটা অংশ এই অবৈধ বসতির সঙ্গে জড়িত, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন নেতারা।

বেলজিয়ামের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ম্যাক্সিম প্রিভোট বলেন,

“বাণিজ্য আমাদের আইনি ও নৈতিক দায়বদ্ধতা থেকে বিচ্ছিন্ন হতে পারে না। ইউরোপকে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে, তাদের নীতিগুলো কোনো অবৈধ স্থিতিকে সমর্থন না করে।”

চিঠিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়—এখনও পর্যন্ত ইউরোপীয় কমিশন অবৈধ বসতি সংক্রান্ত বাণিজ্য বন্ধে কোনো কার্যকর প্রস্তাব দেয়নি। তাই পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা একযোগে বলছেন,

“ইউরোপীয় ইউনিয়নের উচিত এখনই এমন পদক্ষেপ নেওয়া, যা আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকারের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ।”

এই প্রস্তাব এসেছে এমন এক সময়, যখন ইসরায়েল সরকার অধিকৃত পশ্চিম তীরে নতুন করে ২২টি অবৈধ বসতি স্থাপন করার ঘোষণা দিয়েছে। এসব বসতির মধ্যে কিছু ‘আউটপোস্ট’ ইতোমধ্যেই অনুমোদন ছাড়াই গড়ে উঠেছে। এমন পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইসরায়েল আরও একঘরে হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

আগামী ২৩ জুন বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্মূল্যায়নের বিষয়টি আলোচনার জন্য তালিকাভুক্ত রয়েছে।

গাজার গণহত্যা ও পশ্চিম তীর দখলের প্রশ্নে এবার ইউরোপ শুধু মৌখিক নিন্দা নয়—প্রতিচ্ছবি দেখাতে চলেছে অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক বাস্তবতায়। এই চাপ সামলানো ইসরায়েলের জন্য সহজ হবে না বলেই মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা।

সূত্র:

  • আল জাজিরা

  • রয়টার্স

জনপ্রিয় সংবাদ

“জামায়াতকে একবার সুযোগ দিন”—রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যাওয়ার আহ্বান নায়েবে আমিরের

ইসরায়েলের সমালোচনায় মুখর ইউরোপের ৯ দেশ, ক্ষোভ জানালেন রাষ্ট্রপ্রধানরা

আপডেট সময় ১১:০৫:৩৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫

গাজায় চলমান রক্তাক্ত আগ্রাসন এবং পশ্চিম তীরে অবৈধ বসতি স্থাপনের ঘটনায় এবার সরাসরি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিল ইউরোপের নয়টি দেশ। যুদ্ধের অষ্টম মাসে গড়িয়ে যাওয়া এই সংঘাতে প্রায় ৫১ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠই নারী ও শিশু। এই প্রেক্ষাপটে, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও আইনের লঙ্ঘনের অভিযোগে এবার কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক চাপের মুখে পড়তে চলেছে তেলআবিব।

বৃহস্পতিবার (২০ জুন) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এবং বার্তাসংস্থা রয়টার্সের বরাতে জানা গেছে, বেলজিয়াম, ফিনল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, লুক্সেমবার্গ, পোল্যান্ড, পর্তুগাল, স্লোভেনিয়া, স্পেন ও সুইডেন—এই ৯টি ইউরোপীয় দেশ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কঠোর বাণিজ্য পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে

এক গোপন কূটনৈতিক চিঠিতে এসব দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা ইউরোপীয় কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, যেন তারা অধিকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চলে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনের সঙ্গে যুক্ত পণ্য ও পরিষেবার বাণিজ্য বন্ধে প্রস্তাব তৈরি করে।

চিঠিতে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (ICJ) একটি মতামতে বলা হতে পারে—ফিলিস্তিনের ভূমিতে বসতি স্থাপন অবৈধ এবং তা বন্ধে বাণিজ্যিক সম্পর্ক পর্যালোচনার প্রয়োজন রয়েছে। এ ছাড়া, ইসরায়েলের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ৪২.৬ বিলিয়ন ইউরোর পণ্য বাণিজ্যের মধ্যে কতটা অংশ এই অবৈধ বসতির সঙ্গে জড়িত, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন নেতারা।

বেলজিয়ামের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ম্যাক্সিম প্রিভোট বলেন,

“বাণিজ্য আমাদের আইনি ও নৈতিক দায়বদ্ধতা থেকে বিচ্ছিন্ন হতে পারে না। ইউরোপকে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে, তাদের নীতিগুলো কোনো অবৈধ স্থিতিকে সমর্থন না করে।”

চিঠিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়—এখনও পর্যন্ত ইউরোপীয় কমিশন অবৈধ বসতি সংক্রান্ত বাণিজ্য বন্ধে কোনো কার্যকর প্রস্তাব দেয়নি। তাই পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা একযোগে বলছেন,

“ইউরোপীয় ইউনিয়নের উচিত এখনই এমন পদক্ষেপ নেওয়া, যা আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকারের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ।”

এই প্রস্তাব এসেছে এমন এক সময়, যখন ইসরায়েল সরকার অধিকৃত পশ্চিম তীরে নতুন করে ২২টি অবৈধ বসতি স্থাপন করার ঘোষণা দিয়েছে। এসব বসতির মধ্যে কিছু ‘আউটপোস্ট’ ইতোমধ্যেই অনুমোদন ছাড়াই গড়ে উঠেছে। এমন পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইসরায়েল আরও একঘরে হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

আগামী ২৩ জুন বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্মূল্যায়নের বিষয়টি আলোচনার জন্য তালিকাভুক্ত রয়েছে।

গাজার গণহত্যা ও পশ্চিম তীর দখলের প্রশ্নে এবার ইউরোপ শুধু মৌখিক নিন্দা নয়—প্রতিচ্ছবি দেখাতে চলেছে অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক বাস্তবতায়। এই চাপ সামলানো ইসরায়েলের জন্য সহজ হবে না বলেই মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা।

সূত্র:

  • আল জাজিরা

  • রয়টার্স