ঢাকা ০৩:৫৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৯ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন

নির্বাচনের আগেই সংবিধান সংস্কারের চিন্তা সরকারের

  • ডেস্ক রিপোর্টঃ
  • আপডেট সময় ১০:৩৬:৩৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • ৫২৯ বার পড়া হয়েছে

সাংবিধানিক সংস্কার কার্যকরে আগামী ফেব্রুয়ারিতে সংসদ নির্বাচনের আগেই জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন করতে চায় অন্তর্বর্তী সরকার। অন্যান্য সংস্কারের ফয়সালা হলেও, বিশেষ সাংবিধানিক আদেশে সংসদের বাইরে সংবিধান সংশোধন বৈধ কিনা– এ প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর পরস্পরবিরোধী অবস্থানের কারণে নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। তাই সংবিধান সংস্কারের বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক ঐকমত্য না হলে সাংবিধানিক আদেশের পথে যেতে পারে সরকার। সরকার এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সূত্র সমকালকে এসব তথ্য জানিয়েছে। সনদের বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে গত বৃহস্পতিবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের পর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করে ঐকমত্য কমিশন। প্রধান উপদেষ্টা এই কমিশনের সভাপতি। যমুনায় বৈঠকে তিন উপদেষ্টা এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাও ছিলেন।সংসদের বাইরে সংবিধান সংশোধনকে অবৈধ মনে করে বিএনপি। তারা সাংবিধানিক আদেশের ঘোর বিরোধী। জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলনসহ কয়েকটি দল সংবিধানের সংস্কার ছাড়া সনদে সইয়ে রাজি নয়। যমুনা এবং কমিশন সূত্র সমকালকে জানিয়েছে, রাজনৈতিক ঐকমত্য না থাকায় নির্বাচনের আগে সনদ বাস্তবায়ন অনিশ্চিত। সনদ না হলে জামায়াতসহ কয়েকটি দল নির্বাচন বর্জন করবে। ফলে নিশ্চিতভাবেই ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে না। নির্বাচন না হলে রাজনৈতিক সংকট ও অস্থিরতা দেখা দেবে, যা সামাল দেওয়া সরকারের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়বে। তাই নির্বাচনের স্বার্থে সনদ বাস্তবায়ন জরুরি।  এ জন্য রাজনৈতিক ⁠সমঝোতা প্রয়োজন। সমঝোতা না হলে সরকারকে সনদ বাস্তবায়নে শক্ত অবস্থান ও দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে।  বৈঠকে কী আলোচনা হয়েছে– প্রশ্নে কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ সমকালকে বলেছেন, সরকারপ্রধানকে পুরো পরিস্থিতি জানানো হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান ও মতামত, বিশেষজ্ঞ প্যানেলের পরামর্শ সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে। সনদ বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। গণভোট এবং সাংবিধানিক আদেশ নিয়েও কথা বলেছেন। প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচন সামনে রেখে অবশ্যই মৌলিক সংস্কার চূড়ান্ত করতে নির্দেশ দিয়েছেন। বৈঠকে উপস্থিত একজন উপদেষ্টা এবং ঐকমত্য কমিশন-সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তি সমকালকে জানিয়েছেন, প্রধান উপদেষ্টা সনদ বাস্তবায়নে রাজনৈতিক সমঝোতা চেয়েছিলেন। সব দলের মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কাজটি করে তিনি ভারসাম্য রক্ষা করতে চেয়েছিলেন। সনদের বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে ঐকমত্য সম্ভব নয়– তা প্রায় নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় প্রধান উপদেষ্টাকে শক্ত হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এতে তিনি রাজি হয়েছেন। রোববার রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপে তিনিও যোগ দিতে পারেন। যদি সেখানে ঐকমত্য না হয়, তবে সরকার বিশেষ সাংবিধানিক আদেশ জারির মাধ্যমে সংস্কার কার্যকরের পথে যেতে পারে। বিএনপির আপত্তিই সরকারের জন্য বাধা
বিএনপি সাংবিধানিক আদেশের মাধ্যমে সংবিধান সংশোধনের বিরোধী। দলটির অবস্থান হলো, নির্বাচিত সংসদ ছাড়া কারও সংবিধানের পরিবর্তন আনার ক্ষমতা নেই। যেসব সংস্কারের জন্য সংবিধানে পরিবর্তন প্রয়োজন নেই, সেগুলো অধ্যাদেশে বা নির্বাহী আদেশে নির্বাচনের আগে বাস্তবায়ন করতে পারবে সরকার। সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের মতামতে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের মাধ্যমে সাংবিধানিক ধারবাহিকতা অক্ষুণ্ন থাকায়, সাংবিধানিক আদেশ জারির ক্ষমতা নেই বর্তমান সরকারের। জামায়াতের ভাষ্য, অন্তর্বর্তী সরকার ১০৬ অনুচ্ছেদ নয়, জনগণের অভিপ্রায়ে সংবিধানের ৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী গঠিত হয়েছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তিতেই শেখ হাসিনার পতন হয় ৫ আগস্ট। পরের তিন দিন দেশে সরকার ছিল না। যা কিছু হয়েছে ওই সময়ে তা জনগণের অভিপ্রায় অনুযায়ী হয়েছে। এই অভিপ্রায়েই সংবিধানে কোনো সুযোগ না থাকার পরও অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে। জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের সমকালকে বলেছেন, বিদ্যমান সংবিধানে, সাংবিধানিক আদেশ জারির ক্ষমতা না দেওয়া হলেও জনগণের অভিপ্রায়ে তা হতে পারে। এই ক্ষমতা সরকারের রয়েছে। সাংবিধানিক আদেশ জারিকে কেউ অবৈধ বললে তো সরকারও অবৈধ। এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন, এবি পার্টিরও অবস্থান জামায়াতের কাছাকাছি। ঐকমত্য কমিশন বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সঙ্গে দুই দফা বৈঠকে সনদ বাস্তবায়নে গণভোট ও সাংবিধানিক আদেশের পরামর্শ পেয়েছে। গণভোট আয়োজন জটিল এবং ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় বিশেষজ্ঞরা সাংবিধানিক আদেশকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। যমুনায় বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টাকে এটি জানানো হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা গত জুনে সংলাপে বলেছিলেন, সংস্কারের যেসব সুপারিশে ঐকমত্য হবে, সেগুলোই বাস্তবায়ন করা হবে। কিছু নির্বাচনের আগে এবং বাকিগুলো পরবর্তী সরকার বাস্তবায়ন করবে। গত বৃহস্পতিবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, তারা প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যকেই সমর্থন করছেন। রাজনৈতিক দলগুলো সনদে স্বাক্ষরের মাধ্যমে সংস্কারের অঙ্গীকার করবে। যে দলই ক্ষমতায় যাক, আগামী সংসদ তা দুই বছরের মধ্যে বাস্তবায়ন করবে। সংবিধান পরিবর্তন হয় এমন কাজের ক্ষমতা সংসদ ছাড়া কারও নেই।কমিশন সূত্র জানিয়েছে, প্রধান উপদেষ্টা আগের অবস্থান থেকে সরে এসেছেন। তিনি মনে করেন, শুধু রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের ওপর সংস্কার ছেড়ে দেওয়া যাবে না। মৌলিক সংস্কার কার্যকরে নির্বাচনের আগেই সনদ বাস্তবায়ন করতে হবে। এর মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকার তার দায়িত্ব পালন করবে। ভবিষ্যতে কোনো দল ক্ষমতায় গিয়ে এসব সংস্কার পাল্টে ফেলে, এর জন্য তারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে।বৈঠকে উপস্থিত একাধিক ব্যক্তি সমকালকে বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টার মনোভাবে পরিবর্তন এলেও বিএনপির আপত্তির কারণে তিনি এতে অটল থাকতে পারবেন কিনা, তাতে সংশয় রয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা গণভোটেও আগ্রহী। এর ভালো-মন্দ তাঁকে বলা হয়েছে। বোঝানো হয়েছে, বিএনপি আপত্তি করলেও সাংবিধানিক আদেশ ছাড়া উপায় নেই। অন্যদের অনড় অবস্থানে বিপাকে সনদে রাজনৈতিক দলগুলোর সংখ্যাগরিষ্ঠতায় সংস্কারের ৮৪ সিদ্ধান্ত রয়েছে। এর ৩৪টি সংস্কার বাস্তবায়নে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। এগুলো বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে আপত্তি রয়েছে। এসব সংস্কারের  মধ্যে পিআর পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ গঠন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের পদ্ধতিসহ কয়েকটি বিষয়ে বিএনপির নোট অব ডিসেন্ট (আপত্তি) রয়েছে। তারা জানিয়েছে, ক্ষমতায় গেলে এগুলো বাস্তবায়ন করবে না। উচ্চকক্ষে পিআর মেনে নিতে প্রধান উপদেষ্টাও অনুরোধ করেছিলেন বিএনপিকে। তবে দলটি রাজি হয়নি। বিপরীতে জামায়াত সাংবিধানিক আদেশ এবং গণভোটের মাধ্যমে নির্বাচনের আগেই সনদের ৮৪ সংস্কার বাস্তবায়ন চায়। একই অবস্থান ইসলামী আন্দোলনের। তারাও জুলাই সনদের অধীনে নির্বাচন চায়। সনদের আইনি ভিত্তি চাওয়া এনসিপি জুলাই সনদের অধীনে গণপরিষদ চায়। এবি পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, গণঅধিকার পরিষদ, খেলাফত মজলিসও নির্বাচনের আগে সনদের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন চায়। সইয়ের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐকমত্য কমিশন গত বৃহস্পতিবার চূড়ান্ত সনদ দিয়েছে। দলের পক্ষে কে সনদে সই করবে, তা আজ শনিবারের মধ্যে জানাতে বলেছে। বিএনপি বৃহস্পতিবারই জানিয়েছে সনদে সই করবে তারা। জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. হামিদুর রহমান আযাদ সমকালকে বলেছেন, সনদে সইয়ের বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। আগে সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি ঠিক করতে হবে। যে জিনিস বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা নেই, তাতে কেউ কেন সই করবে?

একই অবস্থান জানিয়েছেন এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাভেদ রাসিন। তিনি বলেছেন, এখনও ঠিক হয়নি এনসিপি সই করবে কিনা।
সংস্কারে ইসলামী আন্দোলনের প্রতিনিধিত্ব করা দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান সমকালকে বলেছেন, কমিশনের ধরাবাঁধা নিয়মে চলব না। আগে ঠিক হতে হবে, সনদের আইনি ভিত্তি থাকবে কিনা। তারপর সইয়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। বৈঠকে উপস্থিত দুজন ব্যক্তি সমকালকে বলেছেন, জামায়াতসহ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য দল সনদে সই করলে শুধু সংস্কার নয়, নির্বাচনও ভণ্ডুল হতে পারে। এর দায় শুধু নয়, সরকারকেও নিতে হবে। তা ড. ইউনূসকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন

নির্বাচনের আগেই সংবিধান সংস্কারের চিন্তা সরকারের

আপডেট সময় ১০:৩৬:৩৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সাংবিধানিক সংস্কার কার্যকরে আগামী ফেব্রুয়ারিতে সংসদ নির্বাচনের আগেই জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন করতে চায় অন্তর্বর্তী সরকার। অন্যান্য সংস্কারের ফয়সালা হলেও, বিশেষ সাংবিধানিক আদেশে সংসদের বাইরে সংবিধান সংশোধন বৈধ কিনা– এ প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর পরস্পরবিরোধী অবস্থানের কারণে নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। তাই সংবিধান সংস্কারের বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক ঐকমত্য না হলে সাংবিধানিক আদেশের পথে যেতে পারে সরকার। সরকার এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সূত্র সমকালকে এসব তথ্য জানিয়েছে। সনদের বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে গত বৃহস্পতিবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের পর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করে ঐকমত্য কমিশন। প্রধান উপদেষ্টা এই কমিশনের সভাপতি। যমুনায় বৈঠকে তিন উপদেষ্টা এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাও ছিলেন।সংসদের বাইরে সংবিধান সংশোধনকে অবৈধ মনে করে বিএনপি। তারা সাংবিধানিক আদেশের ঘোর বিরোধী। জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলনসহ কয়েকটি দল সংবিধানের সংস্কার ছাড়া সনদে সইয়ে রাজি নয়। যমুনা এবং কমিশন সূত্র সমকালকে জানিয়েছে, রাজনৈতিক ঐকমত্য না থাকায় নির্বাচনের আগে সনদ বাস্তবায়ন অনিশ্চিত। সনদ না হলে জামায়াতসহ কয়েকটি দল নির্বাচন বর্জন করবে। ফলে নিশ্চিতভাবেই ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে না। নির্বাচন না হলে রাজনৈতিক সংকট ও অস্থিরতা দেখা দেবে, যা সামাল দেওয়া সরকারের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়বে। তাই নির্বাচনের স্বার্থে সনদ বাস্তবায়ন জরুরি।  এ জন্য রাজনৈতিক ⁠সমঝোতা প্রয়োজন। সমঝোতা না হলে সরকারকে সনদ বাস্তবায়নে শক্ত অবস্থান ও দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে।  বৈঠকে কী আলোচনা হয়েছে– প্রশ্নে কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ সমকালকে বলেছেন, সরকারপ্রধানকে পুরো পরিস্থিতি জানানো হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান ও মতামত, বিশেষজ্ঞ প্যানেলের পরামর্শ সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে। সনদ বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। গণভোট এবং সাংবিধানিক আদেশ নিয়েও কথা বলেছেন। প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচন সামনে রেখে অবশ্যই মৌলিক সংস্কার চূড়ান্ত করতে নির্দেশ দিয়েছেন। বৈঠকে উপস্থিত একজন উপদেষ্টা এবং ঐকমত্য কমিশন-সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তি সমকালকে জানিয়েছেন, প্রধান উপদেষ্টা সনদ বাস্তবায়নে রাজনৈতিক সমঝোতা চেয়েছিলেন। সব দলের মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কাজটি করে তিনি ভারসাম্য রক্ষা করতে চেয়েছিলেন। সনদের বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে ঐকমত্য সম্ভব নয়– তা প্রায় নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় প্রধান উপদেষ্টাকে শক্ত হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এতে তিনি রাজি হয়েছেন। রোববার রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপে তিনিও যোগ দিতে পারেন। যদি সেখানে ঐকমত্য না হয়, তবে সরকার বিশেষ সাংবিধানিক আদেশ জারির মাধ্যমে সংস্কার কার্যকরের পথে যেতে পারে। বিএনপির আপত্তিই সরকারের জন্য বাধা
বিএনপি সাংবিধানিক আদেশের মাধ্যমে সংবিধান সংশোধনের বিরোধী। দলটির অবস্থান হলো, নির্বাচিত সংসদ ছাড়া কারও সংবিধানের পরিবর্তন আনার ক্ষমতা নেই। যেসব সংস্কারের জন্য সংবিধানে পরিবর্তন প্রয়োজন নেই, সেগুলো অধ্যাদেশে বা নির্বাহী আদেশে নির্বাচনের আগে বাস্তবায়ন করতে পারবে সরকার। সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের মতামতে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের মাধ্যমে সাংবিধানিক ধারবাহিকতা অক্ষুণ্ন থাকায়, সাংবিধানিক আদেশ জারির ক্ষমতা নেই বর্তমান সরকারের। জামায়াতের ভাষ্য, অন্তর্বর্তী সরকার ১০৬ অনুচ্ছেদ নয়, জনগণের অভিপ্রায়ে সংবিধানের ৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী গঠিত হয়েছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তিতেই শেখ হাসিনার পতন হয় ৫ আগস্ট। পরের তিন দিন দেশে সরকার ছিল না। যা কিছু হয়েছে ওই সময়ে তা জনগণের অভিপ্রায় অনুযায়ী হয়েছে। এই অভিপ্রায়েই সংবিধানে কোনো সুযোগ না থাকার পরও অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে। জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের সমকালকে বলেছেন, বিদ্যমান সংবিধানে, সাংবিধানিক আদেশ জারির ক্ষমতা না দেওয়া হলেও জনগণের অভিপ্রায়ে তা হতে পারে। এই ক্ষমতা সরকারের রয়েছে। সাংবিধানিক আদেশ জারিকে কেউ অবৈধ বললে তো সরকারও অবৈধ। এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন, এবি পার্টিরও অবস্থান জামায়াতের কাছাকাছি। ঐকমত্য কমিশন বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সঙ্গে দুই দফা বৈঠকে সনদ বাস্তবায়নে গণভোট ও সাংবিধানিক আদেশের পরামর্শ পেয়েছে। গণভোট আয়োজন জটিল এবং ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় বিশেষজ্ঞরা সাংবিধানিক আদেশকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। যমুনায় বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টাকে এটি জানানো হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা গত জুনে সংলাপে বলেছিলেন, সংস্কারের যেসব সুপারিশে ঐকমত্য হবে, সেগুলোই বাস্তবায়ন করা হবে। কিছু নির্বাচনের আগে এবং বাকিগুলো পরবর্তী সরকার বাস্তবায়ন করবে। গত বৃহস্পতিবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, তারা প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যকেই সমর্থন করছেন। রাজনৈতিক দলগুলো সনদে স্বাক্ষরের মাধ্যমে সংস্কারের অঙ্গীকার করবে। যে দলই ক্ষমতায় যাক, আগামী সংসদ তা দুই বছরের মধ্যে বাস্তবায়ন করবে। সংবিধান পরিবর্তন হয় এমন কাজের ক্ষমতা সংসদ ছাড়া কারও নেই।কমিশন সূত্র জানিয়েছে, প্রধান উপদেষ্টা আগের অবস্থান থেকে সরে এসেছেন। তিনি মনে করেন, শুধু রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের ওপর সংস্কার ছেড়ে দেওয়া যাবে না। মৌলিক সংস্কার কার্যকরে নির্বাচনের আগেই সনদ বাস্তবায়ন করতে হবে। এর মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকার তার দায়িত্ব পালন করবে। ভবিষ্যতে কোনো দল ক্ষমতায় গিয়ে এসব সংস্কার পাল্টে ফেলে, এর জন্য তারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে।বৈঠকে উপস্থিত একাধিক ব্যক্তি সমকালকে বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টার মনোভাবে পরিবর্তন এলেও বিএনপির আপত্তির কারণে তিনি এতে অটল থাকতে পারবেন কিনা, তাতে সংশয় রয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা গণভোটেও আগ্রহী। এর ভালো-মন্দ তাঁকে বলা হয়েছে। বোঝানো হয়েছে, বিএনপি আপত্তি করলেও সাংবিধানিক আদেশ ছাড়া উপায় নেই। অন্যদের অনড় অবস্থানে বিপাকে সনদে রাজনৈতিক দলগুলোর সংখ্যাগরিষ্ঠতায় সংস্কারের ৮৪ সিদ্ধান্ত রয়েছে। এর ৩৪টি সংস্কার বাস্তবায়নে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। এগুলো বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে আপত্তি রয়েছে। এসব সংস্কারের  মধ্যে পিআর পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ গঠন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের পদ্ধতিসহ কয়েকটি বিষয়ে বিএনপির নোট অব ডিসেন্ট (আপত্তি) রয়েছে। তারা জানিয়েছে, ক্ষমতায় গেলে এগুলো বাস্তবায়ন করবে না। উচ্চকক্ষে পিআর মেনে নিতে প্রধান উপদেষ্টাও অনুরোধ করেছিলেন বিএনপিকে। তবে দলটি রাজি হয়নি। বিপরীতে জামায়াত সাংবিধানিক আদেশ এবং গণভোটের মাধ্যমে নির্বাচনের আগেই সনদের ৮৪ সংস্কার বাস্তবায়ন চায়। একই অবস্থান ইসলামী আন্দোলনের। তারাও জুলাই সনদের অধীনে নির্বাচন চায়। সনদের আইনি ভিত্তি চাওয়া এনসিপি জুলাই সনদের অধীনে গণপরিষদ চায়। এবি পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, গণঅধিকার পরিষদ, খেলাফত মজলিসও নির্বাচনের আগে সনদের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন চায়। সইয়ের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐকমত্য কমিশন গত বৃহস্পতিবার চূড়ান্ত সনদ দিয়েছে। দলের পক্ষে কে সনদে সই করবে, তা আজ শনিবারের মধ্যে জানাতে বলেছে। বিএনপি বৃহস্পতিবারই জানিয়েছে সনদে সই করবে তারা। জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. হামিদুর রহমান আযাদ সমকালকে বলেছেন, সনদে সইয়ের বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। আগে সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি ঠিক করতে হবে। যে জিনিস বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা নেই, তাতে কেউ কেন সই করবে?

একই অবস্থান জানিয়েছেন এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাভেদ রাসিন। তিনি বলেছেন, এখনও ঠিক হয়নি এনসিপি সই করবে কিনা।
সংস্কারে ইসলামী আন্দোলনের প্রতিনিধিত্ব করা দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান সমকালকে বলেছেন, কমিশনের ধরাবাঁধা নিয়মে চলব না। আগে ঠিক হতে হবে, সনদের আইনি ভিত্তি থাকবে কিনা। তারপর সইয়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। বৈঠকে উপস্থিত দুজন ব্যক্তি সমকালকে বলেছেন, জামায়াতসহ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য দল সনদে সই করলে শুধু সংস্কার নয়, নির্বাচনও ভণ্ডুল হতে পারে। এর দায় শুধু নয়, সরকারকেও নিতে হবে। তা ড. ইউনূসকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।