ঢাকা ০১:০১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সিজারের সময় রোগীর মূত্রথলি ও ভুঁড়ি কাটলেন ভুয়া চিকিৎসক

  • ডেস্ক রিপোর্টঃ
  • আপডেট সময় ০২:০৬:১৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • ৬৩৬ বার পড়া হয়েছে

ঝিনাইদহের মহেশপুরে সিজারিয়ান অপারেশনের সময় এক নারীর মূত্রথলি ও ভুঁড়ি কেটে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। গত ১৭ সেপ্টেম্বর মহেশপুরের ঘুঘরি বাজারের আল আরাফাহ নার্সিং হোম অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এই ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী স্বপ্না খাতুন (২৫) বর্তমানে আশঙ্কাজনক অবস্থায় যশোরের একটি হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। স্বপ্না খাতুনের স্বজনরা জানান, সিজারিয়ান অপারেশনের সময় চিকিৎসকরা তার মূত্রথলি এবং ভুড়িতে বেশ কয়েকটি ছিদ্র করে ফেলেন। এতে তার অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ শুরু হয় এবং রক্ত ও প্রস্রাব পেটের ভেতরে জমা হতে থাকে, যার ফলে তার অবস্থা গুরুতর হয়। পরে তাকে দ্রুত যশোরের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।স্বপ্নার ভাই মনসুর হোসেন মিয়াজি অভিযোগ করেন, ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ একজন ‌‘ভুয়া ডাক্তার’ দিয়ে অপারেশন করিয়ে তার বোনকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে। ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ অপারেশনের আগের আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্টও দিচ্ছে না। এ বিষয়ে কথা বলতে গেলে তারা হুমকি-ধামকি দিচ্ছে।ঘুঘরি বাজারের স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক কাজল মেম্বার। আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে মানুষকে চিকিৎসার নামে হয়রানি করে আসছে। এর আগেও এই ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ভুল চিকিৎসায় মানুষের ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেছে।আল আরাফাহ ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক কাজল ভুঁইয়া বলেন, দুর্ঘটনা ঘটতেই পারে। আমরা রোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থা করব। রোগী আমার প্রতিবেশী, তারা যা পারে করুক। আপনাদের (সাংবাদিক) মাথা ঘামানোর কিছু নেই।ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অনুমোদন আছে কিনা ও সিজারিয়ান অপারেশন করা চিকিৎসকের পরিচয় সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, অনুমোদন আছে। চিকিৎসকের নাম সোহেল রানা। তিনি কোটচাঁদপুর উপজেলা হাসপাতালের ডাক্তার।তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোটচাঁপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সোহেল রানা নামে কোনো চিকিৎসক নেই। এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে কাজল ভুঁইয়া বলেন, ডাক্তার কে, কোথায় চাকরি করেন সেটা দিয়ে কাজ কী? সবকিছু দেখছি, কী করা যায়।এদিকে সরেজমিনে ওই ক্লিনিকে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। ক্লিনিকের অফিস কক্ষ তালাবদ্ধ পাওয়া যায়। দ্বিতীয় তলায় দুজন নার্স ছাড়া ক্লিনিকে কাউকেই পাওয়া যায়নি। এসময় নার্সদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলে তারা বলেন, আমরা কোনো কথা বলতে পারব না। কথা বললে আমাদের চাকরি চলে যাবে।নামপ্রকাশ না করার শর্তে একজন নার্স বলেন, আমরা অল্প টাকা বেতনে চাকরি করি। এখানে অপারেশনের জন্য যেসব ডাক্তার আনা হয়, তাদের সম্পর্কে মানুষের অনেক ক্ষোভ৷ কিন্তু কেউ ভয়ে মুখ খুলতে পারে না।স্থানীয়দের অভিযোগ, অভিজ্ঞ ডাক্তার ছাড়া নিয়মিত সিজারিয়ান অপারেশন করে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। স্থানীয় হাতুড়ে ডাক্তার জামাল মিয়া এই ক্লিনিকে চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে রোগী দেখেন। যার কোনো ডাক্তারি সনদ নেই।জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. কামরুজ্জামান বলেন, এ ধরনের ঘটনা অত্যন্ত অমানবিক। ঘটনাস্থলে মহেশপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে খোঁজখবর নেয়ার জন্য পাঠানো হয়েছে। ঘটনার সত্যতা পেলে ওই ক্লিনিকের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জনপ্রিয় সংবাদ

ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনায় একজন শনাক্ত, সন্ধানদাতাকে পুরস্কৃত করা হবে: ডিএমপি

সিজারের সময় রোগীর মূত্রথলি ও ভুঁড়ি কাটলেন ভুয়া চিকিৎসক

আপডেট সময় ০২:০৬:১৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ঝিনাইদহের মহেশপুরে সিজারিয়ান অপারেশনের সময় এক নারীর মূত্রথলি ও ভুঁড়ি কেটে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। গত ১৭ সেপ্টেম্বর মহেশপুরের ঘুঘরি বাজারের আল আরাফাহ নার্সিং হোম অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এই ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী স্বপ্না খাতুন (২৫) বর্তমানে আশঙ্কাজনক অবস্থায় যশোরের একটি হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। স্বপ্না খাতুনের স্বজনরা জানান, সিজারিয়ান অপারেশনের সময় চিকিৎসকরা তার মূত্রথলি এবং ভুড়িতে বেশ কয়েকটি ছিদ্র করে ফেলেন। এতে তার অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ শুরু হয় এবং রক্ত ও প্রস্রাব পেটের ভেতরে জমা হতে থাকে, যার ফলে তার অবস্থা গুরুতর হয়। পরে তাকে দ্রুত যশোরের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।স্বপ্নার ভাই মনসুর হোসেন মিয়াজি অভিযোগ করেন, ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ একজন ‌‘ভুয়া ডাক্তার’ দিয়ে অপারেশন করিয়ে তার বোনকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে। ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ অপারেশনের আগের আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্টও দিচ্ছে না। এ বিষয়ে কথা বলতে গেলে তারা হুমকি-ধামকি দিচ্ছে।ঘুঘরি বাজারের স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক কাজল মেম্বার। আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে মানুষকে চিকিৎসার নামে হয়রানি করে আসছে। এর আগেও এই ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ভুল চিকিৎসায় মানুষের ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেছে।আল আরাফাহ ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক কাজল ভুঁইয়া বলেন, দুর্ঘটনা ঘটতেই পারে। আমরা রোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থা করব। রোগী আমার প্রতিবেশী, তারা যা পারে করুক। আপনাদের (সাংবাদিক) মাথা ঘামানোর কিছু নেই।ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অনুমোদন আছে কিনা ও সিজারিয়ান অপারেশন করা চিকিৎসকের পরিচয় সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, অনুমোদন আছে। চিকিৎসকের নাম সোহেল রানা। তিনি কোটচাঁদপুর উপজেলা হাসপাতালের ডাক্তার।তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোটচাঁপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সোহেল রানা নামে কোনো চিকিৎসক নেই। এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে কাজল ভুঁইয়া বলেন, ডাক্তার কে, কোথায় চাকরি করেন সেটা দিয়ে কাজ কী? সবকিছু দেখছি, কী করা যায়।এদিকে সরেজমিনে ওই ক্লিনিকে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। ক্লিনিকের অফিস কক্ষ তালাবদ্ধ পাওয়া যায়। দ্বিতীয় তলায় দুজন নার্স ছাড়া ক্লিনিকে কাউকেই পাওয়া যায়নি। এসময় নার্সদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলে তারা বলেন, আমরা কোনো কথা বলতে পারব না। কথা বললে আমাদের চাকরি চলে যাবে।নামপ্রকাশ না করার শর্তে একজন নার্স বলেন, আমরা অল্প টাকা বেতনে চাকরি করি। এখানে অপারেশনের জন্য যেসব ডাক্তার আনা হয়, তাদের সম্পর্কে মানুষের অনেক ক্ষোভ৷ কিন্তু কেউ ভয়ে মুখ খুলতে পারে না।স্থানীয়দের অভিযোগ, অভিজ্ঞ ডাক্তার ছাড়া নিয়মিত সিজারিয়ান অপারেশন করে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। স্থানীয় হাতুড়ে ডাক্তার জামাল মিয়া এই ক্লিনিকে চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে রোগী দেখেন। যার কোনো ডাক্তারি সনদ নেই।জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. কামরুজ্জামান বলেন, এ ধরনের ঘটনা অত্যন্ত অমানবিক। ঘটনাস্থলে মহেশপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে খোঁজখবর নেয়ার জন্য পাঠানো হয়েছে। ঘটনার সত্যতা পেলে ওই ক্লিনিকের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।