ঢাকা ০৮:৪৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ২৪ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আওয়ামী লীগের যেকোনো ভার্সন বাংলাদেশে তৈরির কোনো অপচেষ্টা চলবে না: সারজিস

  • ডেস্ক রিপোর্টঃ
  • আপডেট সময় ০৮:৩৮:৪৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ অক্টোবর ২০২৫
  • ৫২৭ বার পড়া হয়েছে

 

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, আওয়ামী লীগের যেকোনো ভার্সন বাংলাদেশে তৈরির অপচেষ্টা মেনে নেওয়া হবে না। কাদের নিয়ে ভার্সন বানাবেন? আওয়ামী লীগের সেই মন্ত্রী, এমপি, জেলা-উপজেলার যারা সভাপতি, সম্পাদক ছিল, বড় বড় যারা চেয়ারম্যান ছিল—তাদেরকে নিয়ে? আপনি তো ইউনিয়নের একজন মেম্বারকে আওয়ামী লীগের সভাপতি বানিয়ে দেবেন না। এরা প্রত্যেকেই আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী, এরা প্রত্যেকেই ফ্যাসিস্ট কাঠামোর সঙ্গে জড়িত। তারা কী করেছে, তা আপনারা সবাই জানেন।

 

 

সুতরাং, তাদের মধ্যে ‘মন্দের ভালো’ খুঁজে, যারা একেকজন শেখ হাসিনাকে ‘ফ্যাসিস্ট হাসিনা’ বানিয়েছে, সেই সুযোগ তাদের দেওয়া হবে না। বাংলাদেশের ভালো মানুষরা একত্রিত হয়ে যদি আরেকটি রাজনৈতিক দল গঠন করতে চান, করুক—এতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।

 

মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) দুপুরে নওগাঁ সদর উপজেলা পরিষদ হলরুমে এনসিপির জেলা ও উপজেলা সমন্বয় সভা শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

 

 

সারজিস আলম আরও বলেন, যেহেতু প্রতীক নিয়ে আইনগত কোনো বাধা নেই, তাই এনসিপি আগামী নির্বাচনে অংশ নিলে ‘শাপলা’ প্রতীক নিয়েই অংশ নেবে। আমরা নির্বাচন কমিশন থেকে প্রতীকের ব্যাপারে ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছি। আশা করি, নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে জনগণের আস্থা ধরে রাখবে।

 

এনসিপি এককভাবে নির্বাচনে যাবে নাকি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে যাবে—এ বিষয়ে আলোচনা চলছে। নির্বাচনের সময় অনেক রাজনৈতিক দল যখন একসঙ্গে চলতে শুরু করে, তখন তাদের দাবি, চিন্তাভাবনা, দেশ ও জনগণের স্বার্থ মিলিয়ে যায়। তখন জনগণের স্বার্থে একসঙ্গে নির্বাচনে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। এনসিপি এই বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবেই দেখছে। তবে এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।

 

 

তিনি আরও বলেন, কিছু উপদেষ্টার মধ্যে এমন আচরণ দেখা যাচ্ছে যে তারা দায়িত্বটুকু কেবল পালন করে নির্বাচনের মাধ্যমে ‘এক্সিট’ নিতে পারলেই হলো—দেশে থাকুক বা দেশের বাইরে থাকুক। এই দায়সারা মনোভাব নিয়ে অভ্যুত্থান-পরবর্তী কোনো সরকার কাজ করতে পারে না। তারা শহীদের রক্তের উপরে দাঁড়িয়ে ক্ষমতায় আছে, আর এখন যদি জীবনের একটু হুমকিতে ভয় পায়—তাহলে তো তাদের দায়িত্ব নেওয়াই উচিত হয়নি।

 

সুতরাং, স্পষ্ট কথা হচ্ছে—তারা যদি এত ত্যাগ ভুলে গিয়ে শুধু নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চায় (সবাই না, কিছু উপদেষ্টা), তাহলে দেশের মানুষের সামনে তাদের মুখ দেখানোর সুযোগ থাকবে না। তাদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। কোথায় ‘সেফ এক্সিট’? মানুষের একমাত্র সেফ এক্সিট তো মৃত্যু—মৃত্যু ছাড়া আর কোনো সেফ এক্সিট নেই। আপনি দেশ থেকে পালিয়ে গেলেও, সেখানেও মানুষ আপনাকে আটকাবে।

 

সম্প্রতি এক গণমাধ্যমে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেওয়া সাক্ষাৎকার প্রসঙ্গে সারজিস আলম বলেন, সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, তিনি তার যে ভাইকে দেশে রেখে গিয়েছিলেন, তাকে আর দেশে গিয়ে দেখতে পারবেন না; তার স্মৃতিবিজড়িত ঘর ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে; যেই মা’কে সুস্থ অবস্থায় রেখে গিয়েছিলেন, সেই মাকে অসুস্থ করে ফেলা হয়েছে এবং বিভিন্নভাবে নির্যাতন করা হয়েছে।

 

এই প্রতিটি বিষয়ের সঙ্গে আমাদের সহমর্মিতা থাকবে। আমরা চাই, আগামীর বাংলাদেশে এমন ঘটনা আর না ঘটুক। তার এই ব্যথা আমরা মনোযোগ দিয়ে শুনেছি। তার মতো হাজার হাজার নেতাকর্মীর সঙ্গেও এমন ঘটনা ঘটেছে। এই ব্যথা-বেদনা যেন স্থানীয় পর্যায়ে প্রকাশ পায় এবং যারা এই অন্যায় করেছে, তাদের বিচার হয়।

 

এই অন্যায় কারা করেছে? আওয়ামী লীগ করেছে। তাই স্থানীয় পর্যায়ে আওয়ামী লীগের দোসরদের, অর্থ বা সুযোগ-সুবিধার বিনিময়ে যেন কেউ আশ্রয়-প্রশ্রয় না দেয়—এ ব্যাপারে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব থেকে শুরু করে স্থানীয় পর্যায় পর্যন্ত কঠোর থাকতে হবে। যদি কখনো আওয়ামী লীগ আবার ফিরে আসে, তাদের কেউ যেন মাফ না পায়।

 

আমরা এই আহ্বান জানাচ্ছি। তার ব্যথার সঙ্গে আমরাও সমব্যথী। আমরা চাই, সেই ‘খনিরা’ যেন আর কোনোভাবে বাংলাদেশে আশ্রয় না পায়।

 

সমন্বয় সভায় উপস্থিত ছিলেন: জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন, রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ইমরান ইমনসহ এনসিপির জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।

জনপ্রিয় সংবাদ

আওয়ামী লীগের যেকোনো ভার্সন বাংলাদেশে তৈরির কোনো অপচেষ্টা চলবে না: সারজিস

আপডেট সময় ০৮:৩৮:৪৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ অক্টোবর ২০২৫

 

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, আওয়ামী লীগের যেকোনো ভার্সন বাংলাদেশে তৈরির অপচেষ্টা মেনে নেওয়া হবে না। কাদের নিয়ে ভার্সন বানাবেন? আওয়ামী লীগের সেই মন্ত্রী, এমপি, জেলা-উপজেলার যারা সভাপতি, সম্পাদক ছিল, বড় বড় যারা চেয়ারম্যান ছিল—তাদেরকে নিয়ে? আপনি তো ইউনিয়নের একজন মেম্বারকে আওয়ামী লীগের সভাপতি বানিয়ে দেবেন না। এরা প্রত্যেকেই আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী, এরা প্রত্যেকেই ফ্যাসিস্ট কাঠামোর সঙ্গে জড়িত। তারা কী করেছে, তা আপনারা সবাই জানেন।

 

 

সুতরাং, তাদের মধ্যে ‘মন্দের ভালো’ খুঁজে, যারা একেকজন শেখ হাসিনাকে ‘ফ্যাসিস্ট হাসিনা’ বানিয়েছে, সেই সুযোগ তাদের দেওয়া হবে না। বাংলাদেশের ভালো মানুষরা একত্রিত হয়ে যদি আরেকটি রাজনৈতিক দল গঠন করতে চান, করুক—এতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।

 

মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) দুপুরে নওগাঁ সদর উপজেলা পরিষদ হলরুমে এনসিপির জেলা ও উপজেলা সমন্বয় সভা শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

 

 

সারজিস আলম আরও বলেন, যেহেতু প্রতীক নিয়ে আইনগত কোনো বাধা নেই, তাই এনসিপি আগামী নির্বাচনে অংশ নিলে ‘শাপলা’ প্রতীক নিয়েই অংশ নেবে। আমরা নির্বাচন কমিশন থেকে প্রতীকের ব্যাপারে ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছি। আশা করি, নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে জনগণের আস্থা ধরে রাখবে।

 

এনসিপি এককভাবে নির্বাচনে যাবে নাকি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে যাবে—এ বিষয়ে আলোচনা চলছে। নির্বাচনের সময় অনেক রাজনৈতিক দল যখন একসঙ্গে চলতে শুরু করে, তখন তাদের দাবি, চিন্তাভাবনা, দেশ ও জনগণের স্বার্থ মিলিয়ে যায়। তখন জনগণের স্বার্থে একসঙ্গে নির্বাচনে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। এনসিপি এই বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবেই দেখছে। তবে এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।

 

 

তিনি আরও বলেন, কিছু উপদেষ্টার মধ্যে এমন আচরণ দেখা যাচ্ছে যে তারা দায়িত্বটুকু কেবল পালন করে নির্বাচনের মাধ্যমে ‘এক্সিট’ নিতে পারলেই হলো—দেশে থাকুক বা দেশের বাইরে থাকুক। এই দায়সারা মনোভাব নিয়ে অভ্যুত্থান-পরবর্তী কোনো সরকার কাজ করতে পারে না। তারা শহীদের রক্তের উপরে দাঁড়িয়ে ক্ষমতায় আছে, আর এখন যদি জীবনের একটু হুমকিতে ভয় পায়—তাহলে তো তাদের দায়িত্ব নেওয়াই উচিত হয়নি।

 

সুতরাং, স্পষ্ট কথা হচ্ছে—তারা যদি এত ত্যাগ ভুলে গিয়ে শুধু নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চায় (সবাই না, কিছু উপদেষ্টা), তাহলে দেশের মানুষের সামনে তাদের মুখ দেখানোর সুযোগ থাকবে না। তাদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। কোথায় ‘সেফ এক্সিট’? মানুষের একমাত্র সেফ এক্সিট তো মৃত্যু—মৃত্যু ছাড়া আর কোনো সেফ এক্সিট নেই। আপনি দেশ থেকে পালিয়ে গেলেও, সেখানেও মানুষ আপনাকে আটকাবে।

 

সম্প্রতি এক গণমাধ্যমে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেওয়া সাক্ষাৎকার প্রসঙ্গে সারজিস আলম বলেন, সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, তিনি তার যে ভাইকে দেশে রেখে গিয়েছিলেন, তাকে আর দেশে গিয়ে দেখতে পারবেন না; তার স্মৃতিবিজড়িত ঘর ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে; যেই মা’কে সুস্থ অবস্থায় রেখে গিয়েছিলেন, সেই মাকে অসুস্থ করে ফেলা হয়েছে এবং বিভিন্নভাবে নির্যাতন করা হয়েছে।

 

এই প্রতিটি বিষয়ের সঙ্গে আমাদের সহমর্মিতা থাকবে। আমরা চাই, আগামীর বাংলাদেশে এমন ঘটনা আর না ঘটুক। তার এই ব্যথা আমরা মনোযোগ দিয়ে শুনেছি। তার মতো হাজার হাজার নেতাকর্মীর সঙ্গেও এমন ঘটনা ঘটেছে। এই ব্যথা-বেদনা যেন স্থানীয় পর্যায়ে প্রকাশ পায় এবং যারা এই অন্যায় করেছে, তাদের বিচার হয়।

 

এই অন্যায় কারা করেছে? আওয়ামী লীগ করেছে। তাই স্থানীয় পর্যায়ে আওয়ামী লীগের দোসরদের, অর্থ বা সুযোগ-সুবিধার বিনিময়ে যেন কেউ আশ্রয়-প্রশ্রয় না দেয়—এ ব্যাপারে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব থেকে শুরু করে স্থানীয় পর্যায় পর্যন্ত কঠোর থাকতে হবে। যদি কখনো আওয়ামী লীগ আবার ফিরে আসে, তাদের কেউ যেন মাফ না পায়।

 

আমরা এই আহ্বান জানাচ্ছি। তার ব্যথার সঙ্গে আমরাও সমব্যথী। আমরা চাই, সেই ‘খনিরা’ যেন আর কোনোভাবে বাংলাদেশে আশ্রয় না পায়।

 

সমন্বয় সভায় উপস্থিত ছিলেন: জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন, রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ইমরান ইমনসহ এনসিপির জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।