ঢাকা ০৪:০৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ২৩ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

‘গুম আমরা হয়েছি, সঙ্গে ধ্বংস হয়ে গেছে পুরো পরিবার’

  • ডেস্ক রিপোর্টঃ
  • আপডেট সময় ১০:২৮:০৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ৮ অক্টোবর ২০২৫
  • ৫৫২ বার পড়া হয়েছে

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গুমের অভিযোগে দায়ের করা দুই মামলায় সাবেক শেখ হাসিনাসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করা হয়েছে।

 

 

বুধবার (৮ অক্টোবর) দুপুরে ট্রাইব্যুনাল এই দুই মামলার অভিযোগ গ্রহণ করে আদেশ দেন।

 

 

এদিন আদালতে উপস্থিত ছিলেন গুমের শিকার হওয়া বলে দাবি করা কয়েকজন ব্যক্তি-ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুল্লাহিল আমান আল আজমী, ব্যারিস্টার মীর আহমদ বিন কাসেম (আরমান), হুম্মাম কাদের চৌধুরী, সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল হাসিনুর রহমান বীরপ্রতীক এবং মাইকেল চাকমাসহ অনেকে।

 

 

ব্রিগেডিয়ার আল আজমী বলেন, বিনা অপরাধে আমাকে ডিজিএফআই আট বছর ধরে বন্দি করে রেখেছিল। আমি এই অন্যায়ের বিচার চাই। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়-যেই হোক, অপরাধের দায় নিতে হবে।

 

 

মাইকেল চাকমা বলেন, আমি পাঁচ বছর ছয় মাস গুম ছিলাম। যাদের হাতে বন্দি ছিলাম, তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছি। আশা করি এবার ন্যায়বিচার হবে, যেন ভবিষ্যতে আর কেউ এ ধরনের নিপীড়নের শিকার না হয়।

 

 

ব্যারিস্টার আরমান বলেন, আট বছর অন্ধকার ঘরে বন্দি থাকার সময় মনে হতো, সংবিধান ও মানবাধিকারের কোনো অস্তিত্ব নেই। ১৬ বছর ধরে সংবিধান শুধু কাগজে লেখা শব্দে সীমাবদ্ধ ছিল।

 

 

হুম্মাম কাদের চৌধুরী বলেন, গুমের শিকার হয়েছি আমরা, কিন্তু কষ্ট ভোগ করেছে আমাদের পরিবারগুলো। সাত মাস পর মুক্তি পেয়েছিলাম, তবে বিশ্বাস ছিল-একদিন এর বিচার হবেই।

 

 

লেফটেন্যান্ট কর্নেল হাসিনুর রহমান বীরপ্রতীক বলেন, আমাকে শুধু গুম করা হয়নি, আমার পুরো পরিবারও ভয় ও অনিশ্চয়তার মধ্যে বন্দি ছিল। গুম যে কী মানসিক যন্ত্রণা তৈরি করে, তা ভাষায় বোঝানো যায় না।

 

 

আরেক ভুক্তভোগী বলেন, সাড়ে চার মাস গুম অবস্থায় ছিলাম। এখন আদালতে বিচার শুরু হতে দেখে কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছি। কিন্তু আমাদের পরিবারগুলো এখনও সেই মানসিক ট্রমা থেকে বের হতে পারেনি।

 

 

এর আগে সকালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর রেজিস্ট্রারের কাছে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম এই দুটি মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

 

 

গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় শেখ হাসিনার পাশাপাশি রয়েছেন সাবেক প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদসহ আরও অনেকে।

 

 

মামলা দুটির মধ্যে একটিতে টিএফআই সেলে গুম ও নির্যাতনের ঘটনা এবং অন্যটিতে জেআইসি সেলে আটক, গুম ও নির্যাতনের ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে। প্রথম মামলায় শেখ হাসিনা ও তারিক আহমেদ সিদ্দিকসহ ১৭ জনকে এবং দ্বিতীয় মামলায় ১৩ জনকে আসামি করা হয়েছে।

 

 

ট্রাইব্যুনাল সূত্রে জানা গেছে, এদিন মোট তিনটি ফরমাল চার্জ দাখিল হয়-এর মধ্যে দুটি গুমের অভিযোগে এবং একটি জুলাই আন্দোলনে গুলি চালানোর ঘটনায় বিজিবির সাবেক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে।

জনপ্রিয় সংবাদ

‘গুম আমরা হয়েছি, সঙ্গে ধ্বংস হয়ে গেছে পুরো পরিবার’

আপডেট সময় ১০:২৮:০৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ৮ অক্টোবর ২০২৫

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গুমের অভিযোগে দায়ের করা দুই মামলায় সাবেক শেখ হাসিনাসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করা হয়েছে।

 

 

বুধবার (৮ অক্টোবর) দুপুরে ট্রাইব্যুনাল এই দুই মামলার অভিযোগ গ্রহণ করে আদেশ দেন।

 

 

এদিন আদালতে উপস্থিত ছিলেন গুমের শিকার হওয়া বলে দাবি করা কয়েকজন ব্যক্তি-ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুল্লাহিল আমান আল আজমী, ব্যারিস্টার মীর আহমদ বিন কাসেম (আরমান), হুম্মাম কাদের চৌধুরী, সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল হাসিনুর রহমান বীরপ্রতীক এবং মাইকেল চাকমাসহ অনেকে।

 

 

ব্রিগেডিয়ার আল আজমী বলেন, বিনা অপরাধে আমাকে ডিজিএফআই আট বছর ধরে বন্দি করে রেখেছিল। আমি এই অন্যায়ের বিচার চাই। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়-যেই হোক, অপরাধের দায় নিতে হবে।

 

 

মাইকেল চাকমা বলেন, আমি পাঁচ বছর ছয় মাস গুম ছিলাম। যাদের হাতে বন্দি ছিলাম, তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছি। আশা করি এবার ন্যায়বিচার হবে, যেন ভবিষ্যতে আর কেউ এ ধরনের নিপীড়নের শিকার না হয়।

 

 

ব্যারিস্টার আরমান বলেন, আট বছর অন্ধকার ঘরে বন্দি থাকার সময় মনে হতো, সংবিধান ও মানবাধিকারের কোনো অস্তিত্ব নেই। ১৬ বছর ধরে সংবিধান শুধু কাগজে লেখা শব্দে সীমাবদ্ধ ছিল।

 

 

হুম্মাম কাদের চৌধুরী বলেন, গুমের শিকার হয়েছি আমরা, কিন্তু কষ্ট ভোগ করেছে আমাদের পরিবারগুলো। সাত মাস পর মুক্তি পেয়েছিলাম, তবে বিশ্বাস ছিল-একদিন এর বিচার হবেই।

 

 

লেফটেন্যান্ট কর্নেল হাসিনুর রহমান বীরপ্রতীক বলেন, আমাকে শুধু গুম করা হয়নি, আমার পুরো পরিবারও ভয় ও অনিশ্চয়তার মধ্যে বন্দি ছিল। গুম যে কী মানসিক যন্ত্রণা তৈরি করে, তা ভাষায় বোঝানো যায় না।

 

 

আরেক ভুক্তভোগী বলেন, সাড়ে চার মাস গুম অবস্থায় ছিলাম। এখন আদালতে বিচার শুরু হতে দেখে কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছি। কিন্তু আমাদের পরিবারগুলো এখনও সেই মানসিক ট্রমা থেকে বের হতে পারেনি।

 

 

এর আগে সকালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর রেজিস্ট্রারের কাছে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম এই দুটি মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

 

 

গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় শেখ হাসিনার পাশাপাশি রয়েছেন সাবেক প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদসহ আরও অনেকে।

 

 

মামলা দুটির মধ্যে একটিতে টিএফআই সেলে গুম ও নির্যাতনের ঘটনা এবং অন্যটিতে জেআইসি সেলে আটক, গুম ও নির্যাতনের ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে। প্রথম মামলায় শেখ হাসিনা ও তারিক আহমেদ সিদ্দিকসহ ১৭ জনকে এবং দ্বিতীয় মামলায় ১৩ জনকে আসামি করা হয়েছে।

 

 

ট্রাইব্যুনাল সূত্রে জানা গেছে, এদিন মোট তিনটি ফরমাল চার্জ দাখিল হয়-এর মধ্যে দুটি গুমের অভিযোগে এবং একটি জুলাই আন্দোলনে গুলি চালানোর ঘটনায় বিজিবির সাবেক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে।