ঢাকা ০১:০৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ২১ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কেমন ছিলেন নিহত জবি শিক্ষার্থী জোবায়েদ

  • ডেস্ক রিপোর্টঃ
  • আপডেট সময় ০৯:০৬:০৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫
  • ৫৬৬ বার পড়া হয়েছে

 

টিউশনি করাতে গিয়ে হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৯–২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো. জোবায়েদ হোসেন ছিলেন সহজ-সরল, নম্র-ভদ্র ও অমায়িক স্বভাবের একজন মানুষ। সহপাঠী, রাজনৈতিক সহকর্মী ও শিক্ষকেরা বলছেন, শান্ত-স্বভাবের এমন একজন তরুণকে হারিয়ে তারা গভীরভাবে শোকাহত।

 

 

জোবায়েদের রুমমেট ও সহপাঠী আতিউর রহমান কৌশিক বলেন, ‘ওর মতো একটা শান্ত ছেলে ক্যাম্পাসে পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ। মুখে হাসি নিয়ে বাইরে গিয়ে আর ফিরে আসলো না আমার বন্ধু। আমি যদি জানতাম বাইরে গেলে ও আর ফিরবেনা, ওকে যেতেই দিতাম না।’

 

এদিকে ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ন আহ্বায়ক জাফর আহমেদ বলেন, ‘জোবায়েদ আমার হাত ধরেই ছাত্রদলের রাজনীতিতে এসেছিল। ওর মতো শান্ত, অমায়িক একটা ছেলে আমার রাজনৈতিক সহযোদ্ধাদের মধ্যে দেখিনি। যখন সে নিয়মিত প্রোগ্রামে আসতো না, ডেকে নিয়ে অনেক বকলেও মাথা নিচু করে রাখতো, অথচ আমি জানতাম সে টিউশনি করতো, কিন্তু জোবায়েদ কোনো কারণ না দেখিয়ে বলতো সামনে থেকে নিয়মিত হব।’

 

 

তিনি আরো জানান, ‘জোবায়েদের গ্রামের বাড়িতে কেউ বিশ্বাস করতে পারছে না, তার মতো এত সহজ সরল ছেলে হত্যাকাণ্ডের শিকার হতে পারে।’

 

পরিসংখ্যান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আবু সাঈদ মোহাম্মদ রিপন রউফ বলেন, ‘জোবায়েদ অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী ছিল। শান্ত, ভদ্র শিক্ষার্থীদের মধ্যে জোবায়েদ অন্যতম। সেখানে বিভাগের নিয়ম, শৃঙ্খলা ভঙ্গ এমন অভিযোগের প্রশ্নই আসে না। আমরা পরিসংখ্যান বিভাগ জোবায়েদের এ নির্মম হত্যাকাণ্ডে শোকাহত। বিভাগের প্রতিটি শিক্ষক মর্মাহত যে, এমন শান্ত ছেলে কিভাবে কারোর দ্বারা হত্যা শিকার হতে পারে।’

 

 

জোবায়েদের রাজনৈতিক সহকর্মী ভূঁইয়ান আনোয়ার বলেন, ‘সে সংগ্রামী ও নীতিবান একজন ছাত্রনেতা ছিল, যিনি টিউশনি করে নিজের পড়াশোনার চালিয়েছেন। এমন একজন দিনের আলোতে মানুষের উপস্থিতির মাঝেই খুন হলেন যার আসলে শত্রু থাকবে এমনটা হতেই পারেনা। জোবায়েদ কখনো কোনো ঝামেলার মধ্যে ছিলেন না। এমন একজন সহযোদ্ধাকে আমরা হারিয়েছি, যার শূন্যতা আমরা কোনোদিন পূরণ করতে পারব না।’

 

জোবায়েদের সহপাঠী ও কুমিল্লাগামী গোমতী বাসের সভাপতি ইমাম হোসেন বলেন, ‘জোবায়েদকে আমি ২০২৪ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে চিনি। সে আমার ব্যাচমেট ও একই জেলার মানুষ। ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকলেও তিনি ছিলেন অত্যন্ত ভদ্র ও বিনয়ী স্বভাবের একজন শিক্ষার্থী, জুলাই আন্দোলনের পর কুমিল্লা জেলা কল্যাণ পরিষদের সভাপতি হলেও কখনো রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে ব্যক্তিগত প্রভাব বিস্তার করতে দেখা যায়নি।’

 

 

জোবায়েদের একজন নারী সহপাঠী জানান, ওর মতো শান্ত, নম্র ছেলে হয়না। সিনিয়র, জুনিয়র, সহপাঠী বলেন, জোবায়েদ সবসময় মাথা নুইয়ে কথা বলতো ।

 

শোকাহত শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখছে, এমন বিশ্ববিদ্যালয় দিবস না আসুক। যে দিবসে আনন্দের বদলে দুঃখ ঝড়ে।

 

২০ আগস্ট (সোমবার) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় দিবস ছিল। পুরো ক্যাম্পাস নিয়ন আলো দিয়ে সাজানো হয়েছিল, এমনকি কনসার্টের জন্য বিজ্ঞান ভবন প্রাঙ্গণে প্যান্ডেল ও স্টেজ সাজানো হয়েছিল। সোমবার বাদ জোহর সেখানেই তাঁর প্রথম জানাজা হয়।

 

এ ঘটনায়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দুই দিনের শোক ঘোষণা করেছে। আজ মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শোক সভা এবং বাদ জোহর মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া মাহফিল করা হয়। এছাড়া জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রেখে, সকল শিক্ষক-শিক্ষার্থী কালো ব্যাজ ধারণ করেন। এই দুইদিন ক্লাস চালু থাকলেও সকল পরীক্ষা স্থগিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

 

রবিবার (১৯ অক্টোবর) বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে পুরান ঢাকার নুরবক্স লেনের রৌশান ভিলা নামের ভবনের সিঁড়িতে ছুরিকাঘাতে নিহত হন জোবায়েদ। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন। পাশাপাশি কুমিল্লা জেলা ছাত্র কল্যাণ সংসদের সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন।

 

প্রায় এক বছর ধরে তিনি ওই ভবনের পাঁচ তলার বর্ষা নামের এক শিক্ষার্থীকে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও জীববিজ্ঞান পড়াতেন। ঘটনার দিন নিয়মিত টিউশনে যাওয়ার সময়ই তিনি হামলার শিকার হন। ছুরিকাঘাতের পর তিনতলা পর্যন্ত উঠতেই তার মৃত্যু হয়।

 

পুলিশ জানিয়েছে, প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে প্রেমঘটিত বিরোধ থেকেই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

কত আসনে প্রার্থী দেবে এনসিপি, স্পষ্ট করলেন নাহিদ

কেমন ছিলেন নিহত জবি শিক্ষার্থী জোবায়েদ

আপডেট সময় ০৯:০৬:০৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫

 

টিউশনি করাতে গিয়ে হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৯–২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো. জোবায়েদ হোসেন ছিলেন সহজ-সরল, নম্র-ভদ্র ও অমায়িক স্বভাবের একজন মানুষ। সহপাঠী, রাজনৈতিক সহকর্মী ও শিক্ষকেরা বলছেন, শান্ত-স্বভাবের এমন একজন তরুণকে হারিয়ে তারা গভীরভাবে শোকাহত।

 

 

জোবায়েদের রুমমেট ও সহপাঠী আতিউর রহমান কৌশিক বলেন, ‘ওর মতো একটা শান্ত ছেলে ক্যাম্পাসে পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ। মুখে হাসি নিয়ে বাইরে গিয়ে আর ফিরে আসলো না আমার বন্ধু। আমি যদি জানতাম বাইরে গেলে ও আর ফিরবেনা, ওকে যেতেই দিতাম না।’

 

এদিকে ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ন আহ্বায়ক জাফর আহমেদ বলেন, ‘জোবায়েদ আমার হাত ধরেই ছাত্রদলের রাজনীতিতে এসেছিল। ওর মতো শান্ত, অমায়িক একটা ছেলে আমার রাজনৈতিক সহযোদ্ধাদের মধ্যে দেখিনি। যখন সে নিয়মিত প্রোগ্রামে আসতো না, ডেকে নিয়ে অনেক বকলেও মাথা নিচু করে রাখতো, অথচ আমি জানতাম সে টিউশনি করতো, কিন্তু জোবায়েদ কোনো কারণ না দেখিয়ে বলতো সামনে থেকে নিয়মিত হব।’

 

 

তিনি আরো জানান, ‘জোবায়েদের গ্রামের বাড়িতে কেউ বিশ্বাস করতে পারছে না, তার মতো এত সহজ সরল ছেলে হত্যাকাণ্ডের শিকার হতে পারে।’

 

পরিসংখ্যান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আবু সাঈদ মোহাম্মদ রিপন রউফ বলেন, ‘জোবায়েদ অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী ছিল। শান্ত, ভদ্র শিক্ষার্থীদের মধ্যে জোবায়েদ অন্যতম। সেখানে বিভাগের নিয়ম, শৃঙ্খলা ভঙ্গ এমন অভিযোগের প্রশ্নই আসে না। আমরা পরিসংখ্যান বিভাগ জোবায়েদের এ নির্মম হত্যাকাণ্ডে শোকাহত। বিভাগের প্রতিটি শিক্ষক মর্মাহত যে, এমন শান্ত ছেলে কিভাবে কারোর দ্বারা হত্যা শিকার হতে পারে।’

 

 

জোবায়েদের রাজনৈতিক সহকর্মী ভূঁইয়ান আনোয়ার বলেন, ‘সে সংগ্রামী ও নীতিবান একজন ছাত্রনেতা ছিল, যিনি টিউশনি করে নিজের পড়াশোনার চালিয়েছেন। এমন একজন দিনের আলোতে মানুষের উপস্থিতির মাঝেই খুন হলেন যার আসলে শত্রু থাকবে এমনটা হতেই পারেনা। জোবায়েদ কখনো কোনো ঝামেলার মধ্যে ছিলেন না। এমন একজন সহযোদ্ধাকে আমরা হারিয়েছি, যার শূন্যতা আমরা কোনোদিন পূরণ করতে পারব না।’

 

জোবায়েদের সহপাঠী ও কুমিল্লাগামী গোমতী বাসের সভাপতি ইমাম হোসেন বলেন, ‘জোবায়েদকে আমি ২০২৪ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে চিনি। সে আমার ব্যাচমেট ও একই জেলার মানুষ। ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকলেও তিনি ছিলেন অত্যন্ত ভদ্র ও বিনয়ী স্বভাবের একজন শিক্ষার্থী, জুলাই আন্দোলনের পর কুমিল্লা জেলা কল্যাণ পরিষদের সভাপতি হলেও কখনো রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে ব্যক্তিগত প্রভাব বিস্তার করতে দেখা যায়নি।’

 

 

জোবায়েদের একজন নারী সহপাঠী জানান, ওর মতো শান্ত, নম্র ছেলে হয়না। সিনিয়র, জুনিয়র, সহপাঠী বলেন, জোবায়েদ সবসময় মাথা নুইয়ে কথা বলতো ।

 

শোকাহত শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখছে, এমন বিশ্ববিদ্যালয় দিবস না আসুক। যে দিবসে আনন্দের বদলে দুঃখ ঝড়ে।

 

২০ আগস্ট (সোমবার) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় দিবস ছিল। পুরো ক্যাম্পাস নিয়ন আলো দিয়ে সাজানো হয়েছিল, এমনকি কনসার্টের জন্য বিজ্ঞান ভবন প্রাঙ্গণে প্যান্ডেল ও স্টেজ সাজানো হয়েছিল। সোমবার বাদ জোহর সেখানেই তাঁর প্রথম জানাজা হয়।

 

এ ঘটনায়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দুই দিনের শোক ঘোষণা করেছে। আজ মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শোক সভা এবং বাদ জোহর মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া মাহফিল করা হয়। এছাড়া জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রেখে, সকল শিক্ষক-শিক্ষার্থী কালো ব্যাজ ধারণ করেন। এই দুইদিন ক্লাস চালু থাকলেও সকল পরীক্ষা স্থগিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

 

রবিবার (১৯ অক্টোবর) বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে পুরান ঢাকার নুরবক্স লেনের রৌশান ভিলা নামের ভবনের সিঁড়িতে ছুরিকাঘাতে নিহত হন জোবায়েদ। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন। পাশাপাশি কুমিল্লা জেলা ছাত্র কল্যাণ সংসদের সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন।

 

প্রায় এক বছর ধরে তিনি ওই ভবনের পাঁচ তলার বর্ষা নামের এক শিক্ষার্থীকে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও জীববিজ্ঞান পড়াতেন। ঘটনার দিন নিয়মিত টিউশনে যাওয়ার সময়ই তিনি হামলার শিকার হন। ছুরিকাঘাতের পর তিনতলা পর্যন্ত উঠতেই তার মৃত্যু হয়।

 

পুলিশ জানিয়েছে, প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে প্রেমঘটিত বিরোধ থেকেই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।