ঢাকা ০২:৪৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মওলানা ভাসানীর ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ: জননেতার স্মরণে সন্তোষে নানা আয়োজন

  • ডেস্ক রিপোর্টঃ
  • আপডেট সময় ১০:১৯:২০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫
  • ৫২২ বার পড়া হয়েছে

 

আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ সোমবার (১৭ নভেম্বর)। ১৯৭৬ সালের এই দিনে ঢাকার পিজি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন। পরে তাকে টাঙ্গাইলের সন্তোষে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।

১৮৮০ সালের ১২ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জের ধানগড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করা মওলানা ভাসানী জীবনের বড় একটি অংশ কাটিয়েছেন টাঙ্গাইলের সন্তোষে। কৈশোর থেকেই রাজনীতিতে সম্পৃক্ত তিনি সারাজীবন সাধারণ মানুষের অধিকার, কৃষক–মজুরের মুক্তি এবং জমিদার–মহাজনবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন।

রাজনৈতিক জীবনের সূচনা ও প্রাথমিক সংগ্রাম

১৯১১ সালে মওলানা মোহাম্মদ আলীর সংস্পর্শে এসে রাজনীতিতে নাম লেখান ভাসানী। প্রবাসী সরকারের পরিকল্পনায় ‘রেশমী রুমাল আন্দোলন’-এ অংশ নিয়ে ১৯১৯ সালে কারাবরণ করেন। পরে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসের নেতৃত্বে স্বরাজ আন্দোলন, খিলাফত আন্দোলন ও অসহযোগ আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।

১৯২৫-২৭ সালে পূর্ব বাংলা ও আসামে কৃষক–মজুরদের সংগঠিত করে জমিদার ও সুদখোর মহাজনদের বিরুদ্ধে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলেন তিনি। ১৯২৯ সালে আসামের ভাসান চরে দ্বিতীয় কৃষক–প্রজা সম্মেলনে যোগ দিয়ে গণমানুষের নেতা হিসেবে পরিচিতি পান।

মুসলিম লীগে যোগদান ও পরবর্তী পদক্ষেপ

১৯৩৬ সালে কংগ্রেস ত্যাগ করে মুসলিম লীগে যোগ দেন এবং আসাম প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সভাপতি নিযুক্ত হন। ১৯৩৭ সালে ‘লাইন–প্রথা’ নামের কুখ্যাত নিপীড়নমূলক প্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলে আলোচনায় আসেন।

১৯৪৮ সালের ১৭ মার্চ ভাষা আন্দোলনের পক্ষে অবস্থান জানিয়ে ‘সাপ্তাহিক ইত্তেফাক’ প্রকাশ করেন।

আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠা

১৯৪৯ সালের ২৩ জুন তিনি প্রতিষ্ঠা করেন আওয়ামী মুসলিম লীগ—পরবর্তীতে যা হয়ে ওঠে বাংলাদেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ। ১৯৫৫ সালে পল্টন ময়দানে স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে ঐতিহাসিক জনসভা করেন।

১৯৫৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে কাগমারীর সম্মেলনে পশ্চিম পাকিস্তানের প্রতি তার ‘আসসালামু আলাইকুম’ ঘোষণা তখনকার রাজনীতিতে বড় মোড় আনে। একই বছরের জুলাইয়ে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) প্রতিষ্ঠা করেন তিনি।

স্বাধীনতা যুদ্ধ ও পরবর্তী রাজনীতি

১৯৬৫ সালে আইয়ুববিরোধী নির্বাচনে ফাতেমা জিন্নাহর পক্ষে দাঁড়ান ভাসানী। ১৯৬৬ সালে ন্যাপের ১৪ দফা, ১৯৬৮ সালে আইয়ুববিরোধী দাবি সপ্তাহ, ১৯৭০ সালের ধারাবাহিক কৃষক সম্মেলনসহ বিভিন্ন গণঅভিযানে নেতৃত্ব দেন।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি সর্বদলীয় ওয়ার কাউন্সিলের উপদেষ্টা হিসেবে ভূমিকা রাখেন। স্বাধীনতার পরও গৃহবন্দি অবস্থায় থেকেও গণমানুষের দাবিতে নিরলস আন্দোলন চালিয়ে যান। ১৯৭৪ সালের ‘ভুখা মিছিল’ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

তার সর্বশেষ বৃহত্তম আন্দোলন ছিল ১৯৭৬ সালের ফারাক্কা লংমার্চ। রাজশাহী থেকে কানসাট পর্যন্ত এই লংমার্চের নেতৃত্বই ছিল তাঁর শেষ জনঅভিযান।

মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে কর্মসূচি

মওলানা ভাসানীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আজ টাঙ্গাইলের সন্তোষে তার মাজার প্রাঙ্গণে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বিএনপি, ন্যাপসহ নানা রাজনৈতিক দল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সামাজিক সংগঠন।


 

জনপ্রিয় সংবাদ

মওলানা ভাসানীর ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ: জননেতার স্মরণে সন্তোষে নানা আয়োজন

আপডেট সময় ১০:১৯:২০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫

 

আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ সোমবার (১৭ নভেম্বর)। ১৯৭৬ সালের এই দিনে ঢাকার পিজি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন। পরে তাকে টাঙ্গাইলের সন্তোষে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।

১৮৮০ সালের ১২ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জের ধানগড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করা মওলানা ভাসানী জীবনের বড় একটি অংশ কাটিয়েছেন টাঙ্গাইলের সন্তোষে। কৈশোর থেকেই রাজনীতিতে সম্পৃক্ত তিনি সারাজীবন সাধারণ মানুষের অধিকার, কৃষক–মজুরের মুক্তি এবং জমিদার–মহাজনবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন।

রাজনৈতিক জীবনের সূচনা ও প্রাথমিক সংগ্রাম

১৯১১ সালে মওলানা মোহাম্মদ আলীর সংস্পর্শে এসে রাজনীতিতে নাম লেখান ভাসানী। প্রবাসী সরকারের পরিকল্পনায় ‘রেশমী রুমাল আন্দোলন’-এ অংশ নিয়ে ১৯১৯ সালে কারাবরণ করেন। পরে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসের নেতৃত্বে স্বরাজ আন্দোলন, খিলাফত আন্দোলন ও অসহযোগ আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।

১৯২৫-২৭ সালে পূর্ব বাংলা ও আসামে কৃষক–মজুরদের সংগঠিত করে জমিদার ও সুদখোর মহাজনদের বিরুদ্ধে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলেন তিনি। ১৯২৯ সালে আসামের ভাসান চরে দ্বিতীয় কৃষক–প্রজা সম্মেলনে যোগ দিয়ে গণমানুষের নেতা হিসেবে পরিচিতি পান।

মুসলিম লীগে যোগদান ও পরবর্তী পদক্ষেপ

১৯৩৬ সালে কংগ্রেস ত্যাগ করে মুসলিম লীগে যোগ দেন এবং আসাম প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সভাপতি নিযুক্ত হন। ১৯৩৭ সালে ‘লাইন–প্রথা’ নামের কুখ্যাত নিপীড়নমূলক প্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলে আলোচনায় আসেন।

১৯৪৮ সালের ১৭ মার্চ ভাষা আন্দোলনের পক্ষে অবস্থান জানিয়ে ‘সাপ্তাহিক ইত্তেফাক’ প্রকাশ করেন।

আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠা

১৯৪৯ সালের ২৩ জুন তিনি প্রতিষ্ঠা করেন আওয়ামী মুসলিম লীগ—পরবর্তীতে যা হয়ে ওঠে বাংলাদেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ। ১৯৫৫ সালে পল্টন ময়দানে স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে ঐতিহাসিক জনসভা করেন।

১৯৫৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে কাগমারীর সম্মেলনে পশ্চিম পাকিস্তানের প্রতি তার ‘আসসালামু আলাইকুম’ ঘোষণা তখনকার রাজনীতিতে বড় মোড় আনে। একই বছরের জুলাইয়ে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) প্রতিষ্ঠা করেন তিনি।

স্বাধীনতা যুদ্ধ ও পরবর্তী রাজনীতি

১৯৬৫ সালে আইয়ুববিরোধী নির্বাচনে ফাতেমা জিন্নাহর পক্ষে দাঁড়ান ভাসানী। ১৯৬৬ সালে ন্যাপের ১৪ দফা, ১৯৬৮ সালে আইয়ুববিরোধী দাবি সপ্তাহ, ১৯৭০ সালের ধারাবাহিক কৃষক সম্মেলনসহ বিভিন্ন গণঅভিযানে নেতৃত্ব দেন।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি সর্বদলীয় ওয়ার কাউন্সিলের উপদেষ্টা হিসেবে ভূমিকা রাখেন। স্বাধীনতার পরও গৃহবন্দি অবস্থায় থেকেও গণমানুষের দাবিতে নিরলস আন্দোলন চালিয়ে যান। ১৯৭৪ সালের ‘ভুখা মিছিল’ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

তার সর্বশেষ বৃহত্তম আন্দোলন ছিল ১৯৭৬ সালের ফারাক্কা লংমার্চ। রাজশাহী থেকে কানসাট পর্যন্ত এই লংমার্চের নেতৃত্বই ছিল তাঁর শেষ জনঅভিযান।

মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে কর্মসূচি

মওলানা ভাসানীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আজ টাঙ্গাইলের সন্তোষে তার মাজার প্রাঙ্গণে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বিএনপি, ন্যাপসহ নানা রাজনৈতিক দল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সামাজিক সংগঠন।