ঢাকা ০৩:১৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ৮ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নবীর শিক্ষা করোনা ভিক্ষা, কিন্তু হেলালের পরিবারকে গান ছেড়ে ভিক্ষা করতেই বাধ্য করা হচ্ছে!

  • ডেস্ক রিপোর্টঃ
  • আপডেট সময় ১২:৩৫:১৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ ডিসেম্বর ২০২৫
  • ৫৫৬ বার পড়া হয়েছে

“নবীর শিক্ষা করোনা ভিক্ষা” শেখ হাবিবুর রহমানের একটি জনপ্রিয় কবিতা যা ভিক্ষাবৃত্তির পরিবর্তে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহের ওপর জোর দেয়। কবিতাটি একজন দরিদ্র ব্যক্তির আকুতি তুলে ধরে, যিনি নবীর কাছে সাহায্য চান, এবং নবী তাঁকে ভিক্ষা না করে পরিশ্রম করতে বলেন। এদিকে ভিক্ষাবৃত্তিকে ঘৃণা করে প্রায় ৫০ বছর ধরে গান গেয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিল্পী হেলাল মিয়া (৬৫)। তবে তার উপার্জনের পথ এখন বন্ধ রয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, মাদরাসা শিক্ষার্থীদের বাধার মুখে গত ছয় দিন ধরে তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা গান গাইতে পারছেন না।

 

বাদ্যযন্ত্র ভেঙে ফেলার হুমকির পাশাপাশি তাকে গান ছেড়ে ‘ভিক্ষাবৃত্তি’ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ষাটোর্ধ্ব এই বৃদ্ধ। ফলে গত এক সপ্তাহ ধরে রোজগারহীন হয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে তার পরিবার।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার নাটাই উত্তর ইউনিয়নের রাজঘর গ্রামের বাসিন্দা হেলাল মিয়া জন্ম থেকেই দৃষ্টিশক্তিহীন। শুধু তিনিই নন, তার পরিবারের চার ছেলে, এক মেয়ে ও তিন নাতি-নাতনিসহ মোট ৯ জন সদস্যই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। ভিক্ষাবৃত্তিকে ঘৃণা করে মারফতি, মুর্শিদী ও কাওয়ালীর মতো আধ্যাত্মিক গান শুনিয়ে উপার্জন করা অর্থে সংসার চালাতেন তিনি।

 

প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত জেলা শহরের পৌর মুক্তমঞ্চ মাঠে সন্তান ও নাতি-নাতনিদের নিয়ে গানের আসর বসাতেন হেলাল। তবে গত বুধবার (২৬ নভেম্বর) দুপুরে ছেদ পড়ে তাদের এই জীবন সংগ্রামে।

 

হেলাল মিয়া জানান, গত বুধবার সকালে কয়েকজন মাদরাসাছাত্র মুক্তমঞ্চ এলাকায় এসে তাদের গান-বাজনা বন্ধ করতে বলে। তারা নির্দেশ দেন গান ছেড়ে ভিক্ষাবৃত্তি করতে। নাহলে বাদ্যযন্ত্র ভেঙে ফেলবেন তারা। সেই ভয়ে আর গান গাইতে বের হননি তিনি।

 

আক্ষেপ করে হেলাল মিয়া বলেন, গত ছয় দিন ধরে গান বন্ধ, সঙ্গে আমাদের রোজগারও। আমরা দিন এনে দিন খাই। জমানো সামান্য কিছু টাকা ছিল আর কিছু ঋণ করেছি।

 

এভাবেই কোনোমতে চলছি। ভয়ে আর গান গাইতে যাচ্ছি না। এর আগেও কয়েক মাস আগে দুই দফায় গান-বাজনা বন্ধ করার হুমকি দেওয়া হয়েছিল।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি হাফিজুর রহমান মোল্লা কচি ঘটনাটিকে ‘দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছেন।

 

তিনি অতীতে হেলাল মিয়ার পরিবারকে নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন জানিয়ে বলেন, তাদের গানে বাধা দেওয়া ঠিক হয়নি। তাদের অভয় দিয়ে মঙ্গলবার থেকে আবারও মুক্তমঞ্চে গান গাইতে বলেছেন।

 

এদিকে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা হেফাজতে ইসলামের সভাপতি ও জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়া মাদরাসার প্রিন্সিপাল মুফতি মুবারক উল্লাহ বলেন, ‘আমাদের ছেলেরা (মাদরাসাছাত্র) বাধা দিয়েছে এমনটি আমার জানা নেই। আমাদের পক্ষ থেকে কোনো বাধা-নিষেধ নেই। তবে গান যেহেতু শরীয়তে নিষিদ্ধ তাই আমরা গান গাওয়ার অনুমতিও দিতে পারি না। তাদের পথে তারা চলুক, কেউ তাদের বাধা দেয়নি।’

 

জানতে চাইলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী পরিবারকে গান গাইতে বাধা দেওয়ার বিষয়টি আমাদের জানা নেই। এ বিষয়ে কেউ আমাদের কাছে অভিযোগও করেনি।

জনপ্রিয় সংবাদ

শাজাহান খানের বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পাহারায় যুবদল নেতা

নবীর শিক্ষা করোনা ভিক্ষা, কিন্তু হেলালের পরিবারকে গান ছেড়ে ভিক্ষা করতেই বাধ্য করা হচ্ছে!

আপডেট সময় ১২:৩৫:১৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ ডিসেম্বর ২০২৫

“নবীর শিক্ষা করোনা ভিক্ষা” শেখ হাবিবুর রহমানের একটি জনপ্রিয় কবিতা যা ভিক্ষাবৃত্তির পরিবর্তে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহের ওপর জোর দেয়। কবিতাটি একজন দরিদ্র ব্যক্তির আকুতি তুলে ধরে, যিনি নবীর কাছে সাহায্য চান, এবং নবী তাঁকে ভিক্ষা না করে পরিশ্রম করতে বলেন। এদিকে ভিক্ষাবৃত্তিকে ঘৃণা করে প্রায় ৫০ বছর ধরে গান গেয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিল্পী হেলাল মিয়া (৬৫)। তবে তার উপার্জনের পথ এখন বন্ধ রয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, মাদরাসা শিক্ষার্থীদের বাধার মুখে গত ছয় দিন ধরে তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা গান গাইতে পারছেন না।

 

বাদ্যযন্ত্র ভেঙে ফেলার হুমকির পাশাপাশি তাকে গান ছেড়ে ‘ভিক্ষাবৃত্তি’ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ষাটোর্ধ্ব এই বৃদ্ধ। ফলে গত এক সপ্তাহ ধরে রোজগারহীন হয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে তার পরিবার।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার নাটাই উত্তর ইউনিয়নের রাজঘর গ্রামের বাসিন্দা হেলাল মিয়া জন্ম থেকেই দৃষ্টিশক্তিহীন। শুধু তিনিই নন, তার পরিবারের চার ছেলে, এক মেয়ে ও তিন নাতি-নাতনিসহ মোট ৯ জন সদস্যই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। ভিক্ষাবৃত্তিকে ঘৃণা করে মারফতি, মুর্শিদী ও কাওয়ালীর মতো আধ্যাত্মিক গান শুনিয়ে উপার্জন করা অর্থে সংসার চালাতেন তিনি।

 

প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত জেলা শহরের পৌর মুক্তমঞ্চ মাঠে সন্তান ও নাতি-নাতনিদের নিয়ে গানের আসর বসাতেন হেলাল। তবে গত বুধবার (২৬ নভেম্বর) দুপুরে ছেদ পড়ে তাদের এই জীবন সংগ্রামে।

 

হেলাল মিয়া জানান, গত বুধবার সকালে কয়েকজন মাদরাসাছাত্র মুক্তমঞ্চ এলাকায় এসে তাদের গান-বাজনা বন্ধ করতে বলে। তারা নির্দেশ দেন গান ছেড়ে ভিক্ষাবৃত্তি করতে। নাহলে বাদ্যযন্ত্র ভেঙে ফেলবেন তারা। সেই ভয়ে আর গান গাইতে বের হননি তিনি।

 

আক্ষেপ করে হেলাল মিয়া বলেন, গত ছয় দিন ধরে গান বন্ধ, সঙ্গে আমাদের রোজগারও। আমরা দিন এনে দিন খাই। জমানো সামান্য কিছু টাকা ছিল আর কিছু ঋণ করেছি।

 

এভাবেই কোনোমতে চলছি। ভয়ে আর গান গাইতে যাচ্ছি না। এর আগেও কয়েক মাস আগে দুই দফায় গান-বাজনা বন্ধ করার হুমকি দেওয়া হয়েছিল।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি হাফিজুর রহমান মোল্লা কচি ঘটনাটিকে ‘দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছেন।

 

তিনি অতীতে হেলাল মিয়ার পরিবারকে নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন জানিয়ে বলেন, তাদের গানে বাধা দেওয়া ঠিক হয়নি। তাদের অভয় দিয়ে মঙ্গলবার থেকে আবারও মুক্তমঞ্চে গান গাইতে বলেছেন।

 

এদিকে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা হেফাজতে ইসলামের সভাপতি ও জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়া মাদরাসার প্রিন্সিপাল মুফতি মুবারক উল্লাহ বলেন, ‘আমাদের ছেলেরা (মাদরাসাছাত্র) বাধা দিয়েছে এমনটি আমার জানা নেই। আমাদের পক্ষ থেকে কোনো বাধা-নিষেধ নেই। তবে গান যেহেতু শরীয়তে নিষিদ্ধ তাই আমরা গান গাওয়ার অনুমতিও দিতে পারি না। তাদের পথে তারা চলুক, কেউ তাদের বাধা দেয়নি।’

 

জানতে চাইলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী পরিবারকে গান গাইতে বাধা দেওয়ার বিষয়টি আমাদের জানা নেই। এ বিষয়ে কেউ আমাদের কাছে অভিযোগও করেনি।