রাখাইন রাজ্যে মানবিক বিপর্যয়ের প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘ মহাসচিবের প্রস্তাবিত ত্রাণ চ্যানেলকে কেন্দ্র করে “বাংলাদেশ করিডোর দিয়েছে” — এমন অপপ্রচারকে ‘সর্বৈব মিথ্যা’ ও ‘চিলে কান নেওয়ার গল্প’ বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শুক্রবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. ইউনূস জানান, জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেস রাখাইন রাজ্যে মানবিক বিপর্যয়ের প্রেক্ষিতে একটি ত্রাণ চ্যানেলের প্রস্তাব করেছিলেন, যা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সহায়ক হতে পারত। কিন্তু বিষয়টি এখনো কেবল প্রস্তাবের পর্যায়ে রয়েছে।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ মিয়ানমারকে করিডোর দিয়েছে — এটি মিথ্যা, ভিত্তিহীন অপপ্রচার। এর পেছনে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে জনমনে বিভ্রান্তি ও অস্থিরতা সৃষ্টি করার অপচেষ্টা রয়েছে।”
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা অবস্থান করছে, যাদের মধ্যে ২০২৩ সাল থেকে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়কালে নতুন করে প্রায় ১ লাখ রোহিঙ্গা এসেছে রাখাইনের যুদ্ধাবস্থার কারণে। এই পরিস্থিতিতে সীমান্ত নিরাপত্তা রক্ষা ও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশ নানা উদ্যোগ নিয়েছে।
তিনি জানান, রোহিঙ্গা সংকটকে আবারও আন্তর্জাতিক এজেন্ডায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে জাতিসংঘ সদস্য রাষ্ট্ররা সেপ্টেম্বর ২০২৫-এ নিউইয়র্কে একটি উচ্চপর্যায়ের আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
একই সঙ্গে তিনি জানান, মিয়ানমার সরকার প্রথমবারের মতো ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসনযোগ্য হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। এ লক্ষ্যে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সাথেও যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।
ড. ইউনূস বলেন, “আমরা যত দেশে সফর করেছি, সেসব দেশের রাষ্ট্রীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলোচনা করেছি, তাদের সহানুভূতিশীল মনোভাব পেয়েছি।”
সবশেষে তিনি দেশের জনগণকে অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “এই জটিল সমস্যার সমাধানে আমরা আমাদের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাব, লক্ষ্যচ্যুত হব না।”