ঢাকা ০৯:০৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫, ১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

তেলআবিব কাঁপাচ্ছে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র, বহু এলাকায় বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ড

ইরানের ‘অপারেশন ট্রু প্রমিজ থ্রি’ অভিযানে ইসরায়েলের রাজধানী তেলআবিবসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি ও স্থাপনায় একযোগে ছোড়া হয়েছে কয়েকশ ক্ষেপণাস্ত্র। শুক্রবার গভীর রাতে শুরু হওয়া এই পাল্টা হামলায় কমপক্ষে ৩ জন নিহত ও ডজনখানেক মানুষ আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা। এ হামলায় নেভাতিম, ওভদা ও টেল নোফ ঘাঁটিসহ ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও সামরিক স্থাপনাগুলো সরাসরি টার্গেট হয়।

আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর তেলআবিবের বিভিন্ন ভবনে ভয়াবহ বিস্ফোরণ, অগ্নিকাণ্ড ও ধ্বংসযজ্ঞের ছবি সামনে এসেছে। ইসরায়েলি দমকলকর্মীরা বহু ঘণ্টা ধরে শহরের একটি উঁচু ভবনে আটকে পড়া বাসিন্দাদের উদ্ধারে কাজ করছেন।

তেলআবিবের একজন বাসিন্দা চেন গ্যাবিজন বলেন,
“সতর্কতা পাওয়ার পরপরই আমি নিচে ভূগর্ভস্থ আশ্রয়কেন্দ্রে দৌড়ে যাই। কিছু সময় পর এক বিশাল বিস্ফোরণের শব্দে সবকিছু কেঁপে ওঠে। চারপাশে ধোঁয়া, ধুলো, আতঙ্ক! আমরা যদি ঠিক সময়মতো নিচে নামতে না পারতাম, হয়তো কেউই বাঁচতাম না।”

ইরানি সেনাবাহিনীর ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি)-এর উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমাদি বাহিদি জানান,
“এই অভিযানে আমরা দেড় শতাধিক লক্ষ্যবস্তুতে একযোগে আঘাত করেছি। এটা ছিল আমাদের ওপর ইসরায়েলি আগ্রাসনের উপযুক্ত জবাব।”

ইরানি সংবাদমাধ্যম তাসনিম জানিয়েছে, নেভাতিম ও ওভদা বিমানঘাঁটি ছিল এ হামলার মূল লক্ষ্য, কারণ সেখান থেকেই ইরানে হামলা চালানো হয়েছিল বলে দাবি তাদের। এছাড়া ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা কমান্ড সেন্টার, বিভিন্ন ক্ষেপণাস্ত্র ডিফেন্স ইউনিট, প্রযুক্তি ও শিল্প ঘাঁটি, এবং পারমাণবিক গবেষণাগারগুলোও এই হামলার আওতায় পড়ে।

বিভিন্ন পর্যায়ে চালানো হয় হামলা
ইরান জানায়, হামলাটি কয়েকটি পর্বে পরিচালিত হয় এবং সর্বমোট কয়েকশ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে। এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো বিভিন্ন দিক থেকে একযোগে ছোড়া হয়, যাতে ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করে মূল লক্ষ্যে আঘাত হানা যায়। বহু স্থানে বিস্ফোরণ, বিদ্যুৎ বিভ্রাট এবং অগ্নিকাণ্ডের খবর পাওয়া গেছে।

এই হামলার মাধ্যমে ইরান একটি বার্তা দিতে চেয়েছে—তাদের ভূখণ্ডে বা গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক ও সামরিক ব্যক্তিত্বদের লক্ষ্য করে হামলা চালালে, তার জবাব আরও ভয়াবহভাবে ফিরিয়ে দেওয়া হবে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও পরিণতি
ইরানের এই প্রতিক্রিয়ার পর মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে সামরিক উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহল পরিস্থিতি শান্ত রাখতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টার তাগিদ দিচ্ছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিস্থিতি এখন এমন মোড় নিয়েছে, যেখানে প্রতিশোধ ও পাল্টা প্রতিশোধের রাজনীতির বাইরে কোনো পক্ষই সরছে না।

জনপ্রিয় সংবাদ

তেলআবিব কাঁপাচ্ছে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র, বহু এলাকায় বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ড

আপডেট সময় ০৮:২৬:০৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫

ইরানের ‘অপারেশন ট্রু প্রমিজ থ্রি’ অভিযানে ইসরায়েলের রাজধানী তেলআবিবসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি ও স্থাপনায় একযোগে ছোড়া হয়েছে কয়েকশ ক্ষেপণাস্ত্র। শুক্রবার গভীর রাতে শুরু হওয়া এই পাল্টা হামলায় কমপক্ষে ৩ জন নিহত ও ডজনখানেক মানুষ আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা। এ হামলায় নেভাতিম, ওভদা ও টেল নোফ ঘাঁটিসহ ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও সামরিক স্থাপনাগুলো সরাসরি টার্গেট হয়।

আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর তেলআবিবের বিভিন্ন ভবনে ভয়াবহ বিস্ফোরণ, অগ্নিকাণ্ড ও ধ্বংসযজ্ঞের ছবি সামনে এসেছে। ইসরায়েলি দমকলকর্মীরা বহু ঘণ্টা ধরে শহরের একটি উঁচু ভবনে আটকে পড়া বাসিন্দাদের উদ্ধারে কাজ করছেন।

তেলআবিবের একজন বাসিন্দা চেন গ্যাবিজন বলেন,
“সতর্কতা পাওয়ার পরপরই আমি নিচে ভূগর্ভস্থ আশ্রয়কেন্দ্রে দৌড়ে যাই। কিছু সময় পর এক বিশাল বিস্ফোরণের শব্দে সবকিছু কেঁপে ওঠে। চারপাশে ধোঁয়া, ধুলো, আতঙ্ক! আমরা যদি ঠিক সময়মতো নিচে নামতে না পারতাম, হয়তো কেউই বাঁচতাম না।”

ইরানি সেনাবাহিনীর ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি)-এর উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমাদি বাহিদি জানান,
“এই অভিযানে আমরা দেড় শতাধিক লক্ষ্যবস্তুতে একযোগে আঘাত করেছি। এটা ছিল আমাদের ওপর ইসরায়েলি আগ্রাসনের উপযুক্ত জবাব।”

ইরানি সংবাদমাধ্যম তাসনিম জানিয়েছে, নেভাতিম ও ওভদা বিমানঘাঁটি ছিল এ হামলার মূল লক্ষ্য, কারণ সেখান থেকেই ইরানে হামলা চালানো হয়েছিল বলে দাবি তাদের। এছাড়া ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা কমান্ড সেন্টার, বিভিন্ন ক্ষেপণাস্ত্র ডিফেন্স ইউনিট, প্রযুক্তি ও শিল্প ঘাঁটি, এবং পারমাণবিক গবেষণাগারগুলোও এই হামলার আওতায় পড়ে।

বিভিন্ন পর্যায়ে চালানো হয় হামলা
ইরান জানায়, হামলাটি কয়েকটি পর্বে পরিচালিত হয় এবং সর্বমোট কয়েকশ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে। এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো বিভিন্ন দিক থেকে একযোগে ছোড়া হয়, যাতে ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করে মূল লক্ষ্যে আঘাত হানা যায়। বহু স্থানে বিস্ফোরণ, বিদ্যুৎ বিভ্রাট এবং অগ্নিকাণ্ডের খবর পাওয়া গেছে।

এই হামলার মাধ্যমে ইরান একটি বার্তা দিতে চেয়েছে—তাদের ভূখণ্ডে বা গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক ও সামরিক ব্যক্তিত্বদের লক্ষ্য করে হামলা চালালে, তার জবাব আরও ভয়াবহভাবে ফিরিয়ে দেওয়া হবে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও পরিণতি
ইরানের এই প্রতিক্রিয়ার পর মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে সামরিক উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহল পরিস্থিতি শান্ত রাখতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টার তাগিদ দিচ্ছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিস্থিতি এখন এমন মোড় নিয়েছে, যেখানে প্রতিশোধ ও পাল্টা প্রতিশোধের রাজনীতির বাইরে কোনো পক্ষই সরছে না।