ঢাকা ০৫:২১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫, ৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আকাশ প্রতিরক্ষা চায়নি ইরান, হামলার নিন্দায় উত্তাল রাশিয়া

ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলার পর কূটনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে তীব্র প্রতিক্রিয়া ও প্রতিচিন্তা। এমন এক সময়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন জানিয়েছেন, ইরান আগে থেকেই রাশিয়ার প্রস্তাবিত যৌথ আকাশ প্রতিরক্ষা প্রকল্পে আগ্রহ দেখায়নি।

বৃহস্পতিবার রুশ বার্তা সংস্থা তাস আয়োজিত একটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সম্মেলনে পুতিন বলেন, “আমরা একসময় আমাদের ইরানি বন্ধুদের সঙ্গে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে যৌথভাবে কাজ করার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। কিন্তু তখন তারা এতে কোনো আগ্রহ দেখাননি।”

পুতিন আরও জানান, চলতি বছরের জানুয়ারিতে মস্কো-তেহরানের মধ্যে কৌশলগত অংশীদারত্ব চুক্তির সময়ও প্রতিরক্ষা বিষয়ক কোনো ধারা অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। “বাস্তবতা হলো, এ নিয়ে ইরানের সঙ্গে আলোচনার মতোও কিছু ছিল না,” বলেন তিনি।

উল্লেখ্য, গত মে মাসে ইরানের পার্লামেন্ট মস্কোর সঙ্গে ২০ বছর মেয়াদি কৌশলগত অংশীদারত্ব চুক্তি অনুমোদন করে, যার ওপর পুতিন ও ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান ১৭ জানুয়ারি স্বাক্ষর করেন।

এদিকে, শনিবার মধ্যরাতে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তিনটি উচ্চ-নিরাপত্তা সম্পন্ন পারমাণবিক স্থাপনায়—নাতাঞ্জ, ফর্দো ও ইস্পাহান—তীব্র বিমান হামলা চালায়। এই হামলায় ইসরায়েলকেও সহযোগী হিসেবে দেখা গেছে। এর প্রতিক্রিয়ায় বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে।

রোববার ভোরে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, “যুক্তরাষ্ট্রের এই হামলা একেবারেই দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং এটি আন্তর্জাতিক আইন, জাতিসংঘ সনদ ও নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবের সরাসরি লঙ্ঘন। যেকোনো যুক্তি দিয়েও এর বৈধতা প্রমাণ করা যাবে না।”

রুশ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এই হামলার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাতের ঝুঁকি ‘অত্যন্ত বাড়িয়ে’ দিয়েছে এবং একটি নতুন যুদ্ধের দরজা খুলে দিয়েছে।

ইরানের পক্ষ থেকেও এসেছে কড়া প্রতিক্রিয়া। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি বলেন, “এই হামলা জাতিসংঘ সনদ, আন্তর্জাতিক আইন ও এনপিটি (পরমাণু অস্ত্র প্রসার রোধ চুক্তি) এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।”

তিনি এক্সে দেওয়া বিবৃতিতে হুঁশিয়ার করে বলেন, “ইরান নিজেদের সুরক্ষার জন্য যেকোনো প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার অধিকার রাখে। এর গুরুতর পরিণতি হবে।”

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পৃথক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রকে অভিযুক্ত করে বলা হয়, “একজন নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্র হয়ে যুক্তরাষ্ট্র শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়ে বৈশ্বিক সুরক্ষা কাঠামোকেই চ্যালেঞ্জ করেছে।”

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরান যদি এখন রাশিয়ার প্রস্তাবে ফিরে আসে এবং যৌথ প্রতিরক্ষা প্রকল্পে অংশ নেয়, তবে তা মধ্যপ্রাচ্যে শক্তির ভারসাম্য আরও বদলে দিতে পারে। অন্যদিকে, পশ্চিমা জোট ও জাতিসংঘের ওপর আস্থা হারানোর প্রবণতা আরও বাড়বে বলেও আশঙ্কা করছেন কূটনীতিকরা।

জনপ্রিয় সংবাদ

ইরানে মার্কিন হামলার প্রতিবাদে কলকাতায় এসইউসিআই (কমিউনিস্ট)-এর বিক্ষোভ

আকাশ প্রতিরক্ষা চায়নি ইরান, হামলার নিন্দায় উত্তাল রাশিয়া

আপডেট সময় ০৭:৩২:৫৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ জুন ২০২৫

ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলার পর কূটনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে তীব্র প্রতিক্রিয়া ও প্রতিচিন্তা। এমন এক সময়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন জানিয়েছেন, ইরান আগে থেকেই রাশিয়ার প্রস্তাবিত যৌথ আকাশ প্রতিরক্ষা প্রকল্পে আগ্রহ দেখায়নি।

বৃহস্পতিবার রুশ বার্তা সংস্থা তাস আয়োজিত একটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সম্মেলনে পুতিন বলেন, “আমরা একসময় আমাদের ইরানি বন্ধুদের সঙ্গে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে যৌথভাবে কাজ করার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। কিন্তু তখন তারা এতে কোনো আগ্রহ দেখাননি।”

পুতিন আরও জানান, চলতি বছরের জানুয়ারিতে মস্কো-তেহরানের মধ্যে কৌশলগত অংশীদারত্ব চুক্তির সময়ও প্রতিরক্ষা বিষয়ক কোনো ধারা অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। “বাস্তবতা হলো, এ নিয়ে ইরানের সঙ্গে আলোচনার মতোও কিছু ছিল না,” বলেন তিনি।

উল্লেখ্য, গত মে মাসে ইরানের পার্লামেন্ট মস্কোর সঙ্গে ২০ বছর মেয়াদি কৌশলগত অংশীদারত্ব চুক্তি অনুমোদন করে, যার ওপর পুতিন ও ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান ১৭ জানুয়ারি স্বাক্ষর করেন।

এদিকে, শনিবার মধ্যরাতে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তিনটি উচ্চ-নিরাপত্তা সম্পন্ন পারমাণবিক স্থাপনায়—নাতাঞ্জ, ফর্দো ও ইস্পাহান—তীব্র বিমান হামলা চালায়। এই হামলায় ইসরায়েলকেও সহযোগী হিসেবে দেখা গেছে। এর প্রতিক্রিয়ায় বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে।

রোববার ভোরে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, “যুক্তরাষ্ট্রের এই হামলা একেবারেই দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং এটি আন্তর্জাতিক আইন, জাতিসংঘ সনদ ও নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবের সরাসরি লঙ্ঘন। যেকোনো যুক্তি দিয়েও এর বৈধতা প্রমাণ করা যাবে না।”

রুশ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এই হামলার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাতের ঝুঁকি ‘অত্যন্ত বাড়িয়ে’ দিয়েছে এবং একটি নতুন যুদ্ধের দরজা খুলে দিয়েছে।

ইরানের পক্ষ থেকেও এসেছে কড়া প্রতিক্রিয়া। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি বলেন, “এই হামলা জাতিসংঘ সনদ, আন্তর্জাতিক আইন ও এনপিটি (পরমাণু অস্ত্র প্রসার রোধ চুক্তি) এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।”

তিনি এক্সে দেওয়া বিবৃতিতে হুঁশিয়ার করে বলেন, “ইরান নিজেদের সুরক্ষার জন্য যেকোনো প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার অধিকার রাখে। এর গুরুতর পরিণতি হবে।”

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পৃথক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রকে অভিযুক্ত করে বলা হয়, “একজন নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্র হয়ে যুক্তরাষ্ট্র শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়ে বৈশ্বিক সুরক্ষা কাঠামোকেই চ্যালেঞ্জ করেছে।”

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরান যদি এখন রাশিয়ার প্রস্তাবে ফিরে আসে এবং যৌথ প্রতিরক্ষা প্রকল্পে অংশ নেয়, তবে তা মধ্যপ্রাচ্যে শক্তির ভারসাম্য আরও বদলে দিতে পারে। অন্যদিকে, পশ্চিমা জোট ও জাতিসংঘের ওপর আস্থা হারানোর প্রবণতা আরও বাড়বে বলেও আশঙ্কা করছেন কূটনীতিকরা।