বিশ্বজুড়ে জ্বালানি সংকট ও ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে তেলের দাম নিয়ে সতর্ক বার্তা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সোমবার নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ স্যোশালে দেওয়া এক পোস্টে তিনি তেল উৎপাদনকারী ও বাজার নিয়ন্ত্রকদের উদ্দেশ করে বলেন,
“তেলের দাম কম রাখুন। আমি নজর রাখছি। আপনারা শত্রুর হাতে খেলার সুযোগ করে দিচ্ছেন। এটি করবেন না!”
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এই বার্তাটি মূলত ওপেক প্লাসভুক্ত দেশ এবং নিজ দেশের তেল কোম্পানিগুলোকে লক্ষ্য করে দেওয়া হয়েছে, যদিও পোস্টে সরাসরি কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি।
ট্রাম্পের এই বার্তাটি এমন এক সময় এসেছে যখন মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে যুদ্ধের ছায়া ঘনিয়েছে।
গত শনিবার (২২ জুন) যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ফোরদো, নাতাঞ্জ ও ইস্পাহান—তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পরমাণু স্থাপনায় বাঙ্কার-বিধ্বংসী বোমা হামলা চালায়। এই ঘটনার পর বিশ্ববাজারে তেলের দামে বড় ধরনের ওঠানামা দেখা গেছে।
রোববার সন্ধ্যায় ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম হঠাৎ ৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ব্যারেলপ্রতি ৮১ ডলার, যা পরে আবার কিছুটা কমে যায়।
বিশ্লেষকদের মতে, “মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়লে হরমুজ প্রণালী হয়ে তেল রপ্তানি বিঘ্নিত হতে পারে”—এই শঙ্কাই বাজারে অস্থিরতা বাড়াচ্ছে।
রোববার ইরানের পার্লামেন্টে হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেওয়ার বিল পাস হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত চ্যানেল প্রেস টিভি। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি।
মধ্যপ্রাচ্যের এ প্রণালী দিয়ে বিশ্বজুড়ে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ তেল সরবরাহ হয়ে থাকে, যা বন্ধ হয়ে গেলে বৈশ্বিক অর্থনীতি বড় ধরনের ধাক্কা খাবে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ট্রাম্প প্রশাসনের নিরাপত্তা উপদেষ্টা মার্কো রুবিও ফক্স নিউজকে বলেছেন,
“ইরান যদি হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে, তাহলে সেটা হবে তাদের অর্থনৈতিক আত্মহত্যা।”
তিনি জানান, এই বিষয়ে চীনের সহযোগিতা চেয়েছে ওয়াশিংটন, যাতে তারা তেহরানকে এমন পদক্ষেপ থেকে বিরত রাখতে প্রভাব রাখতে পারে।
বিশ্বব্যাপী বাজারে এখন স্পষ্ট সংকেত—তেলের দাম বাড়লে শুধু উৎপাদক নয়, উপভোক্তা দেশগুলোও চাপে পড়বে। ট্রাম্প তার বার্তায় সেই বিষয়টিই তুলে ধরতে চেয়েছেন।
“আপনারা শত্রুর হাতে খেলার সুযোগ করে দিচ্ছেন”—এই বাক্যে তিনি তেলের দামের সঙ্গে নিরাপত্তা ও কৌশলগত ঝুঁকির সম্পর্কটিও তুলে ধরেছেন।
সূত্র: এনবিসি নিউজ, বিবিসি, ফক্স নিউজ, প্রেস টিভি.