“ইনশাআল্লাহ, ৪৪ বিসিএসে আমি প্রশাসন ক্যাডার হব”—নিজের পড়ার টেবিলে এমন একটি বাক্য লিখে রেখেছিলেন মেহেদী হাসান। প্রতিদিন দেখতেন সেই বাক্য, নিজের ভেতর তৈরি করতেন অনুপ্রেরণা। অবশেষে সেটিই বাস্তবে রূপ নিল। ৪৪তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের এই শিক্ষার্থীর প্রশাসন ক্যাডারে অবস্থান ১০২তম, আর এটি ছিল তার প্রথম বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ।
মেহেদীর যাত্রা শুরু মুন্সিগঞ্জের মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের মহেশপুর গ্রাম থেকে। ২০১৪ সালে মাকহাটি জি.সি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও ২০১৬ সালে সরকারি হরগঙ্গা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন তিনি। এরপর ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।
মাত্র ২৪ বছর বয়সে ৯ম গ্রেডের সরকারি চাকরি পান জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে, যেখানে তিনি এখন সহকারী পরিচালক হিসেবে কর্মরত (চাকরিতে যোগ দিয়েছেন ২০২৩ সালের ২১ ডিসেম্বর)। এর দুই বছর পর, ২৬ বছর বয়সে প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হলেন।
ঢাকাপোস্টকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মেহেদী বলেন,
“আমি গ্রামের ছেলে। লজিংয়ে থেকে, নানা অভাব-অনটনের মধ্য দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছি। তৃতীয় বর্ষ থেকেই প্রশাসন ক্যাডারের স্বপ্ন দেখি। আমার পড়ার টেবিলে লিখে রেখেছিলাম ‘ইনশাআল্লাহ, ৪৪ বিসিএসে আমি প্রশাসন ক্যাডার হব।’ প্রতিদিন চোখে পড়ত সেই বাক্য।”
তিনি আরও বলেন,
“টেবিলে লিখে রাখতাম সহকারী কমিশনার (ভূমি), ডিসি, বিভাগীয় কমিশনার, যুগ্ম সচিব, সচিব— এগুলো দেখে নিজের ভেতর মোটিভেশন নিতাম।”
মেহেদীর মা ছিলেন তার বড় অনুপ্রেরণা। কিন্তু করোনা মহামারির সময় লিভার জটিলতায় তিনি মারা যান। আর পেছনে ছিলেন তার বাবা, একজন আলুচাষী কৃষক। মেহেদীর ভাষায়,
“অভাব-অনটনের কারণে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না নিলেও আব্বা স্বশিক্ষিত। নিজে কষ্ট করেও আমাকে কাজে নামতে দেননি।”