গাজীপুর মহানগরের ব্যস্ততম চৌরাস্তা এলাকায় প্রকাশ্যে কুপিয়ে এবং গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে স্থানীয় সাংবাদিক মো. আসাদুজ্জামান তুহিনকে। বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) সন্ধ্যা ৭টার দিকে ঈদগাহ মার্কেট এলাকায় ঘটে এ নির্মম হত্যাকাণ্ড। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও এবং প্রাথমিক পোস্টগুলোতে ঘটনাটিকে ‘চাঁদাবাজির লাইভ করার কারণে হত্যা’ বলে দাবি করা হলেও, অনুসন্ধানে উঠে এসেছে ভিন্ন চিত্র—সাংবাদিক তুহিন নিহত হয়েছেন নারীঘটিত একটি ঘটনার ভিডিও ধারণ করতে গিয়ে।
নিহত তুহিন (৩২) ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া থানার ভাটিপাড়া গ্রামের হাসান জামালের ছেলে। তিনি দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ পত্রিকার গাজীপুর প্রতিনিধি ছিলেন। সাংবাদিকতার পাশাপাশি তিনি ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি হিসেবেও কাজ করতেন।
তুহিনের বন্ধু ও প্রত্যক্ষদর্শী শামিম জানান, সন্ধ্যায় তারা একসঙ্গে হেঁটে যাচ্ছিলেন। চান্দনা চৌরাস্তার মোড়ে এক নারী ও পুরুষের মধ্যে বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে হাতাহাতি শুরু হলে, একদল যুবক ওই পুরুষকে কুপিয়ে আহত করে। ঘটনাটি মোবাইলে ধারণ করতে যান সাংবাদিক তুহিন। তখনই দুর্বৃত্তরা তাকে ভিডিও মুছে ফেলতে বলে। তুহিন রাজি না হওয়ায় তাকে ধাওয়া করে এবং একপর্যায়ে ধরিয়ে নিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায়।
স্থানীয়রা জানান, ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকলেও কেউ তুহিনকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসেননি। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ধারালো দা ও চাপাতির ভয়ে সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। পুলিশ জানায়, ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের ধরতে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ ও তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহের কাজ চলছে।
সাংবাদিক তুহিন প্রায়ই গাজীপুর শহরের অনিয়ম, অব্যবস্থা ও নাগরিক দুর্ভোগ নিয়ে সোচ্চার ছিলেন। তার ফেসবুক আইডিতে চাঁদাবাজি সংক্রান্ত কোনো লাইভ পাওয়া না গেলেও, রাস্তার সমস্যাসহ নানা দুর্ভোগের চিত্র নিয়মিত প্রকাশ করতেন। ঘটনার ঘণ্টাখানেক আগেও ‘যেমন খুশি তেমন রাস্তা পার হওয়ার দৃশ্য’ শিরোনামে একটি ভিডিও আপলোড করেন তিনি।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার মো. রবিউল ইসলাম জানান, সন্ধ্যায় বাদশা মিয়া নামে এক ব্যক্তি ও এক নারী গোলাপীর মধ্যে বিবাদের সময় সেই নারীকে আঘাত করেন বাদশা। পরে ওই নারীর পক্ষের সন্ত্রাসীরা বাদশাকে কুপিয়ে আহত করে। এ দৃশ্য ভিডিও করছিলেন সাংবাদিক তুহিন। সেটিই তার মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
পুলিশ আরও জানায়, গোলাপী নামে ওই নারী একজন পেশাদার ‘কলগার্ল’। প্রতারণার ফাঁদ পেতে সন্ত্রাসীদের সহায়তায় মানুষের কাছ থেকে অর্থ আদায় করাই তার মূল কাজ।