আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বলেছেন, বাংলাদেশের বামপন্থি রাজনীতিবিদরা ১৯৪৭ সাল থেকেই বাঙালি মুসলমানদের বিরুদ্ধে কাজ করে আসছেন এবং তারা ভারতের দালালি করেছেন। তাঁর দাবি, বাঙালি ও মুসলমানের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই, কিন্তু সেক্যুলার শক্তি পরিকল্পিতভাবে এ দুইয়ের মধ্যে বিভাজন তৈরি করেছে। তিনি বলেন, বাঙালি মুসলমানদের আইডেনটিটি ক্রাইসিস সৃষ্টি হয়েছে, আর এ সংকট কাটিয়ে উঠতে হলে বাঙালি মুসলমানদের এক ধরনের রেনেসাঁর জন্য সবাইকে কাজ করতে হবে।
শনিবার সন্ধ্যায় সিলেট জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে গার্ডিয়ান পাবলিকেশন্স আয়োজিত ‘সিলেট গণভোট ও মুসলিম ভৌগোলিক জাতীয়তাবাদ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। মাহমুদুর রহমান বলেন, স্বাধীনতা ধরে রাখতে হলে নিজেদের ইতিহাস নিজেদেরই লিখতে হবে। তরুণ প্রজন্মকে ইতিহাসচর্চায় মনোযোগী হতে হবে, কারণ এটি আমাদের আইডেনটিটি। স্বাধীনতা টিকিয়ে রাখতে হলে বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক চর্চা জোরদার করতে হবে।
তিনি সিলেটের জনগণের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, আল্লাহর রহমত এবং সিলেটের পূর্বপুরুষদের ভোটের কারণেই সিলেট পাকিস্তানে যোগ দিয়েছিল। পাকিস্তানে যোগ না দিলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আসত না। তাঁর মতে, ইতিহাস সাহিত্য নয় যে মনের মাধুরী মিশিয়ে লেখা যায়, ইতিহাসকে নিরপেক্ষভাবে উপস্থাপন করতে হবে।
ভারতের প্রতি অভিযোগ তুলে মাহমুদুর রহমান বলেন, দেশভাগের সময় প্রথম অন্যায় ছিল গুরদাসপুর পাকিস্তানকে না দেওয়া। গুরদাসপুর পাকিস্তানের হাতে গেলে কাশ্মীর এতদিনে স্বাধীন হতো। দ্বিতীয় অন্যায় ছিল করিমগঞ্জ পাকিস্তানকে না দেওয়া, যা ভারতের স্বার্থে আটকে রাখা হয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, স্বদেশি আন্দোলন মূলত মুসলমানবিরোধী ছিল, কিন্তু সেক্যুলার মিডিয়া সে ইতিহাস চর্চা করে না। কারণ কেউ সে আলোচনা তুললে তাকে মৌলবাদী বা হিন্দুবিদ্বেষী বলা হয়। তাঁর মতে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আমার সোনার বাংলা রচনা করেছিলেন বাংলার বিরোধিতার প্রেক্ষাপটে, কলকাতার শিক্ষিত শ্রেণি সবসময় নিজেদের স্বার্থেই আন্দোলন করেছে এবং নিজেদের কৃষ্টি-কালচার মুসলমানদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে। ভারতপন্থি বুদ্ধিজীবীরাও সেই ধারা বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠা করেছে।
ইতিহাসের ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, আজ থেকে এক হাজার বছর আগে বাংলা নামে কোনো ভূখণ্ড ছিল না, ছিল ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনেক অঞ্চল। প্রকৃত বাংলা গঠিত হয়েছিল মুসলমান শাসক শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহ ও পরে আকবরের শাসনামলে। নীহাররঞ্জন রায়ের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, হিন্দুরা হাজার বছরেও বাংলা গঠন করতে পারেনি। তাঁর মতে, আবহমান বাংলার ধারণা খুঁজতে হলে মুসলমান শাসকদের ইতিহাসে ফিরে যেতে হবে, কলকাতার ধার করা কনসেপ্ট দিয়ে নয়।