ঢাকা ০১:৫২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৭ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

টিসিবি কার্ড থেকে বঞ্চিত গরিব-দুস্থরা, বিতরণ বন্ধ হয়ে আছে ১০ মাস

  • ডেস্ক রিপোর্টঃ
  • আপডেট সময় ১১:৩৫:৪৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • ৫৩১ বার পড়া হয়েছে

 

ট্রাক দুর্ঘটনায় একটি পা হারিয়েছেন মাসদার আলী (৫০)। এখন এক পায়ে ভর করে বাজারে ঝাড়ু দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি। মাস শেষে পান মাত্র সাড়ে চার হাজার টাকা। সেই টাকায় কোনোমতে চলে সংসার। আগে টিসিবির একটি কার্ড থাকায় কিছুটা স্বস্তি মিলত তার পরিবারে। কিন্তু প্রায় ৯ মাস আগে এলাকার সবার কার্ড জমা নেওয়ার পর নতুন তালিকা করা হয়। নতুন তালিকায় নাম নেই মাসদারের, হাতে পাননি নতুন কার্ডও।

মাসদারের বাড়ি রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) ৩ নম্বর ওয়ার্ডে। প্রায় ১০ মাস ধরে এ ওয়ার্ডে টিসিবির পণ্য বিতরণ বন্ধ রয়েছে। স্থানীয় কাউন্সিলরের কার্যালয়ে পুরোনো কার্ড জমা নেওয়ার পর সিটি করপোরেশন নতুন তালিকা তৈরির দায়িত্ব দেয় একটি কমিটিকে। ওই তালিকা অনুযায়ী কিছু মানুষকে কার্ড দেওয়া হলেও বাদ পড়েছেন মাসদারের মতো অনেক প্রতিবন্ধী, বিধবা ও দিনমজুর।

আক্ষেপ করে মাসদার আলী বলেন, “আমি প্রতিবন্ধী মানুষ। সবাই সাহায্য করে; কিন্তু তালিকা থেকে আমাকে বাদ দেওয়া হবে, তা ভাবিনি। গত ১০ মাস ধরে একজনও কোনো পণ্য পায়নি।”

শুধু মাসদার নন, হতাশা প্রকাশ করেছেন রংমিস্ত্রি বৃদ্ধ আজাদ আলী (৬০) ও বিধবা নিলুফা বিবি (৬৫)। তাদের অভিযোগ, প্রকৃত দুস্থদের বাদ দিয়ে স্বজনপ্রীতি ও দলীয় বিবেচনায় কার্ড বিতরণ করা হয়েছে।

অভিযোগ আর পাল্টা অভিযোগ

স্থানীয় বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেন, টিসিবির নতুন তালিকা প্রণয়নে অনিয়ম হয়েছে। ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি সালমগীর হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শামীম হোসেন স্বপন জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন। এতে বলা হয়, প্রকৃত গরিব ও দুস্থদের বাদ দিয়ে সুবিধাভোগীদের কার্ড দেওয়া হয়েছে। অভিযোগের পরই নতুন কার্ড বিতরণ কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।

অন্যদিকে, সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত বছরের আগস্টে আওয়ামী সরকারের পতনের পর স্থানীয় জামায়াত ও বিএনপির নেতাদের দাবির ভিত্তিতে নতুন কমিটি গঠন করা হয়। গবেষণা কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমানের তত্ত্বাবধানে এ কমিটিতে বিএনপি ও জামায়াত নেতাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পরবর্তীতে তারা নতুন তালিকা করে।

তবে কমিটির ভেতরেও দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে। বিএনপি নেতা তাজ উদ্দিন সেন্টু অভিযোগ করেন, “আমাদের তালিকা করতে দেওয়া হচ্ছে না। আগের লোকজনই রাখতে চাইছে অনেকে।” আবার জামায়াত নেতা মনিরুজ্জামান সেন্টু বলেন, “অভিযোগ এসেছে বলেই বিতরণ বন্ধ। প্রকৃত যোগ্যরা কার্ড পাবেন, আর সচ্ছলদের বাদ দেওয়া হবে।”

প্রশাসনের অবস্থান

রাসিকের ওয়ার্ড কার্যালয়ের সচিব শামসুল ইসলাম বলেন, “অভিযোগ পাওয়ার পর আপাতত বিতরণ বন্ধ রাখা হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি জানে। চেষ্টা চলছে প্রকৃত দুস্থদের কার্ড দেওয়ার।”

এদিকে গরিব-দুস্থ মানুষের একমাত্র ভরসা ছিল টিসিবির এই কার্ড। দীর্ঘ ১০ মাস ধরে বিতরণ বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন মাসদার আলী, আজাদ আলী, নিলুফা বিবির মতো অসংখ্য অসহায় মানুষ।

জনপ্রিয় সংবাদ

টিসিবি কার্ড থেকে বঞ্চিত গরিব-দুস্থরা, বিতরণ বন্ধ হয়ে আছে ১০ মাস

আপডেট সময় ১১:৩৫:৪৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

 

ট্রাক দুর্ঘটনায় একটি পা হারিয়েছেন মাসদার আলী (৫০)। এখন এক পায়ে ভর করে বাজারে ঝাড়ু দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি। মাস শেষে পান মাত্র সাড়ে চার হাজার টাকা। সেই টাকায় কোনোমতে চলে সংসার। আগে টিসিবির একটি কার্ড থাকায় কিছুটা স্বস্তি মিলত তার পরিবারে। কিন্তু প্রায় ৯ মাস আগে এলাকার সবার কার্ড জমা নেওয়ার পর নতুন তালিকা করা হয়। নতুন তালিকায় নাম নেই মাসদারের, হাতে পাননি নতুন কার্ডও।

মাসদারের বাড়ি রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) ৩ নম্বর ওয়ার্ডে। প্রায় ১০ মাস ধরে এ ওয়ার্ডে টিসিবির পণ্য বিতরণ বন্ধ রয়েছে। স্থানীয় কাউন্সিলরের কার্যালয়ে পুরোনো কার্ড জমা নেওয়ার পর সিটি করপোরেশন নতুন তালিকা তৈরির দায়িত্ব দেয় একটি কমিটিকে। ওই তালিকা অনুযায়ী কিছু মানুষকে কার্ড দেওয়া হলেও বাদ পড়েছেন মাসদারের মতো অনেক প্রতিবন্ধী, বিধবা ও দিনমজুর।

আক্ষেপ করে মাসদার আলী বলেন, “আমি প্রতিবন্ধী মানুষ। সবাই সাহায্য করে; কিন্তু তালিকা থেকে আমাকে বাদ দেওয়া হবে, তা ভাবিনি। গত ১০ মাস ধরে একজনও কোনো পণ্য পায়নি।”

শুধু মাসদার নন, হতাশা প্রকাশ করেছেন রংমিস্ত্রি বৃদ্ধ আজাদ আলী (৬০) ও বিধবা নিলুফা বিবি (৬৫)। তাদের অভিযোগ, প্রকৃত দুস্থদের বাদ দিয়ে স্বজনপ্রীতি ও দলীয় বিবেচনায় কার্ড বিতরণ করা হয়েছে।

অভিযোগ আর পাল্টা অভিযোগ

স্থানীয় বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেন, টিসিবির নতুন তালিকা প্রণয়নে অনিয়ম হয়েছে। ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি সালমগীর হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শামীম হোসেন স্বপন জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন। এতে বলা হয়, প্রকৃত গরিব ও দুস্থদের বাদ দিয়ে সুবিধাভোগীদের কার্ড দেওয়া হয়েছে। অভিযোগের পরই নতুন কার্ড বিতরণ কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।

অন্যদিকে, সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত বছরের আগস্টে আওয়ামী সরকারের পতনের পর স্থানীয় জামায়াত ও বিএনপির নেতাদের দাবির ভিত্তিতে নতুন কমিটি গঠন করা হয়। গবেষণা কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমানের তত্ত্বাবধানে এ কমিটিতে বিএনপি ও জামায়াত নেতাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পরবর্তীতে তারা নতুন তালিকা করে।

তবে কমিটির ভেতরেও দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে। বিএনপি নেতা তাজ উদ্দিন সেন্টু অভিযোগ করেন, “আমাদের তালিকা করতে দেওয়া হচ্ছে না। আগের লোকজনই রাখতে চাইছে অনেকে।” আবার জামায়াত নেতা মনিরুজ্জামান সেন্টু বলেন, “অভিযোগ এসেছে বলেই বিতরণ বন্ধ। প্রকৃত যোগ্যরা কার্ড পাবেন, আর সচ্ছলদের বাদ দেওয়া হবে।”

প্রশাসনের অবস্থান

রাসিকের ওয়ার্ড কার্যালয়ের সচিব শামসুল ইসলাম বলেন, “অভিযোগ পাওয়ার পর আপাতত বিতরণ বন্ধ রাখা হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি জানে। চেষ্টা চলছে প্রকৃত দুস্থদের কার্ড দেওয়ার।”

এদিকে গরিব-দুস্থ মানুষের একমাত্র ভরসা ছিল টিসিবির এই কার্ড। দীর্ঘ ১০ মাস ধরে বিতরণ বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন মাসদার আলী, আজাদ আলী, নিলুফা বিবির মতো অসংখ্য অসহায় মানুষ।