কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে পল্লী বিদ্যুৎ গ্রাহকদের বিদ্যুৎ বিল নিয়ে বিস্তর অনিয়ম ও জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে। মিটার রিডিংয়ে কারসাজি, অতিরিক্ত ইউনিট দেখানো এবং মনগড়া বিলের মাধ্যমে প্রতি মাসে কোটি টাকারও বেশি অর্থ লোপাট করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী গ্রাহকরা।
অভিযোগ অনুযায়ী, প্রতি বছর মার্চ–এপ্রিল মাস থেকে গ্রাহকদের বিদ্যুৎ ব্যবহার অস্বাভাবিক হারে বেশি দেখানো শুরু হয়। এতে করে অধিক ইউনিট ব্যবহারের আওতায় গ্রাহকদের উচ্চ রেটের বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে। পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত চার্জ অনুযায়ী, ইউনিট যত বাড়ে, ইউনিটপ্রতি বিলের হারও তত বাড়ে। এই ক্রমবর্ধমান রেটকে কাজে লাগিয়েই বাড়তি বিল আদায় করা হচ্ছে বলে দাবি ভুক্তভোগীদের।
পৌর সদরের জাকির হোসেন জানান, মার্চ মাসে তার বিল আসে ৮০ ইউনিট ব্যবহারে ৪৬৪ টাকা, অথচ এপ্রিল মাসে লোডশেডিংয়ের মাঝেও তার ব্যবহৃত ইউনিট দেখানো হয়েছে ২৩৫, যার বিল ১৫৯২ টাকা।
একই ধরনের অভিযোগ করেছেন বোয়ালিয়া গ্রামের সামছুন্নাহার ও মিলন। সামছুন্নাহারের এপ্রিল মাসের বিল ১৭৩৮ টাকা, যেখানে মার্চে ছিল ৪১৬ টাকা। মিলনের বিল ৪১৮ টাকা থেকে বেড়ে ১৪২৮ টাকা হয়েছে এপ্রিলে।
বোয়ালিয়া এলাকার বাসিন্দা কবির মিয়া জানান, জুলাই মাসে তার বিল ছিল মাত্র ৩০০ টাকা, আগস্টে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩১০০ টাকায়। তার দাবি, এটি একটি ‘ভুতুড়ে বিল’।
চর পুখিয়ার আমিনুল ইসলাম জানান, মার্চে তার ব্যবহৃত ইউনিট ছিল ৩৬০, কিন্তু এপ্রিলে দেখানো হয়েছে ৯৯০ ইউনিট।
স্থানীয় এহসান আলফারাবি বলেন, আমার বাসার মেইন সুইচ ৮ মাস ধরে বন্ধ। তবুও প্রতি মাসে ৭০০-৯০০ টাকা বিল আসছে। মিটার ঘোরে না, লাল বাতিও জ্বলে না। এটা স্রেফ গড় বিল বা ত্রুটিপূর্ণ মিটারের প্রতিফলন। পল্লী বিদ্যুৎ আমাদের সঙ্গে মনস্তাত্ত্বিক নির্যাতন চালাচ্ছে।
ফেকামারা ও ঝাকালিয়া এলাকার বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন, জুলাই মাসে কোনো মিটার রিডার মিটার রিডিং নিতে আসেনি। অথচ বিল এসেছে কয়েকগুণ বেশি।
পল্লী বিদ্যুৎ কটিয়াদী জোনাল অফিসের কিছু রিডার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমরা নিয়মিত মিটার রিডিং নিয়ে থাকি। তবে এলাকাবাসী দাবি করেছে, বাস্তবে সেটা ঘটছে না।
গ্রাহকরা বলছেন, গ্রাহকরা বিদ্যুৎ অফিসে অভিযোগ জানাতে গেলে তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়। ফোন করলে অভিযোগ কেন্দ্র ‘ইচ্ছাকৃতভাবে’ ব্যস্ত রাখা হয়। অনেক কষ্টে সংযোগ পেলে কর্মকর্তারা বলেন, দেশ যেমন চলছে, বিদ্যুৎও তেমনই চলবে। শুধু রিডিং নয়—প্রতি মাসে মিটার ভাড়া, সার্ভিস চার্জ, ডিমান্ড চার্জ ইত্যাদি কাটার মাধ্যমেও বাড়তি অর্থ আদায় করা হচ্ছে।
কটিয়াদী জোনাল অফিসের উপ-সহকারি প্রকৌশলী মো. শামসুদ্দিন বলেন, রিডিং নিয়ে গ্রাহকেরা আসলে সমস্যা সমাধান করে দেওয়া হবে। তবে, মিটার রিডিং গ্রহণে বিলম্বের কারণে বিল বেশি হয়েছে বলে স্বীকার করেন।
কটিয়াদী পল্লী বিদ্যুৎ নবাগত ডিজিএম মো. আবু সাঈদের এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে এ ধরনের বেশ কিছু অভিযোগ আমার কাছে এসেছে। বিদ্যুৎ এর ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। মিটারে বিদ্যুৎ বিলে রিডিং এর সাথে মিল না থাকলে তদন্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।


















