বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে ফেরত আনতে ভারতের সঙ্গে প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় আনুষ্ঠানিক উদ্যোগ নিচ্ছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দিল্লির উদ্দেশে নোট ভারবাল পাঠানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত করেছে। একই সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে নতুন নোটিশ পাঠানোর কাজও চলছে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানান, ভারতের উদ্দেশে পাঠানোর নোট ভারবাল প্রস্তুত হচ্ছে এবং দ্রুতই তা পাঠানো হবে। তিনি বলেন, শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণের নোট ভারবালের সঙ্গে রায়ের কপি পাঠানোর প্রয়োজন নেই। শুধু নোট ভারবালই যথেষ্ট হবে।
২০১৩ সালে বাংলাদেশ–ভারত বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি হওয়ার পর ২০১৫ সালে অনুপ চেটিয়া ও নূর হোসেনকে হস্তান্তরের পর দীর্ঘ সময় এ চুক্তি আলোচনার বাইরে ছিল। তবে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার পর বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে। বাংলাদেশের আইন ও পররাষ্ট্রপক্ষ মনে করে, চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ভারতকে ফেরত দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে ভারতীয় কূটনৈতিক মহলের অনেকেই বলছেন, অতীতের ঘনিষ্ঠতা ও রাজনৈতিক সম্পর্কের কারণে ভারত শেখ হাসিনাকে ফেরত দেবে না।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের লিগ্যাল অ্যাফেয়ার্স অনুবিভাগ মঙ্গলবার ভারতের জন্য প্রস্তুত করা নোট ভারবালের আইনি অংশ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে উপদেষ্টা ও সচিবের অনুমোদন নিয়েছে।
এদিকে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম জানিয়েছেন, পলাতক দুই আসামির বিরুদ্ধে আগেই গ্রেপ্তারি পরোয়ানাসহ রেড নোটিশের আবেদন রয়েছে। এখন কনভিকশন ওয়ারেন্ট পাঠিয়ে ইন্টারপোলে নতুন নোটিশ পাঠানো হবে। ৩০ দিনের মধ্যে তারা আপিল না করলে, আত্মসমর্পণ বা গ্রেপ্তার হলেই রায় কার্যকর করা যাবে।
রায়ের সার্টিফায়েড কপি দ্রুতই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, কারাগার ও আইজিপি কার্যালয়ে পাঠানো হবে। দণ্ডিত রাজসাক্ষী সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনও রায়ের কপি পাবেন।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও তিনটি মামলা তদন্তাধীন রয়েছে। গুম, অপহরণ, হত্যাচেষ্টা ও সহিংসতার অভিযোগে দায়ের করা এসব মামলায় তাকে পরিকল্পনাকারী ও নির্দেশদাতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন আদালতে রয়েছে আরও ৫৮৬টি মামলা ও দুর্নীতি দমন কমিশনের ছয়টি মামলা।
ভারতের জিন্দল গ্লোবাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ শ্রীরাধা দত্ত ও ঢাকার সাবেক ভারতীয় হাইকমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী দুজনেই মনে করেন, ভারত শেখ হাসিনাকে কখনোই প্রত্যর্পণ করবে না। তাদের মতে, দীর্ঘদিনের মিত্রকে মৃত্যুদণ্ডের মুখে ঠেলে দেওয়া নয়াদিল্লির পক্ষে রাজনৈতিকভাবে অসম্ভব।
বিবিসির গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স প্রতিবেদক অন্বরাসন এথিরাজন সতর্ক করে বলেন, ভারত অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করলে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে নেতিবাচক সংকেত যাবে। আবার মেনে নিলেও রাজনৈতিক চাপ তৈরি হবে। ফলে ভারতকে অত্যন্ত সংবেদনশীল ভারসাম্যমূলক অবস্থান নিতে হবে।
একই সময়ে, ঢাকার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান দিল্লিতে পৌঁছেছেন কলম্বো সিকিউরিটি কনক্লেভের সম্মেলনে যোগ দিতে। মানবতাবিরোধী অপরাধের রায় ঘোষণার পর তার এই দিল্লি সফর বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে—তিনি অজিত দোভালের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক নিরাপত্তা ও প্রত্যর্পণ ইস্যুতে আলোচনা করবেন কি না, তা নিয়ে কৌতূহল দেখা দিয়েছে।




















