বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার প্রস্তুতি এখন পূর্ণমাত্রায় চলছে। তিনি দেশে ফিরে কোথায় থাকবেন, কোথায় অফিস করবেন—সবকিছুই প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে। দলীয়ভাবে বিএনপি ফেরাকে কেন্দ্র করে সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। এমনকি তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে বৈঠকও করেছে দলটির একটি প্রতিনিধিদল। যদিও কৌশলগত কারণে তারেক রহমানের ফেরার নির্দিষ্ট দিন-তারিখ এখনো প্রকাশ করা হয়নি।
তারেক রহমান নিজেও দিনক্ষণ এখনো ঠিক করেননি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দেশের সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করেই তিনি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। বিএনপি’র একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বিজয় দিবসকে সামনে রেখে তার দেশে ফেরার প্রস্তুতি গতি পেয়েছে। তিনি দেশে এলে নেতাকর্মীদের উচ্ছ্বাস বিবেচনাতেই বাড়তি নিরাপত্তা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে। ফেরার দিন বড় জনসমাগম করা হবে কিনা—সেটিও তার সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে।
বিএনপির ভেতরে আলোচনা চলছে তিনি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে নাকি পরপরই ফিরবেন। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ফেরার দিনক্ষণ শুধুমাত্র তারেক রহমানই জানেন। তবে দল সবসময় তার প্রত্যাবর্তনকে কেন্দ্র করে প্রস্তুত রয়েছে।
বিশ্বাসযোগ্য সূত্র জানায়, দেশে ফিরে তিনি গুলশান-২ এভিনিউর ১৯৬ নম্বর বাড়িতে উঠতে পারেন। বাড়িটি ইতোমধ্যে সিসিটিভিসহ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে সাজানো হচ্ছে। সেখানে সিএসএফ সদস্যরা নিরাপত্তায় থাকবেন। পাশাপাশি ধানমণ্ডির ৫ নম্বর সড়কের ‘মাহবুব ভবন’-এ ওঠার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না—যা তার শ্বশুর, সাবেক নৌবাহিনী প্রধান রিয়ার অ্যাডমিরাল মাহবুব আলী খানের বাসভবন।
গুলশানের ১৯৬ নম্বর বাড়িটি সম্প্রতি নামজারি সম্পন্ন করে কাগজপত্র বেগম খালেদা জিয়ার হাতে তুলে দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এই বাড়িটির পাশেই ‘ফিরোজা’য় থাকেন খালেদা জিয়া। ১৯৮১ সালে জিয়াউর রহমানের শাহাদাতের পর বাড়িটি খালেদা জিয়াকে বরাদ্দ দেওয়া হয়।
অন্যদিকে, রাজনৈতিক কার্যালয় গুলশানের বিএনপি চেয়ারপারসনের অফিসেই তারেক রহমান কাজ করবেন। তার ব্যবহারের উপযোগী করেই অফিসকক্ষ সাজানো হচ্ছে।
নির্বাচনী প্রচারণাকে সামনে রেখে দু’টি বুলেটপ্রুফ গাড়ি কেনার অনুমতি দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। একটি বুলেটপ্রুফ বাস এবং একটি গাড়ির অনুমতি ইতোমধ্যে পাওয়া গেছে। এছাড়া আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সের জন্যও আবেদন করেছে বিএনপি।
দলটির যুগ্ম মহাসচিব হুমায়ুন কবির বলেন, দিনক্ষণ চূড়ান্ত না হলেও নির্বাচনে তার নেতৃত্বেই বিএনপি অংশ নেবে। সুতরাং শিগগিরই তার দেশে ফেরাকে ধরে নেওয়াই যায়। তার নিরাপত্তার দায়িত্ব রাষ্ট্রেরই—এ প্রত্যাশা দলের।
২০০৮ সালে লন্ডনে চিকিৎসার জন্য গমন করার পর প্রায় ১৭ বছর ধরেই সেখানে অবস্থান করছেন তারেক রহমান। এক-এগারোর সময় গ্রেপ্তার ও কারাবন্দী হওয়ার পরই তিনি দেশ ছাড়েন। সব মামলা থেকে অব্যাহতি পাওয়ার পর দেশে ফেরার পথ সম্পূর্ণ উন্মুক্ত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।
তার দেশে ফিরতে প্রয়োজনীয় পাসপোর্ট বা ট্রাভেল ডকুমেন্ট সরকার সরবরাহ করবে বলেও নিশ্চিত করেছেন তিনি।


























