ঢাকা ০৫:০৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ঢাকা–আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পে ব্যয় লাফিয়ে ২৮ হাজার কোটি—নকশা বদল, ডলার-দাম ও কর বৃদ্ধি দায়ী

  • ডেস্ক রিপোর্টঃ
  • আপডেট সময় ১০:১৮:১৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৫
  • ৫৮০ বার পড়া হয়েছে

ঢাকা–আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে আরও ১০ হাজার কোটি টাকার ব্যয় বৃদ্ধি চূড়ান্তভাবে প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বিবিএ)। এর ফলে সাড়ে ১৭ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পটি বেড়ে দাঁড়াচ্ছে প্রায় ২৮ হাজার কোটি টাকায়। ব্যয় বৃদ্ধির কারণ হিসেবে নকশা পরিবর্তন, ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যহ্রাস, নির্মাণসামগ্রীর দাম বৃদ্ধি এবং নতুন কর ও শুল্ক যোগ হওয়াকে চিহ্নিত করা হয়েছে।

বর্ধিত ব্যয়ের মধ্যে শুল্ক–করসহ বিভিন্ন খাতে বাড়বে সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা, আর নির্মাণ ব্যয়ে অতিরিক্ত লাগবে ৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি। অর্থায়নকারী সংস্থা চীনের এক্সিম ব্যাংক ব্যয় বৃদ্ধিতে সম্মতি দিয়েছে। তবে পিপিপি ভিত্তিক প্রকল্প হওয়ায় বাড়তি টাকার বোঝা সরকার নেবে নাকি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান—এ প্রশ্ন এখনো অনির্দিষ্ট। বিশেষজ্ঞদের মতে, সরকার বাড়তি অর্থ দিলে পিপিপি মডেল দুর্বল হবে; আর বিনিয়োগকারী বাড়তি খরচ তুলতে চাইলে লাভ বণ্টন চুক্তিতেও পরিবর্তন আনতে হতে পারে।

নকশা পরিবর্তনে বড় ধরনের কাঠামোগত সংশোধন

তুরাগ নদ এখন দ্বিতীয় শ্রেণির নৌপথ হওয়ায় নদে নেভিগেশন বজায় রাখতে এক্সপ্রেসওয়ের সেতুর উচ্চতা ও স্প্যান বড় করা হচ্ছে। আগে খুঁটি–টু–খুঁটির দূরত্ব ছিল ৩০.৪৮ মিটার, যা বাড়িয়ে এখন সর্বোচ্চ ৯০ মিটার করা হচ্ছে। নদীর উপরিভাগ থেকে সেতুর তলদেশের উচ্চতা ৭.৬ মিটার থেকে বাড়িয়ে ১২.২ মিটার করা হচ্ছে।

এই পরিবর্তনের সঙ্গে নতুন করে বাইপাইলে সেতু ও ইন্টারসেকশন যুক্ত হচ্ছে। পাশাপাশি বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালে মেট্রোরেলের সঙ্গে এক্সপ্রেসওয়ের সংযোগও নকশায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কাঞ্চন থেকে আসা মেট্রো এখন তৃতীয় টার্মিনালে থেমে পরে কমলাপুরের দিকে যাবে—যা নতুন সংযোগব্যবস্থা তৈরি করবে।

ডলার–মূল্যবৃদ্ধি ও নির্মাণসামগ্রীর দাম প্রকল্প ব্যয়ে বড় ধাক্কা

প্রকল্প অনুমোদনের সময় ডলারের দাম ছিল ৮৪ টাকা, যা এখন ১২০ টাকায় পৌঁছেছে। বৈদেশিক অর্থায়নভিত্তিক কাজ হওয়ায় ডলারদামের এই উল্লম্ফন সরাসরি ব্যয় বাড়িয়েছে। একই সঙ্গে মূল্যস্ফীতিতে নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রকল্প ব্যয় আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।

অবকাঠামোগত জটিলতা এখনো কাটেনি

ভূমি অধিগ্রহণ প্রায় শেষ হলেও ইউটিলিটি সরানো ও বিমানবন্দর এলাকার অংশে কাজ শুরু হতে আরও সময় লাগবে। তবে প্রকল্প পরিচালক জানিয়েছেন, অন্যান্য অংশে কাজ অব্যাহত রয়েছে।

২০২৭ সালের ডিসেম্বর পূর্ণাঙ্গ উদ্বোধনের লক্ষ্য

২০১৭ সালে অনুমোদন এবং ২০২৩ সালে প্রথম খুঁটি দৃশ্যমান হওয়ার পর বর্তমানে প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি ৫৬.৫০ শতাংশ। সার্বিক অগ্রগতি ৬৪.৫০ শতাংশ। ২০২৭ সালের ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় রেখে কাজ চলছে, যদিও প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল ২০২৬ সালের জুন।

সম্পূর্ণ হলে সাভারের ইপিজেড থেকে কাওলা হয়ে বিদ্যমান ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে যুক্ত হবে এই উড়ালপথ। এতে ৪৪ কিলোমিটার দীর্ঘ একটানা উড়াল রুট ব্যবহার করা যাবে, র্যাম্পসহ মোট দৈর্ঘ্য হবে প্রায় ৮২ কিলোমিটার

৩০ জেলার মানুষের জন্য যোগাযোগে বিপ্লব আনবে প্রকল্প

প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে উত্তর-পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ৩০ জেলার চার কোটি মানুষ ঢাকা প্রবেশে উন্নত যোগাযোগ সুবিধা পাবে। তবে ঋণদাতা এক্সিম ব্যাংকের অর্থ ছাড় এখনো শুরু হয়নি।

বিশেষজ্ঞদের সতর্কতা

বুয়েটের অধ্যাপক শামছুল হক মনে করেন, ব্যয় বৃদ্ধির বোঝা কে নেবে—এটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। পিপিপি প্রকল্পে ব্যয় বৃদ্ধি সাধারণত যৌক্তিক নয়। সময়মতো কাজ শেষ না হলে প্রকল্পের সুফল ঝুঁকিতে পড়তে পারে। মেট্রোরেল সংযোগেও সমন্বয়ের অভাব ভবিষ্যতে জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।


 

জনপ্রিয় সংবাদ

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন মাসুদের সহযোগী কবির আটক

ঢাকা–আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পে ব্যয় লাফিয়ে ২৮ হাজার কোটি—নকশা বদল, ডলার-দাম ও কর বৃদ্ধি দায়ী

আপডেট সময় ১০:১৮:১৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৫

ঢাকা–আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে আরও ১০ হাজার কোটি টাকার ব্যয় বৃদ্ধি চূড়ান্তভাবে প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বিবিএ)। এর ফলে সাড়ে ১৭ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পটি বেড়ে দাঁড়াচ্ছে প্রায় ২৮ হাজার কোটি টাকায়। ব্যয় বৃদ্ধির কারণ হিসেবে নকশা পরিবর্তন, ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যহ্রাস, নির্মাণসামগ্রীর দাম বৃদ্ধি এবং নতুন কর ও শুল্ক যোগ হওয়াকে চিহ্নিত করা হয়েছে।

বর্ধিত ব্যয়ের মধ্যে শুল্ক–করসহ বিভিন্ন খাতে বাড়বে সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা, আর নির্মাণ ব্যয়ে অতিরিক্ত লাগবে ৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি। অর্থায়নকারী সংস্থা চীনের এক্সিম ব্যাংক ব্যয় বৃদ্ধিতে সম্মতি দিয়েছে। তবে পিপিপি ভিত্তিক প্রকল্প হওয়ায় বাড়তি টাকার বোঝা সরকার নেবে নাকি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান—এ প্রশ্ন এখনো অনির্দিষ্ট। বিশেষজ্ঞদের মতে, সরকার বাড়তি অর্থ দিলে পিপিপি মডেল দুর্বল হবে; আর বিনিয়োগকারী বাড়তি খরচ তুলতে চাইলে লাভ বণ্টন চুক্তিতেও পরিবর্তন আনতে হতে পারে।

নকশা পরিবর্তনে বড় ধরনের কাঠামোগত সংশোধন

তুরাগ নদ এখন দ্বিতীয় শ্রেণির নৌপথ হওয়ায় নদে নেভিগেশন বজায় রাখতে এক্সপ্রেসওয়ের সেতুর উচ্চতা ও স্প্যান বড় করা হচ্ছে। আগে খুঁটি–টু–খুঁটির দূরত্ব ছিল ৩০.৪৮ মিটার, যা বাড়িয়ে এখন সর্বোচ্চ ৯০ মিটার করা হচ্ছে। নদীর উপরিভাগ থেকে সেতুর তলদেশের উচ্চতা ৭.৬ মিটার থেকে বাড়িয়ে ১২.২ মিটার করা হচ্ছে।

এই পরিবর্তনের সঙ্গে নতুন করে বাইপাইলে সেতু ও ইন্টারসেকশন যুক্ত হচ্ছে। পাশাপাশি বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালে মেট্রোরেলের সঙ্গে এক্সপ্রেসওয়ের সংযোগও নকশায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কাঞ্চন থেকে আসা মেট্রো এখন তৃতীয় টার্মিনালে থেমে পরে কমলাপুরের দিকে যাবে—যা নতুন সংযোগব্যবস্থা তৈরি করবে।

ডলার–মূল্যবৃদ্ধি ও নির্মাণসামগ্রীর দাম প্রকল্প ব্যয়ে বড় ধাক্কা

প্রকল্প অনুমোদনের সময় ডলারের দাম ছিল ৮৪ টাকা, যা এখন ১২০ টাকায় পৌঁছেছে। বৈদেশিক অর্থায়নভিত্তিক কাজ হওয়ায় ডলারদামের এই উল্লম্ফন সরাসরি ব্যয় বাড়িয়েছে। একই সঙ্গে মূল্যস্ফীতিতে নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রকল্প ব্যয় আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।

অবকাঠামোগত জটিলতা এখনো কাটেনি

ভূমি অধিগ্রহণ প্রায় শেষ হলেও ইউটিলিটি সরানো ও বিমানবন্দর এলাকার অংশে কাজ শুরু হতে আরও সময় লাগবে। তবে প্রকল্প পরিচালক জানিয়েছেন, অন্যান্য অংশে কাজ অব্যাহত রয়েছে।

২০২৭ সালের ডিসেম্বর পূর্ণাঙ্গ উদ্বোধনের লক্ষ্য

২০১৭ সালে অনুমোদন এবং ২০২৩ সালে প্রথম খুঁটি দৃশ্যমান হওয়ার পর বর্তমানে প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি ৫৬.৫০ শতাংশ। সার্বিক অগ্রগতি ৬৪.৫০ শতাংশ। ২০২৭ সালের ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় রেখে কাজ চলছে, যদিও প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল ২০২৬ সালের জুন।

সম্পূর্ণ হলে সাভারের ইপিজেড থেকে কাওলা হয়ে বিদ্যমান ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে যুক্ত হবে এই উড়ালপথ। এতে ৪৪ কিলোমিটার দীর্ঘ একটানা উড়াল রুট ব্যবহার করা যাবে, র্যাম্পসহ মোট দৈর্ঘ্য হবে প্রায় ৮২ কিলোমিটার

৩০ জেলার মানুষের জন্য যোগাযোগে বিপ্লব আনবে প্রকল্প

প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে উত্তর-পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ৩০ জেলার চার কোটি মানুষ ঢাকা প্রবেশে উন্নত যোগাযোগ সুবিধা পাবে। তবে ঋণদাতা এক্সিম ব্যাংকের অর্থ ছাড় এখনো শুরু হয়নি।

বিশেষজ্ঞদের সতর্কতা

বুয়েটের অধ্যাপক শামছুল হক মনে করেন, ব্যয় বৃদ্ধির বোঝা কে নেবে—এটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। পিপিপি প্রকল্পে ব্যয় বৃদ্ধি সাধারণত যৌক্তিক নয়। সময়মতো কাজ শেষ না হলে প্রকল্পের সুফল ঝুঁকিতে পড়তে পারে। মেট্রোরেল সংযোগেও সমন্বয়ের অভাব ভবিষ্যতে জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।