ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিনই ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরীফ ওসমান বিন হাদির ওপর গুলিবর্ষণ—এখন দেশের সবচেয়ে আলোচিত ইস্যুতে পরিণত হয়েছে।
২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ আন্দোলন এবং অসংখ্য বিতর্কিত কিন্তু প্রভাবশালী বক্তব্য—সব মিলিয়ে ওসমান হাদি বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক ভিন্নধর্মী চরিত্র হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তার রাজনৈতিক অবস্থান, বক্তৃতার ধরন ও তীব্র ভঙ্গি তাকে দ্রুত আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এনেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন হাদি। ঝালকাঠির নলছিটি তার গ্রামের বাড়ি। বাবার পেশা ছিল মাদ্রাসা শিক্ষক। নেছারাবাদ কামিল মাদ্রাসায় দাখিল-আলিম সম্পন্ন করে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। পড়াশোনার পাশাপাশি সাইফুরসে ইংরেজি শিক্ষকতা করেছেন তিনি। পরে ইউনিভার্সিটি অব স্কলারস-এ শিক্ষকতা করছিলেন বলে জানিয়েছেন ইনকিলাব মঞ্চের কর্মীরা।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর তার নেতৃত্বে গড়ে ওঠে নতুন সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম ‘ইনকিলাব মঞ্চ’, যার লক্ষ্য—‘সব ধরনের আধিপত্যের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও ইনসাফভিত্তিক রাষ্ট্র বিনির্মাণ’।
ওসমান হাদি বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে তীব্র অবস্থান নিয়ে আলোচিত হয়েছেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় নিয়ে তিনি মন্তব্য করেন—এটি “পৃথিবীর জন্য নজির”। একইভাবে বিএনপির পুরোনো ধাঁচের রাজনীতির সমালোচনা করে বলেন—তারা ক্ষমতায় এলে “দুই বছরও টিকতে পারবে না”।
তিনি সেনাবাহিনীর ভূমিকা, অন্তর্বর্তী সরকারের দুর্বলতা এবং কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তনের ধীরগতিকেও সমালোচনা করেছেন। এমনকি একটি জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাবও দেন। সম্প্রতি এনসিপির ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ কর্মসূচিতে সংঘর্ষের পর তিনি গোপালগঞ্জ জেলা ভেঙে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তীব্র ভাষায় বক্তব্য দেন, যা ব্যাপক আলোচিত ও বিতর্কিত হয়।
তীব্র সমালোচনার মধ্যে তিনি নিজ বক্তব্যকে “মুক্তির মহাকাব্য” বলে উল্লেখ করেন এবং কারও মনে আঘাত লাগলে দুঃখপ্রকাশ করেন।
গত নভেম্বরের এক ফেসবুক পোস্টে হাদি দাবি করেন—দেশি-বিদেশি অন্তত ৩০টি নম্বর থেকে তাকে হত্যা ও ধর্ষণের হুমকি দেওয়া হয়েছে, তার বাড়িতে আগুন দেওয়ার হুমকিও এসেছে। তিনি অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের ‘খুনি সমর্থকরা’ তাকে সর্বক্ষণ নজরদারিতে রেখেছে।
মতিঝিল, শাহজাহানপুর, পল্টন, রমনা ও শাহবাগ থানা নিয়ে গঠিত ঢাকা-৮ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তিনি। সেজন্য নিয়মিতই ওই এলাকায় জনসংযোগ ও প্রচারণা চালাচ্ছিলেন।
হাদির ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনায় দেশজুড়ে প্রতিবাদ, নিন্দা এবং ক্ষোভের ঝড় উঠেছে। তার পরিচিতি, রাজনৈতিক অবস্থান ও সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপট—সবকিছু মিলিয়ে বিষয়টি এখন জাতীয় রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে।




















