ঢাকা ০৭:১৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

হাদিসহ কিলিং টার্গেটে আছেন যারা, বেরিয়ে এলো চাঞ্চল্যকর তথ্য

  • ডেস্ক রিপোর্টঃ
  • আপডেট সময় ০৯:৫০:৩৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫
  • ৬৫৪ বার পড়া হয়েছে

 

গতকাল শুক্রবার সন্ত্রাসীদের গুলিতে গুরুতর আহত হয়েছেন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য প্রার্থী শরিফ ওসমান বিন হাদি। সংকটাপন্ন অবস্থায় তাকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এ ঘটনার পর প্রকাশ্যে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য—হাদিসহ শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন জুলাই যোদ্ধার ওপর হত্যার উদ্দেশ্যে হামলার আগাম ও নির্ভরযোগ্য তথ্য সরকারকে বহু আগেই জানানো হয়েছিল, কিন্তু কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

সূত্র জানায়, তথাকথিত ‘টার্গেট কিলিং’ তালিকায় হাদির পাশাপাশি জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ এবং আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদসহ আরও কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ জুলাই সংগঠকের নাম ছিল। সেপ্টেম্বর মাসে যুক্তরাজ্যপ্রবাসী এক আইনজীবীর মাধ্যমে এ সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট ও স্পর্শকাতর তথ্য পাওয়া যায়, যা যথাসময়ে সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা ও উচ্চপর্যায়ের দায়িত্বশীলদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়।

জানা গেছে, শুধু তথ্য সরবরাহই নয়—খোদ শরিফ ওসমান হাদি, হাসনাত আবদুল্লাহ ও ব্যারিস্টার ফুয়াদ নিজেরাই একাধিকবার সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে হুমকির বিষয়টি জানান। পাশাপাশি যুক্তরাজ্যপ্রবাসী ওই আইনজীবীও কয়েক দফা বৈঠকের মাধ্যমে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরেন এবং দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে বড় ধরনের বিপদের আশঙ্কার কথা স্পষ্টভাবে জানান।

এ বিষয়ে ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ শুক্রবার যুগান্তরকে বলেন,
‘অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য সূত্রে হামলার তথ্য পেয়ে আমরা সরকারকে জানিয়েছিলাম। কিন্তু কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। শুধু ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বাড়ালেই সমস্যার সমাধান হয় না। বর্তমান বাস্তবতায় পুলিশি নিরাপত্তা নিয়ে মাঠের রাজনীতি করাও কার্যত অসম্ভব।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বারবার বলেছি—নির্বাচনের আগে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে বড় ধরনের অভিযান চালাতে হবে। বিশেষ করে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। লোক দেখানো অভিযান শেষ পর্যন্ত সবার জন্যই আত্মঘাতী হবে।’

সূত্র আরও জানায়, হত্যার হুমকির তথ্য পাওয়ার পর যুক্তরাজ্যপ্রবাসী ওই আইনজীবী দ্রুত ঢাকায় এসে হাদি, হাসনাত আবদুল্লাহ ও ব্যারিস্টার ফুয়াদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেন। পরে তাদের উদ্যোগে বিষয়টি সরকারের উচ্চপর্যায় ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাকেও জানানো হয়। সরকারের পক্ষ থেকে ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হলেও মাঠের রাজনীতি ও কর্মীদের সঙ্গে দূরত্ব তৈরির আশঙ্কায় তারা সেই প্রস্তাবে সম্মত হননি।

হাদির ওপর হামলার পর ওই আইনজীবী যুগান্তরকে বলেন, ‘বিদেশের বিভিন্ন নিরাপত্তা সংস্থার সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতার কারণে আমি এই তথ্যগুলো পেয়েছিলাম। যথাসময়ে সবাইকে সতর্ক করা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হাদির ওপর হামলা ঠেকানো গেল না। অন্যদের জীবনও এখনো ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।’

এ বিষয়ে সরকারের বক্তব্য জানতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জে. (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি ও আইজিপি বাহারুল আলমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি। পরে খুদেবার্তা পাঠানো হলে রাত ১২টায় আইজিপি বাহারুল আলম জানান, ‘এ রকম কোনো তথ্য আমরা পাইনি।’

এদিকে পুলিশ সূত্রের দাবি, হাদির ওপর হামলার ঘটনায় বিদেশে অবস্থানরত সন্ত্রাসীদের সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে। সন্দেহভাজন হিসেবে ফিলিপ ওরফে গারো ফিলিপ নামে এক ভাড়াটে কিলারের নাম উঠে এসেছে। তাকে ধরতে ইতোমধ্যে অভিযান শুরু হয়েছে। পুলিশ মনে করছে, ফিলিপকে গ্রেপ্তার করা গেলে এই কিলিং মিশনের নেপথ্যের পরিকল্পনাকারীদের পরিচয়ও স্পষ্ট হবে।

জনপ্রিয় সংবাদ

ভোট দিলে বিএনপিকে দেবেন, না দিলে ঘরে থাকতে পারবেন না

হাদিসহ কিলিং টার্গেটে আছেন যারা, বেরিয়ে এলো চাঞ্চল্যকর তথ্য

আপডেট সময় ০৯:৫০:৩৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫

 

গতকাল শুক্রবার সন্ত্রাসীদের গুলিতে গুরুতর আহত হয়েছেন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য প্রার্থী শরিফ ওসমান বিন হাদি। সংকটাপন্ন অবস্থায় তাকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এ ঘটনার পর প্রকাশ্যে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য—হাদিসহ শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন জুলাই যোদ্ধার ওপর হত্যার উদ্দেশ্যে হামলার আগাম ও নির্ভরযোগ্য তথ্য সরকারকে বহু আগেই জানানো হয়েছিল, কিন্তু কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

সূত্র জানায়, তথাকথিত ‘টার্গেট কিলিং’ তালিকায় হাদির পাশাপাশি জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ এবং আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদসহ আরও কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ জুলাই সংগঠকের নাম ছিল। সেপ্টেম্বর মাসে যুক্তরাজ্যপ্রবাসী এক আইনজীবীর মাধ্যমে এ সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট ও স্পর্শকাতর তথ্য পাওয়া যায়, যা যথাসময়ে সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা ও উচ্চপর্যায়ের দায়িত্বশীলদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়।

জানা গেছে, শুধু তথ্য সরবরাহই নয়—খোদ শরিফ ওসমান হাদি, হাসনাত আবদুল্লাহ ও ব্যারিস্টার ফুয়াদ নিজেরাই একাধিকবার সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে হুমকির বিষয়টি জানান। পাশাপাশি যুক্তরাজ্যপ্রবাসী ওই আইনজীবীও কয়েক দফা বৈঠকের মাধ্যমে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরেন এবং দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে বড় ধরনের বিপদের আশঙ্কার কথা স্পষ্টভাবে জানান।

এ বিষয়ে ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ শুক্রবার যুগান্তরকে বলেন,
‘অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য সূত্রে হামলার তথ্য পেয়ে আমরা সরকারকে জানিয়েছিলাম। কিন্তু কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। শুধু ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বাড়ালেই সমস্যার সমাধান হয় না। বর্তমান বাস্তবতায় পুলিশি নিরাপত্তা নিয়ে মাঠের রাজনীতি করাও কার্যত অসম্ভব।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বারবার বলেছি—নির্বাচনের আগে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে বড় ধরনের অভিযান চালাতে হবে। বিশেষ করে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। লোক দেখানো অভিযান শেষ পর্যন্ত সবার জন্যই আত্মঘাতী হবে।’

সূত্র আরও জানায়, হত্যার হুমকির তথ্য পাওয়ার পর যুক্তরাজ্যপ্রবাসী ওই আইনজীবী দ্রুত ঢাকায় এসে হাদি, হাসনাত আবদুল্লাহ ও ব্যারিস্টার ফুয়াদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেন। পরে তাদের উদ্যোগে বিষয়টি সরকারের উচ্চপর্যায় ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাকেও জানানো হয়। সরকারের পক্ষ থেকে ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হলেও মাঠের রাজনীতি ও কর্মীদের সঙ্গে দূরত্ব তৈরির আশঙ্কায় তারা সেই প্রস্তাবে সম্মত হননি।

হাদির ওপর হামলার পর ওই আইনজীবী যুগান্তরকে বলেন, ‘বিদেশের বিভিন্ন নিরাপত্তা সংস্থার সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতার কারণে আমি এই তথ্যগুলো পেয়েছিলাম। যথাসময়ে সবাইকে সতর্ক করা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হাদির ওপর হামলা ঠেকানো গেল না। অন্যদের জীবনও এখনো ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।’

এ বিষয়ে সরকারের বক্তব্য জানতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জে. (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি ও আইজিপি বাহারুল আলমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি। পরে খুদেবার্তা পাঠানো হলে রাত ১২টায় আইজিপি বাহারুল আলম জানান, ‘এ রকম কোনো তথ্য আমরা পাইনি।’

এদিকে পুলিশ সূত্রের দাবি, হাদির ওপর হামলার ঘটনায় বিদেশে অবস্থানরত সন্ত্রাসীদের সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে। সন্দেহভাজন হিসেবে ফিলিপ ওরফে গারো ফিলিপ নামে এক ভাড়াটে কিলারের নাম উঠে এসেছে। তাকে ধরতে ইতোমধ্যে অভিযান শুরু হয়েছে। পুলিশ মনে করছে, ফিলিপকে গ্রেপ্তার করা গেলে এই কিলিং মিশনের নেপথ্যের পরিকল্পনাকারীদের পরিচয়ও স্পষ্ট হবে।