ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা–৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনায় নতুন চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এনেছে ডিজিটাল ইনভেস্টিগেটিভ মিডিয়া দ্য ডিসেন্ট। তাদের অনুসন্ধানে দাবি করা হয়েছে, হামলায় জড়িত সন্দেহভাজন ব্যক্তি এর আগেও ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে গিয়েছিলেন এবং ৯ ডিসেম্বর সেখানে হাদির পাশেই বসে আলোচনা শুনেছিলেন।
দ্য ডিসেন্ট জানায়, হাদিকে গুলি করা ব্যক্তি, হাদির নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেওয়া এক ব্যক্তি এবং ৯ ডিসেম্বর ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে যাওয়া ব্যক্তির একাধিক ছবি তুলনামূলকভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, তিন ঘটনায় সামনে আসা ব্যক্তির চেহারার সঙ্গে ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান নামের এক ব্যক্তির মিল রয়েছে।
তাদের দাবি অনুযায়ী, ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারের ৯ ডিসেম্বরের সিসিটিভি ফুটেজ, পুলিশের সংগ্রহ করা ১২ ডিসেম্বরের হামলার সিসিটিভি, বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবি এবং ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে ফয়সাল করিম মাসুদ নামের অ্যাকাউন্ট ও আওয়ামীপন্থি বিভিন্ন পেজে প্রকাশিত ৫০টিরও বেশি ছবি বিশ্লেষণ করে এই মিল পাওয়া গেছে। অভিযোগে বলা হয়, রাজধানীর আদাবর থানা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ফয়সাল করিম মাসুদই বাইকের পেছন থেকে গুলি চালানো ব্যক্তি।
বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, হামলাকারীর বাম হাতে থাকা বিশেষ ডিজাইনের ঘড়ির সঙ্গে ফয়সাল করিম মাসুদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে থাকা একাধিক ছবির ঘড়ির মিল পাওয়া গেছে।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে রাজধানীর আদাবর এলাকায় একটি অফিসে ঢুকে অস্ত্রের মুখে ১৭ লাখ টাকা লুটের ঘটনায় প্রধান আসামি হিসেবে ফয়সাল করিম র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। সে সময় তার কাছ থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন ও পাঁচ রাউন্ড গুলি জব্দ করা হয় বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছিল। পরে তিনি কীভাবে জামিনে মুক্তি পান, সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
এদিকে আলজাজিরার অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া পোস্টে দাবি করেছেন, ফয়সাল করিম মাসুদ (ছদ্মনাম দাউদ বিন ফয়সাল) ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি এবং আদাবর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন। তিনি আরও দাবি করেন, ফয়সাল সাবেক মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আসাদুজ্জামান খান কামালের ঘনিষ্ঠ অনুসারী।
আমার দেশ–এর হাতে থাকা ছবিগুলোর একটি ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারের। চলতি মাসের ৯ তারিখের সেই ছবিতে দেখা যায়, হাদির পাশে বসে আছেন তাকেই গুলি করেছে বলে অভিযোগ থাকা ব্যক্তি। অভিযোগ অনুযায়ী, তারা সেদিন একসঙ্গেই ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে গিয়েছিলেন।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার জুমার নামাজের পর দুপুর ২টা ২৫ মিনিটে রাজধানীর বিজয়নগর বক্স কালভার্ট এলাকায় শরিফ ওসমান হাদির ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। ডিএমপির জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, মোটরসাইকেলে আসা হামলাকারীরা গুলি করে দ্রুত পালিয়ে যায়। তিনি আরও জানান, দুর্বৃত্তরা মোট তিনটি মোটরসাইকেলে করে ঘটনাস্থলে এসেছিল।
হাদির এক সহযোদ্ধা জানান, জুমার নামাজের পর মসজিদে লিফলেট বিতরণের কর্মসূচি ছিল তাদের। কর্মসূচি শেষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একত্রিত হয়ে দুপুরের খাবার খাওয়ার পরিকল্পনা ছিল। তবে তার আগেই এই হামলার ঘটনা ঘটে।



















