নির্বাচনের আগে সহিংসতা ও চোরাগোপ্তা হামলার মাধ্যমে দেশে অস্থিরতা সৃষ্টির অপচেষ্টা চলছে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া শক্তিগুলো বুঝে গেছে—তরুণ যোদ্ধারাই তাদের পুনরুত্থানের পথে সবচেয়ে বড় বাধা। এ কারণেই নির্বাচন আসার আগেই এসব বাধা সরিয়ে নিজেদের রাজত্ব কায়েম করতে তারা মরিয়া হয়ে উঠেছে।
মঙ্গলবার মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এসব কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা।
ভাষণে ড. ইউনূস বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানের সম্মুখযোদ্ধা ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির ওপর সাম্প্রতিক হামলা কেবল একজন ব্যক্তির ওপর আঘাত নয়—এটি বাংলাদেশের অস্তিত্বের ওপর আঘাত, আমাদের গণতান্ত্রিক পথচলার ওপর আঘাত।’ তিনি জানান, শরিফ ওসমান হাদি বর্তমানে সংকটাপন্ন অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন এবং তার চিকিৎসা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিয়েছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ইতোমধ্যে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়েছে। দেশবাসীর কাছে তিনি হাদির দ্রুত আরোগ্যের জন্য দোয়া কামনা করেন।
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, হামলার ঘটনায় জড়িতদের প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ‘যারা এই ষড়যন্ত্রে জড়িত, তারা যেখানেই থাকুক না কেন, কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না,’—এমন আশ্বাস দেন তিনি।
ড. ইউনূস বলেন, ‘পরাজিত শক্তি ও ফ্যাসিস্ট টেরোরিস্টদের এই অপচেষ্টা সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ করে দেওয়া হবে। ভয় দেখিয়ে, সন্ত্রাস ঘটিয়ে বা রক্ত ঝরিয়ে এই দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা থামানো যাবে না।’ তিনি দেশবাসীর প্রতি সংযম বজায় রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেন, অপপ্রচার ও গুজবে কান না দিয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে অস্থিরতা সৃষ্টিকারীদের মোকাবিলা করতে হবে।
তরুণদের সুরক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, যারা দেশ ছেড়ে পালিয়েছে তারা তরুণ যোদ্ধাদের নিয়েই সবচেয়ে বেশি ভীত। তাদের লক্ষ্য হলো—নির্বাচনের আগেই এই তরুণ শক্তিকে দমন করে আবার ক্ষমতার পথ সুগম করা। চোরাগোপ্তা হত্যাচেষ্টা এই ষড়যন্ত্রেরই একটি রূপ; সামনে আরও কঠিন পরিকল্পনাও তাদের থাকতে পারে বলে সতর্ক করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘দেশের সবাইকে জোর গলায় বলতে হবে—আমরা তরুণদের রক্ষা করব। উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা দেশের ওপর আমাদের পূর্ণ অধিকার প্রতিষ্ঠা করব।’ নির্বাচন পর্যন্ত বাকি সময়কে উৎসবমুখর রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ভয়হীন তরুণ সমাজ সব ধরনের সহিংসতা ও সংঘাত থেকে দেশকে রক্ষা করবে।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় সর্বোচ্চ সহযোগিতা
ভাষণে ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানান, বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিশ্চিত করতে তার পরিবারের ইচ্ছাকে সম্মান জানিয়ে সরকার সব ধরনের সহযোগিতা দিচ্ছে। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের অংশ এবং তার অবদান বিবেচনায় তাকে রাষ্ট্রের অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। দেশে কিংবা প্রয়োজনে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার সব ব্যবস্থাই বিবেচনায় রয়েছে।
নির্বাচন হবে উৎসবমুখর ও সুষ্ঠু
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আসন্ন নির্বাচন হবে অংশগ্রহণমূলক, শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু। নিরাপত্তা, প্রশাসনিক প্রস্তুতি, প্রযুক্তিগত সহায়তা ও পর্যবেক্ষণের প্রতিটি ধাপ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে। তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আপনারা একে অপরকে প্রতিযোগী হিসেবে দেখবেন, শত্রু হিসেবে নয়।’




















