ঢাকা ১১:২৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

হাদি ইস্যুতে সর্বদলীয় প্রতিরোধ সভায় বিএনপি ছিল না কেনো

  • ডেস্ক রিপোর্টঃ
  • আপডেট সময় ০৮:১২:১২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫
  • ৫৩৬ বার পড়া হয়েছে

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টার প্রতিবাদে শহীদ মিনারে আয়োজিত সর্বদলীয় প্রতিরোধ সমাবেশে বিএনপির কোনো নেতা সশরীরে উপস্থিত না থাকায় রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা প্রশ্ন ও আলোচনা তৈরি হয়েছে।

সোমবার শহীদ মিনারে ইনকিলাব মঞ্চের উদ্যোগে আয়োজিত ওই সমাবেশে জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণঅধিকার পরিষদসহ সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। তবে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির কোনো নেতা সেখানে যোগ দেননি। ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আব্দুল্লাহ জাবের বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, বিএনপি সরাসরি উপস্থিত না থাকলেও তাদের আন্দোলনের প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করেছে।

সমাবেশে দেওয়া কয়েকটি বক্তব্য নতুন করে বিতর্কের জন্ম দেয়। সাবেক উপদেষ্টা মাহফুজ আলম তার বক্তব্যে ‘একটা লাশ পড়লে আমরা লাশ নেব’—এমন মন্তব্য করেন, যা রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি করে। একইসঙ্গে এনসিপি নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় সাত রাজ্য—‘সেভেন সিস্টার্স’—নিয়ে দেওয়া বক্তব্যের কারণে সমালোচনার মুখে পড়েন।

বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে দলটির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য জানান, রাজনৈতিকভাবে ব্যবহৃত হওয়া কিংবা উত্তেজনাকর ও উসকানিমূলক পরিস্থিতিতে জড়ানো এড়াতেই বিএনপি সশরীরে ওই সমাবেশে যায়নি।

বিশ্লেষকদের মতে, হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর তাকে দেখতে গিয়ে বিএনপির সিনিয়র নেতা মির্জা আব্বাস যে অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মুখে পড়েছিলেন, সেটিও দলটির সতর্ক অবস্থানের পেছনে একটি বড় কারণ। ওই ঘটনার পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রকাশ্যে ক্ষোভ জানিয়ে মব সৃষ্টির নিন্দা করেন এবং নির্বাচনী পরিবেশ বিনষ্ট না করার আহ্বান জানান।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ মনে করেন, হাদি ইস্যুতে বিএনপির দিকে আঙুল তোলা এবং সম্ভাব্য উত্তেজনাকর বক্তব্যের দায় নিতে না চাওয়াই দলটির অনুপস্থিতির মূল কারণ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বিশ্লেষক মোহাম্মদ মজিবুর রহমান বলেন, অভিজ্ঞতা থেকেই বিএনপি হয়তো অনুমান করেছিল যে সমাবেশে বিতর্কিত বক্তব্য আসতে পারে, আর সেজন্যই দলটি সতর্ক অবস্থান নিয়েছে।

দলীয় সূত্রগুলো বলছে, সরকার হাদি হত্যাচেষ্টার ঘটনায় পদক্ষেপ নিয়েছে বলে বিএনপি মনে করে এবং এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে রাজপথ উত্তপ্ত করে নির্বাচনী পরিবেশ বিঘ্নিত হোক—তা দলটির নেতৃত্ব চায় না। এ কারণেই শেষ পর্যন্ত শহীদ মিনারের সমাবেশে না গিয়ে ফোনে সংহতি প্রকাশের পথ বেছে নেয় বিএনপি।

উল্লেখ্য, এর আগে হাদি হত্যাচেষ্টা ইস্যুতে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির নেতাদের নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বৈঠক করেন। সেই বৈঠকের আগে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ওসমান হাদির পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে একসঙ্গে সান্ত্বনা দিতে দেখা যায় এসব দলের নেতাদের।

জনপ্রিয় সংবাদ

সেই মোটরসাইকেলের মালিকানা নিয়ে নতুন তথ্য দিলেন কবির

হাদি ইস্যুতে সর্বদলীয় প্রতিরোধ সভায় বিএনপি ছিল না কেনো

আপডেট সময় ০৮:১২:১২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টার প্রতিবাদে শহীদ মিনারে আয়োজিত সর্বদলীয় প্রতিরোধ সমাবেশে বিএনপির কোনো নেতা সশরীরে উপস্থিত না থাকায় রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা প্রশ্ন ও আলোচনা তৈরি হয়েছে।

সোমবার শহীদ মিনারে ইনকিলাব মঞ্চের উদ্যোগে আয়োজিত ওই সমাবেশে জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণঅধিকার পরিষদসহ সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। তবে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির কোনো নেতা সেখানে যোগ দেননি। ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আব্দুল্লাহ জাবের বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, বিএনপি সরাসরি উপস্থিত না থাকলেও তাদের আন্দোলনের প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করেছে।

সমাবেশে দেওয়া কয়েকটি বক্তব্য নতুন করে বিতর্কের জন্ম দেয়। সাবেক উপদেষ্টা মাহফুজ আলম তার বক্তব্যে ‘একটা লাশ পড়লে আমরা লাশ নেব’—এমন মন্তব্য করেন, যা রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি করে। একইসঙ্গে এনসিপি নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় সাত রাজ্য—‘সেভেন সিস্টার্স’—নিয়ে দেওয়া বক্তব্যের কারণে সমালোচনার মুখে পড়েন।

বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে দলটির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য জানান, রাজনৈতিকভাবে ব্যবহৃত হওয়া কিংবা উত্তেজনাকর ও উসকানিমূলক পরিস্থিতিতে জড়ানো এড়াতেই বিএনপি সশরীরে ওই সমাবেশে যায়নি।

বিশ্লেষকদের মতে, হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর তাকে দেখতে গিয়ে বিএনপির সিনিয়র নেতা মির্জা আব্বাস যে অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মুখে পড়েছিলেন, সেটিও দলটির সতর্ক অবস্থানের পেছনে একটি বড় কারণ। ওই ঘটনার পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রকাশ্যে ক্ষোভ জানিয়ে মব সৃষ্টির নিন্দা করেন এবং নির্বাচনী পরিবেশ বিনষ্ট না করার আহ্বান জানান।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ মনে করেন, হাদি ইস্যুতে বিএনপির দিকে আঙুল তোলা এবং সম্ভাব্য উত্তেজনাকর বক্তব্যের দায় নিতে না চাওয়াই দলটির অনুপস্থিতির মূল কারণ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বিশ্লেষক মোহাম্মদ মজিবুর রহমান বলেন, অভিজ্ঞতা থেকেই বিএনপি হয়তো অনুমান করেছিল যে সমাবেশে বিতর্কিত বক্তব্য আসতে পারে, আর সেজন্যই দলটি সতর্ক অবস্থান নিয়েছে।

দলীয় সূত্রগুলো বলছে, সরকার হাদি হত্যাচেষ্টার ঘটনায় পদক্ষেপ নিয়েছে বলে বিএনপি মনে করে এবং এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে রাজপথ উত্তপ্ত করে নির্বাচনী পরিবেশ বিঘ্নিত হোক—তা দলটির নেতৃত্ব চায় না। এ কারণেই শেষ পর্যন্ত শহীদ মিনারের সমাবেশে না গিয়ে ফোনে সংহতি প্রকাশের পথ বেছে নেয় বিএনপি।

উল্লেখ্য, এর আগে হাদি হত্যাচেষ্টা ইস্যুতে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির নেতাদের নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বৈঠক করেন। সেই বৈঠকের আগে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ওসমান হাদির পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে একসঙ্গে সান্ত্বনা দিতে দেখা যায় এসব দলের নেতাদের।