কক্সবাজারের রামু উপজেলার খুনিয়াপালং ইউনিয়নের পূর্ব ধেছুয়াপালং এলাকায় অবস্থিত শত বছরের একটি কবরস্থান দখলের পাঁয়তারা চালানোর অভিযোগ উঠেছে একটি প্রভাবশালী দখলবাজ চক্রের বিরুদ্ধে। কবরস্থান দখল পাকাপোক্ত করতে মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় চরম উত্তেজনা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, পূর্ব ধেছুয়াপালং আল হাসান মসজিদের সংলগ্ন বিশাল ও প্রাচীন এই কবরস্থানটি দীর্ঘদিন ধরে এলাকাবাসী কবর দেওয়া ও জানাজার মাঠ হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। সম্প্রতি কবরস্থানটির ওপর নজর পড়ে খুনিয়াপালং ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি এস এম ফরিদ, তার ভাই বিএনপি নেতা এস এম জসিম ও জয়নাল আবেদীনসহ একটি চক্রের। তারা কবরস্থান দখলের চেষ্টা চালালে এলাকাবাসী বিক্ষোভ ও প্রতিবাদে ফেটে পড়েন।
কবরস্থান দখলের প্রতিবাদ করায় জয়নাল আবেদীন বাদী হয়ে সত্তরোর্ধ্ব এজাহার মিয়াসহ ১১ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও ২০–৩০ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন বলে জানান স্থানীয়রা। তাদের দাবি, প্রতিবাদকারী গ্রামবাসীকে ভয়ভীতি দেখিয়ে এলাকা ছাড়া করতেই পরিকল্পিতভাবে এই মামলা করা হয়েছে। ওই মামলায় এজাহার মিয়াকে আটক করে কারাগারে পাঠানো হলেও পরে তিনি জামিনে মুক্ত হন। এলাকাবাসী অবিলম্বে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, কবরস্থান দখলের অভিযোগ ঘিরে পুরো এলাকায় ব্যাপক ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। স্থানীয়দের মতে, একটি কবরস্থান দখলের ঘটনায় রাজনৈতিক নেতাদের নাম জড়ানোয় আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এমনকি বিএনপির সমর্থকদের মধ্যেও বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্য অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
ভুক্তভোগী এজাহার মিয়া অভিযোগ করে বলেন, স্থানীয় একটি দখলবাজ চক্র ইতোমধ্যে কবরস্থানের একটি অংশ দখল করে সেখানে কাঁচা ঘর তুলে রোহিঙ্গাদের ভাড়া দিয়েছে। এ বিষয়ে তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)-এর কাছে লিখিত অভিযোগ করলে ইউএনও স্থানীয় ভূমি অফিসে তদন্ত প্রতিবেদন চেয়ে পাঠান। পরবর্তীতে ভূমি কর্মকর্তা জমিটিকে কবরস্থান ও জানাজার মাঠ হিসেবে ব্যবহৃত বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন।
খুনিয়াপালং ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা সলিম উল্লাহ সরেজমিন তদন্ত শেষে জানান, বিরোধপূর্ণ জমিতে তিন থেকে চারটি কাঁচা ঘর রয়েছে, যেখানে রোহিঙ্গারা বসবাস করছে। তার প্রতিবেদনে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়, জমিটি দীর্ঘদিন ধরে কবরস্থান ও জানাজার মাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে খুনিয়াপালং ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি এস এম ফরিদ বলেন, ‘বিরোধপূর্ণ জমিটি আমার ব্যক্তিগত মালিকানাধীন নয়। এটি আমার চাচাতো ভাইদের দখলে থাকা সম্পত্তি, যা তারা প্রায় ৫০ থেকে ৬০ বছর ধরে ভোগ করে আসছেন।’ তিনি দাবি করেন, ওই স্থানে জানাজার মাঠ রয়েছে এবং কবর দেওয়ার জন্য মসজিদের পাশে পর্যাপ্ত জায়গা আছে। ২০০০ সালে তার দাদার কবর সেখানে দেওয়া হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
এস এম ফরিদ আরও বলেন, ‘২০২১ সালে তৎকালীন সহকারী কমিশনার (ভূমি) ঘটনাস্থলে এসে দখলীয় জমির সীমানা নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন। কিন্তু ২০২৫ সালে এসে প্রতিপক্ষ আবারও জমিটি নিজেদের দাবি করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে।’ তিনি অভিযোগ করেন, ‘অন্যের দখলীয় জমিতে এসে বাড়িঘর ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের পাঁয়তারা চালানো হয়েছে। ভাঙচুরের ভিডিওতেই অভিযুক্তরা নিজেরাই চিহ্নিত হয়েছে।’
এদিকে এলাকাবাসী কবরস্থান উদ্ধারের জন্য জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত ও নিরপেক্ষ হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। তাদের দাবি, অবিলম্বে কবরস্থানের সীমানা নির্ধারণ করে দখলমুক্ত করা না হলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।



















