‘জুলাই যোদ্ধা’ হিসেবে স্বীকৃতি পেতে সারা দেশে নতুন করে দুই হাজারের বেশি আবেদন জমা পড়ায় বিতর্ক এড়াতে গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে যাচাই-বাছাইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এসব আবেদন তদন্ত শুরু করেছে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ২ হাজার ৬৯ জন নিজেকে আহত জুলাই যোদ্ধা দাবি করে আবেদন করেছেন। এর মধ্যে ১ হাজার ৯৩৮ জনের আবেদন বর্তমানে মাঠপর্যায়ে যাচাই করা হচ্ছে। গত ৩ নভেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এসব আবেদন তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে এসবি ও পিবিআইকে নির্দেশ দেয়।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জুলাই গণ-অভ্যুত্থান শাখার উপসচিব ডা. মো. জহিরুল ইসলাম বলেন,
‘আগে প্রকাশিত তালিকায় কিছু বিতর্কিত নাম উঠে আসায় সেগুলো বাদ দেওয়া হয়। এবার নতুন আবেদনগুলো গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে যাচাই করা হচ্ছে, যাতে প্রকৃত জুলাই যোদ্ধারাই স্বীকৃতি পান এবং চূড়ান্ত তালিকা নিয়ে আর কোনো বিতর্ক না থাকে।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের এক বছরের বেশি সময় পার হলেও এখনো জেলা প্রশাসক কার্যালয় ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন জমা পড়ছে। দেশের ৪১ জেলার আবেদনকারীদের তথ্য যাচাই করে দেখা হচ্ছে—তারা সত্যিই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত হয়েছেন কি না।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অধ্যাদেশ অনুযায়ী, তৎকালীন সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা ক্ষমতাসীন দলের হামলায় নিহতরা শহীদ এবং আহতরা ‘জুলাই যোদ্ধা’ হিসেবে স্বীকৃতি পান। ভুয়া তথ্য দিয়ে কেউ শহীদ বা জুলাই যোদ্ধা হিসেবে নাম তুললে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইতোমধ্যে দুই ধাপে ৮৩৬ জন শহীদ এবং ১৪ হাজার ৬৩৬ জন আহত জুলাই যোদ্ধার গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। তবে তালিকা প্রকাশের পর দেড় বছরে সড়ক দুর্ঘটনা কিংবা আন্দোলনের সময়সীমার বাইরে মৃত্যুর ঘটনাও তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে—এমন অভিযোগ ওঠে। রাজনৈতিক চাপ ও তদবিরের কারণে জেলা প্রশাসনও বেকায়দায় পড়ে।
বগুড়ার জেলা প্রশাসক মো. তৌফিকুর রহমান বলেন,
‘নতুন আবেদনগুলো যাচাই করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে মন্ত্রণালয়।’
নতুন আবেদনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পড়েছে ঢাকা বিভাগে (৫৮২টি), এরপর চট্টগ্রাম (৪৩৩), সিলেট (৩১১), রাজশাহী (২৯৪), রংপুর (১২২), খুলনা (৮৩), বরিশাল (৫০) ও ময়মনসিংহে (৫টি)।
পিবিআই প্রধান ও অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মো. মোস্তফা কামাল বলেন,
‘সারা দেশে যাচাই চলছে। সময় লাগলেও নির্ভুল তদন্ত শেষে প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।’
সরকারি সহায়তা হিসেবে প্রতিটি শহীদ পরিবারকে এককালীন ৩০ লাখ টাকা, মাসিক ২০ হাজার টাকা ভাতা ও ঢাকায় ফ্ল্যাট দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আহত জুলাই যোদ্ধাদের শ্রেণি অনুযায়ী এককালীন আর্থিক সহায়তা ও মাসিক ভাতা দেওয়া হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তদন্তের মাধ্যমে যেমন ভুয়া আবেদনকারীরা বাদ পড়বেন, তেমনি এতদিন তালিকার বাইরে থাকা প্রকৃত জুলাই যোদ্ধারাও স্বীকৃতি পাওয়ার সুযোগ পাবেন।





















