ঢাকা ১০:৪৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ৬ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বেরিয়ে এলো ওসমান হাদি হত্যার চাঞ্চল্যকর তথ্য

  • ডেস্ক রিপোর্টঃ
  • আপডেট সময় ০৯:০৯:১৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫
  • ৫৬০ বার পড়া হয়েছে

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও জুলাই অভ্যুত্থানের সম্মুখসারির যোদ্ধা শরিফ ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে জড়িত মাস্টারমাইন্ডের নাম সামনে এসেছে। গোয়েন্দা সূত্রের দাবি, ঢাকার কেরানীগঞ্জ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ ওরফে ‘শাহীন চেয়ারম্যান’ এই হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী।
গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যমতে, কিলিং মিশন বাস্তবায়নে অর্থ ও অস্ত্রের জোগান দেন শাহীন চেয়ারম্যান নিজেই। এ ছাড়া হত্যাকাণ্ডে তার সহযোগী হিসেবে আরও কয়েকজনের সংশ্লিষ্টতার তথ্য মিলেছে, যাদের মধ্যে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা রয়েছেন। গোয়েন্দা সংস্থার দায়িত্বশীল একটি সূত্র যুগান্তরকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সূত্র জানায়, শাহীন চেয়ারম্যানের পাশাপাশি গোপালগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আব্দুল হামিদকেও হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে হন্যে হয়ে খুঁজছে পুলিশ। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, হাদির ওপর হামলার পর ঘাতকদের ঢাকা থেকে সীমান্ত পর্যন্ত পালিয়ে যেতে সহায়তা করেন হামিদ।
গোয়েন্দা বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, জুলাই বিপ্লবে শরিফ ওসমান হাদির সক্রিয় ভূমিকা এবং গত বছরের ৫ আগস্টের পর তার ধারাবাহিক বক্তব্য ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ চরম ক্ষুব্ধ ছিল। দলটির কাছে হাদি আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগীদের জন্য বড় হুমকি হিসেবে বিবেচিত হন। এরপরই তাকে হিটলিস্টে প্রথম টার্গেট করে হত্যার ছক কষা হয়।
জানা যায়, শাহীন আহমেদ দীর্ঘদিন দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। তবে রাজনৈতিক পরিচয়ের পাশাপাশি তিনি মাফিয়া ডন হিসেবেই বেশি পরিচিত। শেখ হাসিনা সরকারের সময় তিনি সাবেক বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন। চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও অস্ত্রধারী হিসেবে পুলিশের তালিকায় তার নাম বহুদিন ধরেই ছিল। একাধিক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকলেও প্রভাব-প্রতিপত্তির কারণে তিনি বারবার ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যান এবং একাধিকবার উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
স্থানীয়দের ভাষ্য, ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর অন্যান্য প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতাদের মতো শাহীন চেয়ারম্যানও সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে পালিয়ে যান। পলাতক অবস্থায় কিছুদিন নীরব থাকলেও গত তিন-চার মাস ধরে তিনি আবার সক্রিয় হন। বিভিন্ন অ্যাপ ব্যবহার করে দেশে থাকা আওয়ামী লীগের স্লিপার সেলের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন এবং হিটলিস্ট বাস্তবায়নের পরিকল্পনা এগিয়ে নেন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একজন কর্মকর্তা জানান, কয়েকটি হোয়াটসঅ্যাপ কল ও এসএমএসের সূত্রে হাদি হত্যায় শাহীন চেয়ারম্যানের সম্পৃক্ততার প্রমাণ মিলেছে। ঘটনার আগে ও পরে কিলারদের সঙ্গে পলাতক ছাত্রলীগ নেতা হামিদের একাধিকবার যোগাযোগের তথ্যও পাওয়া গেছে। পাশাপাশি ভারতে পলাতক থাকা আরও কয়েকটি গ্রুপ অ্যাপ ব্যবহার করে ঢাকায় সক্রিয় স্লিপার সেলের কাজ সমন্বয় করছে বলে তথ্য এসেছে, যাদের অনেকে এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারিতে রয়েছে।
সূত্র আরও জানায়, হাদি হত্যা মামলার তদন্তে সন্দেহভাজনের তালিকায় কয়েকজন রাজনীতিকের নামও উঠে এসেছে। এসব তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের জন্য গ্রেফতারকৃত আসামিদের যৌথভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করছে তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও গোয়েন্দা সংস্থার টিম। এ ছাড়া পলাতক শাহীন চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত কেরানীগঞ্জের দুজন ছাত্রলীগ নেতাকেও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) শফিকুল ইসলাম শুক্রবার রাতে বলেন,
‘আমরা সব দিক বিবেচনায় নিয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে মামলাটির তদন্ত করছি। আশা করছি খুব শিগগিরই এই হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ডসহ পরিকল্পনাকারী সকলের নাম প্রকাশ্যে আনা সম্ভব হবে।’

জনপ্রিয় সংবাদ

বিজয়ী হলে জাতীয় সরকার করবে জামায়াত: ডা. শফিকুর রহমান

বেরিয়ে এলো ওসমান হাদি হত্যার চাঞ্চল্যকর তথ্য

আপডেট সময় ০৯:০৯:১৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও জুলাই অভ্যুত্থানের সম্মুখসারির যোদ্ধা শরিফ ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে জড়িত মাস্টারমাইন্ডের নাম সামনে এসেছে। গোয়েন্দা সূত্রের দাবি, ঢাকার কেরানীগঞ্জ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ ওরফে ‘শাহীন চেয়ারম্যান’ এই হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী।
গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যমতে, কিলিং মিশন বাস্তবায়নে অর্থ ও অস্ত্রের জোগান দেন শাহীন চেয়ারম্যান নিজেই। এ ছাড়া হত্যাকাণ্ডে তার সহযোগী হিসেবে আরও কয়েকজনের সংশ্লিষ্টতার তথ্য মিলেছে, যাদের মধ্যে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা রয়েছেন। গোয়েন্দা সংস্থার দায়িত্বশীল একটি সূত্র যুগান্তরকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সূত্র জানায়, শাহীন চেয়ারম্যানের পাশাপাশি গোপালগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আব্দুল হামিদকেও হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে হন্যে হয়ে খুঁজছে পুলিশ। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, হাদির ওপর হামলার পর ঘাতকদের ঢাকা থেকে সীমান্ত পর্যন্ত পালিয়ে যেতে সহায়তা করেন হামিদ।
গোয়েন্দা বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, জুলাই বিপ্লবে শরিফ ওসমান হাদির সক্রিয় ভূমিকা এবং গত বছরের ৫ আগস্টের পর তার ধারাবাহিক বক্তব্য ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ চরম ক্ষুব্ধ ছিল। দলটির কাছে হাদি আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগীদের জন্য বড় হুমকি হিসেবে বিবেচিত হন। এরপরই তাকে হিটলিস্টে প্রথম টার্গেট করে হত্যার ছক কষা হয়।
জানা যায়, শাহীন আহমেদ দীর্ঘদিন দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। তবে রাজনৈতিক পরিচয়ের পাশাপাশি তিনি মাফিয়া ডন হিসেবেই বেশি পরিচিত। শেখ হাসিনা সরকারের সময় তিনি সাবেক বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন। চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও অস্ত্রধারী হিসেবে পুলিশের তালিকায় তার নাম বহুদিন ধরেই ছিল। একাধিক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকলেও প্রভাব-প্রতিপত্তির কারণে তিনি বারবার ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যান এবং একাধিকবার উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
স্থানীয়দের ভাষ্য, ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর অন্যান্য প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতাদের মতো শাহীন চেয়ারম্যানও সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে পালিয়ে যান। পলাতক অবস্থায় কিছুদিন নীরব থাকলেও গত তিন-চার মাস ধরে তিনি আবার সক্রিয় হন। বিভিন্ন অ্যাপ ব্যবহার করে দেশে থাকা আওয়ামী লীগের স্লিপার সেলের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন এবং হিটলিস্ট বাস্তবায়নের পরিকল্পনা এগিয়ে নেন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একজন কর্মকর্তা জানান, কয়েকটি হোয়াটসঅ্যাপ কল ও এসএমএসের সূত্রে হাদি হত্যায় শাহীন চেয়ারম্যানের সম্পৃক্ততার প্রমাণ মিলেছে। ঘটনার আগে ও পরে কিলারদের সঙ্গে পলাতক ছাত্রলীগ নেতা হামিদের একাধিকবার যোগাযোগের তথ্যও পাওয়া গেছে। পাশাপাশি ভারতে পলাতক থাকা আরও কয়েকটি গ্রুপ অ্যাপ ব্যবহার করে ঢাকায় সক্রিয় স্লিপার সেলের কাজ সমন্বয় করছে বলে তথ্য এসেছে, যাদের অনেকে এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারিতে রয়েছে।
সূত্র আরও জানায়, হাদি হত্যা মামলার তদন্তে সন্দেহভাজনের তালিকায় কয়েকজন রাজনীতিকের নামও উঠে এসেছে। এসব তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের জন্য গ্রেফতারকৃত আসামিদের যৌথভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করছে তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও গোয়েন্দা সংস্থার টিম। এ ছাড়া পলাতক শাহীন চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত কেরানীগঞ্জের দুজন ছাত্রলীগ নেতাকেও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) শফিকুল ইসলাম শুক্রবার রাতে বলেন,
‘আমরা সব দিক বিবেচনায় নিয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে মামলাটির তদন্ত করছি। আশা করছি খুব শিগগিরই এই হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ডসহ পরিকল্পনাকারী সকলের নাম প্রকাশ্যে আনা সম্ভব হবে।’